চট্টগ্রামে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে গলদ দুর্নীতি তদন্তে যাচ্ছে সংসদীয় কমিটি
০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম
চট্টগ্রামে প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নাম যেন পিছু ছাড়ছে না। প্রকল্পে নানা গলদ, দফায় দফায় সময় ও ব্যয়বৃদ্ধি, দুর্নীতি, অনিয়ম এবং সেইসাথে কাজের নিম্নমান নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এসব প্রশ্ন তুলেছে খোদ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। অভিযোগগুলো তদন্ত এবং নির্মাণকাজের গুণগত মান যাচাইয়ে একটি উপ-কমিটিও গঠন করা হয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তরফে। ওই কমিটির সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আসছেন।
গত ১০ জুন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজিবুর রহমান এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্য পারভীন জামান। জানা গেছে, উপ-কমিটির সদস্যরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে তিন দিনের সফরে আজ চট্টগ্রামে আসছেন। তাদের সঙ্গে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা করবেন উপ-কমিটির সদস্যরা। এ ছাড়া চট্টগ্রামে নিজেদের মধ্যেও বৈঠক করবে কমিটি।
নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের র্যাঙ্কিন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছিলেন। যদিও উদ্বোধনের সাড়ে সাত মাস পার হলেও গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি। উদ্বোধনের পর দুই দফা এক্সপ্রেসওয়ে চালুর উদ্যোগ নেয় সিডিএ। তবে নানা জটিলতায় তা আর শেষপর্যন্ত চালু হয়নি। এখনো প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি। নয়টি স্পটে ১৪টি র্যাম্প বা গাড়ি ওঠানামার পথ থাকলেও তার কোনটাই এখনো প্রস্তুত হয়নি।
মূল অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে কিন্তু র্যাম্পের কাজ শেষ না হওয়ায় এটি চালু করা যাচ্ছে না। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে যে গতিতে র্যাম্প নির্মাণ চলছে তাতে বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ করা যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। টাইগারপাস এলাকায় শতবর্ষী বৃক্ষরাজি কেটে র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও নাগরিক সমাজের আন্দোলনের মুখে সে কাজ স্থগিত করা হয়েছে। আবার বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও স্কুলের সামনে র্যাম্প নির্মাণে আপত্তি দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়নে লেজেগোবড়ে অবস্থা চলছে। আর এর মধ্যেই নালিশ গেছে সংসদীয় কমিটিতে।
জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক্সপ্রেসওয়ের পিলারে ফাটল, যেখানে-সেখানে র্যাম্প নির্মাণ, হুকুম দখল না করে জমি কেনা হয়েছে। আবার কাজের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পের ব্যয় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বেড়েছে। মূলত এসব বিষয়গুলো তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানা গেছে, উপ-কমিটি চট্টগ্রাম এসে এসব বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত ও অনুসন্ধান করবে। এরপর এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে।
২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। এখন ব্যয় হচ্ছে চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজই শুরু করেছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তাতে আপত্তি জানায় চট্টগ্রাম বন্দর ও পুলিশ। এরপর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তাতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় নগরবাসী। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে দফায় দফায় বৈঠকে এক্সপ্রেসওয়ের নকশা বদল করা হয়। এছাড়া দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। তাও শেষ হয়েছে। মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্পটির মত বিগত দেড় দশকে সিডিএর নেয়া কোন প্রকল্পই যথাসময়ে শেষ করা যায়নি। প্রায় প্রতিটি প্রকল্পে ব্যয় এবং সময় দুটোই বাড়ানো হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কলকাতায় প্রকাশ্যে মুরগির মাংস বিক্রি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় ফেনীতে সুদানের নাগরিক আটক
ক্ষমতা গ্রহণ করেই বাইডেন আমলের ৭৮ নির্বাহী আদেশ বাতিল ট্রাম্পের
পেকুয়ায় প্রাচীন খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ জনমনে স্বস্তি
ঢাকার বাতাস ২৪৬ স্কোর নিয়ে আজ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
ট্রাম্প ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় জড়িত ১৫০০ জনকে ক্ষমা করলেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘সেকেন্ড লেডি’
গাজা একটি ‘বিশাল ধ্বংসস্তূপ’, পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন: ট্রাম্প
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রথম পদক্ষেপ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি: ডোনাল্ড ট্রাম্প
ট্রাম্পের শপথ : যোগ দেন চীনের হ্যান ঝেং ভারতের জয়শঙ্কর
সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
সত্যিই কি মারা গেছেন ম্যাশ? কি বলছে রিউমর স্ক্যানার?
সেই যুবকের বিরুদ্ধে ৯০০ টাকা চুরির মামলা
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা ট্রাম্পের
সাফারি পার্কের দেয়াল টপকে পালিয়ে গেল নীলগাই
জোকোভিচ-আলকারাজ হাইভোল্টেজ লড়াই আজ
বড় জয়ে পয়েন্ট টেবিলে দুই নম্বরে চিটাগাং
সুবর্ণ সুযোগ শুরুর ঘোষণা ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রাম্প
ভোটের অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে : সিইসি