খুলনা মহানগর বিএনপি’র তিন মাসের কমিটিতে আড়াই বছর পার!
৩০ জুন ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১২:১০ এএম
খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি তিন মাসের জন্য গঠিত হলেও দীর্ঘ আড়াই বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু গঠন করা সম্ভব হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। যদিও পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরিবর্তে তিন মাস পর আহ্বায়ক কমিটিকেই পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হয়। এছাড়া থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোও চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। এখন সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের নামে চলছে কতিপয় নেতার পছন্দের লোকদের দিয়ে ‘পকেট কমিটি’ গঠন করা হচ্ছে। তবে, পকেট কমিটি গঠনের পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে।
এদিকে, বর্তমান নেতৃত্ব নগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দলকে সাংগঠনিক শক্ত ভীতের ওপর দাঁড় করাতে সক্ষমতার পরিচয় দিতে না পারলেও আন্দোলনের কঠিন সময় আত্মগোপন, ওয়ার্ডে পকেট কমিটি গঠনের পরিকল্পনাসহ জড়িয়েছেন নানা বিতর্কে। এর মধ্যে নগর শাখার এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে বারবার নারী কেলেঙ্কারীতে সম্পৃক্ততা এবং গ্রেফতার এড়াতে ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের এক নেতার বাড়িতে আশ্রয়গ্রহণ, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ এবং সর্বশেষ মহিলাদলের এক নেত্রীকে পদ-পদবীর প্রলোভনে ফেলে অর্থ দাবির বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এমনকি পদ বাণিজ্যে মুখ খুললে এবং পকেট কমিটি বাস্তবায়নের বাইরে কেউ প্রার্থী হলে তাদের দল করতে দেয়া হবে না বলেও হুমকি-ধামকি অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে, মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশকে বাদ দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়ায় দলে বিভেদ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে এবারও নগর শাখার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু অনুসারীদের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। বিএনপির কমিটি থেকে মঞ্জু অনুসারীদের বাদ দিতে গিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া অনেক ত্যাগী নেতাকেও বাদ দেয়া হয়েছে। আবার নিষ্কৃয়, অথচ বর্তমান নেতৃত্বের আস্থাভাজন একাধিক নেতাকে বিভিন্ন পদে বসানো হয়েছে।
এতে করে বর্তমান নেতৃত্বের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, বিভাগীয় শহরে যে মানের নেতৃত্ব দরকার তা না থাকায় খুলনায় বিএনপি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণেই বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের আস্থার সংকটও রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক ও শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করে মহানগর বিএনপির ৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। এতে কমিটি থেকে বাদ পড়েন এক যুগ ধরে সভাপতি পদে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা সাবেক মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনি। হঠাৎ করে কেন্দ্রের চাপিয়ে দেয়া বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করায় মাত্র চার দিন পর ১৩ ডিসেম্বর মঞ্জুকে শোকজ এবং ২৫ ডিসেম্বর তাকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মঞ্জুর অনুসারি সহস্রাধিক নেতাকর্মী। সেই থেকে বিএনপির পদ পদবী থেকে দূরে রয়েছেন এই অংশের নেতারা। তবে ‘নগর বিএনপির সাবেক নেতৃবৃন্দ’র ব্যানারে তারা দলীয় বিভিন্ন কর্মসুচি পালন অব্যাহত রেখেছেন। যদিও নগর বিএনপি’র নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়ের নেপথ্যে মঞ্জু-মনি গ্রুপ দায়ী করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলকে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ ২৯ বছর দায়িত্বে থাকায় খুলনা মহানগর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির বেশিরভাগ নেতাই নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারী ছিলেন। আন্দোলন-কর্মসূচি পালন হয়েছে তাদের নেতৃত্বেই। যার কারণে অসংখ্য মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন তারা। কিন্তু সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ায় দল ত্যাগ না করে অনেকটা ‘অভিমানে’ অপেক্ষায় রয়েছেন পদত্যাগী নেতা-কর্মীরা।
এদিকে, ২০২২ সালের ১ মার্চ মহানগর বিএনপির ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। পরবর্তীতে সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে ২/১টি ঝটিকা মিছিল ও চোরা-গুপ্তা পিকেটিং ছাড়া মাঠে ছিলেন না খুলনার নেতারা। উপরন্তু ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পরবর্তী নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান অনেক নেতা-কর্মী। বিশেষ করে তৎকালীন নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যান। যে কারণে তীব্র আন্দোলনেও নেতা-কর্মীরা তাদের রাজপথে না পেয়ে চরম হতাশ হন। এ দু’ নেতা ওই সময় পাশ্ববর্তী দেশ ভ্রমণে ছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। নেতাদের অনুপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই সময় সামাজিক মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে পোস্ট দেন অপর নেতা সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা। সবমিলে নেতৃত্বের অভাবেই আন্দোলন অনেকটাই গতি হারিয়ে ফেলে। যদিও পরবর্তী শান্ত পরিস্থিতে তারা পর্দা সরিয়ে জনসম্মুখে বের হন।
এদিকে মহানগর বিএনপির সূত্র জানান, দলীয় কার্যালয়ে গত ২১ জুন মহানগর বিএনপির বর্ধিত সভায় ২৫ জুনের মধ্যে নগরীর সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করেই ওয়ার্ড সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে ২৩ মে শুধুমাত্র সদর থানার পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ৫১ সদস্যের এই কমিটিতে কেএম হুমায়ূন কবীরকে আহবায়ক এবং মোল্লা ফরিদ আহমেদকে সদস্য সচিব করা হয়।
সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের মাধ্যমে এই থানাগুলোতে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নির্বাচিত করা হয়েছিল। থানাগুলোতে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর এই থানাগুলোর অধীন ওয়ার্ড কমিটিগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৫ জুলাইয়ের মধ্যে খুলনা সদর থানার অধীন ৯ টি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কথা রয়েছে। এই সম্মেলনে বিএনপি নেত্রী বেগম রেহানা ঈসাকে প্রধান এবং নুরুল হাসান রুবা এবং মাসুম রশিদকে সদস্য করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। যার প্রথম কর্মসূচি হিসেবে গতকাল শনিবার ২১, ২৩ ও ২৭ নং ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দলের তৃণমূলের একাধিক সূত্র ক্ষুব্ধ কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেছেন, বলা হচ্ছে সম্মেলন। কিন্তু মূলতঃ সিলেকশনের মাধ্যমে নেতৃত্বে আনা হচ্ছে নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন এবং সদর থানা আহবায়ক কেএম হুমায়ূন কবীর ও সদস্য সচিব মোল্লা ফরিদ আহমেদের পছন্দের লোকদের। এ জন্য সম্মেলন হলেও যেন তাদের নির্ধারিতদের বাইরে কেউ প্রার্থী না হয়- সেটি আগে-ভাগেই জানান দিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ফলে অনেক প্রার্থীই বহিস্কারের ভয়ে রয়েছেন। এভাবেই নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডেই তাদের পছন্দের লোকদের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সূত্রগুলো।
এ বিষয়ে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, ওয়ার্ড কমিটির নির্বাচন পরিচালনা করছে নির্বাচন কমিটি। এখানে তাদের কোন সে নেই। তবে কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে বলা হয়েছে। পকেট কমিটির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, যাদের মুখ আছে তারা এসব কথা বলতে পারে। তবে এটি ঠিক না।
নির্বাচন কমিশনের প্রধান বেগম রেহানা ঈসা বলেন, কাউকে মনোনয়নপত্র কিনতে বাঁধা প্রদান বা নিষেধ করা হয়েছে- এমন অভিযোগ তিনি পাননি।
মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ৩ মাসের জন্য করা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সংসদ নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত আন্দোলনের সময় খুলনার বিএনপি নেতারা মাঠে ছিল না, তারা পালিয়ে গিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়া ব্যর্থ নেতাদের দিয়ে কোনো সফল আন্দোলন সম্ভব নয়। এজন্য পরীক্ষিত ও সাহসী নেতৃত্ব প্রয়োজন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের বার্তা: ‘কাফন রেডি রাখিস, ছাত্রলীগ ফিরবে; জয় বাংলা’
আমেরিকার সেকেন্ড লেডি হিসেবে উষা ভ্যান্সের অভিষেক
দাউদকান্দিতে অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য আটক
ভূরুঙ্গামারীতে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করায় ৫ ডিলারকে জরিমানা
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে -ব্যারিস্টার অমি
‘প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য 'আই কিউ টেস্ট' তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ’
গাজায় যুদ্ধবিরতির পর নিহতদের অবশিষ্টাংশ খুঁজছে পরিবারগুলো
নগরকান্দায় স্ত্রীর কাছে যৌতুক না পেয়ে, শ্যালকের বউ নিয়ে উধাও জার্মান প্রবাসী
৪ ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের লুট প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা
দাউদকান্দিতে অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য আটক
ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ ভূমিধসে অন্তত ১৯ জন নিহত, উদ্ধার কাজ চলছে
গণহত্যার আসামী জিয়ার আবেদন ‘অপরিপক্ব’, খারিজ করলেন ট্রাইব্যুনাল
আ’লীগ পাপিষ্ট এক ফ্যাসিস্ট রেজিম তাদের তৃতীয়বার গণহত্যার সুযোগ দেওয়া হবে না
উইন্ডিজকে উড়িয়ে বিশ্বকাপের দুয়ারে বাংলাদেশ
ঝিকরগাছায় বেপোরোয়া মাটিবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ২
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি সীমান্তে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা ব্যর্থ
আইনপ্রণেতাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ অস্বীকার করলেন ইউন সুক-ইয়োল
সম্ভাবনাময় ফসল ক্যাপসিকামে কৃষকের ভাগ্য বদলের চেষ্টা
সিলেট জেলা বারের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি
নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রমে সহযোগিতা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে ইবি কর্তৃপক্ষ