কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তাল সারাদেশ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবে না

সারাদেশে ধর্মঘট ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালতের রায় প্রত্যাহার ও ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ রোববার থেকে সারাদেশে ধর্মঘট পালন করবে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করেছে।

গতকাল শনিবার চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলে। এসময় অবরোধ কর্মসূচি থেকে আজকের কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম।

কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, রোববার বিকাল ৩টা থেকে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করে আমরা সারাদেশে ‹বাংলা ব্লকেড› কর্মসূচি পালন করব। আমরা শুধু শাহবাগে বসে থাকবো না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ থেকে সারাদেশের সমস্ত মহাসড়কগুলো অবরোধ করবো। ইতোমধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।

এর আগে গতকাল বিকাল ৩টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে নিজস্ব ব্যানার পোস্টারসহ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসি হয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসের সামনে দিয়ে আজিমপুর, নীলক্ষেত হয়ে ফের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ এসে মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে শাহবাগ অবরোধ করে সাড়ে ৫টায় অবরোধ তুলে নেয় তারা।

এসময় আন্দোলনকারীদের হাতে জাতীয় পতাকা ও কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত পেস্টুনও দেখা যায়। কাফনের কাপড় পরিধান করে ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুর আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, “কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’›- ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে।

অবরোধ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বরাবরের ন্যায় তাদের ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ২. ১৮› এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। ৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। ৪. দূর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা নির্বাহী বিভাগের কাছে জানতে চাই ২০১৮ সালের পরিপত্র কেন বাতিল করা হলো? শিক্ষকদের আন্দোলন কিন্তু বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ও সাইন্স লাইব্রেরী খুলে দেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যদি না খুলেন তাহলে আমরা নিজ দায়িত্বে এটু খুলে নিতে বাধ্য হব।

নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, সরকার ভেবেছে আমরা একদিন দুইদিন আন্দোলন করব এবং একদিন ক্লান্ত হয়ে যাব। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদেরকে যদি বাধ্য করা হয় আমরা প্রয়োজনে সারাদেশে হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। আজকে ছাত্র সমাজকে আদালতের মুখোমুখি করা হচ্ছে, এ দায় নির্বাহী বিভাগ এড়াতে পারে না। এসময় হলে হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধাদানের কারণে ছাত্রলীগের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে নাহিদ বলেন, আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি। শিক্ষার্থীদের যদি বাধা দেওয়া হয় এর জবাব আপনাদের দিতে হবে। যদি আমরা চাকরি না পাই তাহলে আপনাদেরও চাকরি থাকবে না।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালতের রায় আপাতত বহাল রাখে আপিল বিভাগ। ফলে কোটাবিরোধী আন্দোলন দিনদিন আরো তীব্র হচ্ছে। ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা। রোধ- বৃষ্টি, ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে নিয়মিত রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা। গত বৃহস্পতিবার বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করে সারাদেশে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক বিভাগের ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে একদিকে কাফনের কাপড় পরিধান করে কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে গত কয়েকদিনের ন্যায় বিভিন্ন হলের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দিচ্ছে ছাত্রলীগ। গতকাল শনিবারও শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির সময়েই ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে প্রোগ্রাম করেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

জবি সংবাদদাতা জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে টানা পঞ্চম দিন আন্দোলন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠালতলা তলা থেকে শুরু করে পদ্মাসেতুমুখী সড়ক তাঁতিবাজার মোড়ে অবস্থান করে।

এসময় রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত মিছিল চলে আসলে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং সামনে যেতে দেয়নি। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির তোপের মুখে পড়ে পদ্মাসেতু মুখী তাঁতিবাজার পর্যন্ত অনুমতি দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রায় দুইঘণ্টা নানা রকম স্লোগান কবিতা আবৃত্তি ও গানের মাধ্যমে তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করে রাখে । শিক্ষার্থীদের তাঁতিবাজার অবস্থান নেয়ার ফলে বাবুবাজার, যাত্রাবাড়ী ও সদরঘাটগামী রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। পরে এটি কেরানীগঞ্জ কদমতলী, কাকরাইল, সদরঘাট ও যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা দেয়া হয় অনগ্রসর জাতির জন্য। দেশের ৫৬ভাগ জনগণ কি অনগ্রসর? বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তাহলে এতো কোটা কেনো? যতদিন কোটা আছে তদিন দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের যৌক্তিক দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হুসাইন মুন্না বলেন, আন্দোলকারীদের রক্তচক্ষু দেখিয়ে ভয় দেখানো সম্ভব নয়। এ দাবি শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নয়, সব শিক্ষার্থীদেরই। এসময় তিনি পুনরায় শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
এছাড়া গত শুক্রবার রাত থেকে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে কোটা বাতিলের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইন্সটিটিউটের মধ্যে ৩৪টি বিভাগের ১১৫টি ব্যাচ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে। পরবর্তীতে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। ক্লাস পরীক্ষা বর্জনকারী বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে- গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ব্যাচ (১৬, ১৭ ও ১৮), ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের ব্যাচ(১৬, ১৭ ও ১৮), আইন বিভাগের -ব্যাচ (১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮), মার্কেটিং বিভাগের ব্যাচ(১৭, ১৮), দর্শন বিভাগের ব্যাচ (১৭, ১৮), সমাজকর্ম বিভাগের ব্যাচ (১৮), আই.ই.আর বিভাগের (১৪, ১৬, ১৭ ও ১৮), গণিত বিভাগের ব্যাচ (১৮), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ব্যাচ (১৬, ১৭, ১৮), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ব্যাচ (১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮)।

এছাড়া রয়েছে আই.এম.এল বিভাগের ব্যাচ(১৪, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮), ইতিহাস বিভাগের (১৪, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮), পদার্থবিদ্যা বিভাগের ব্যাচ (১৭), লোক প্রশাসন বিভাগের ব্যাচ (১৭, ১৮), নৃবিজ্ঞান বিভাগের ব্যাচ(১৬, ১৭ ও ১৮), হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যাবস্থাপনা বিভাগের ব্যাচ (১৭ ও ১৮), পরিসংখ্যান বিভাগের ব্যাচ (১৬, ১৭, ১৮), সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ব্যাচ (১৬), ইংরেজি বিভাগের ব্যাচ (১৫, ১৬), রসায়ন বিভাগের ব্যাচ (১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮), ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ব্যাচ(১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮),উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ব্যাচ(১৫, ১৬, ১৭, ১৮), প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ব্যাচ ( ১৭ ও ১৮)। মনোবিজ্ঞান বিভাগের (১৭, ১৮) ব্যাচ, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের (১৬, ১৭, ১৮) ব্যাচ, ফার্মেসী বিভাগের ১৮ ব্যাচ, কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের (১৭) ব্যাচ, ফাইন আর্টস (১৮ ব্যাচ), ড্রইং এন্ড পেইন্টিং (১৫ ব্যাচ)। সংগীত বিভাগের (১৮ ব্যাচ) সহ আরো অন্যান্য ব্যাচ।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি মিছিল বের করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নগর জালফৈ বাইপাস এলাকায় বিক্ষোভ করে তারা। এসময় মহাসড়কের দুইপাশে প্রায় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে দেড় ঘণ্টা গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তোলে নেয়ার আহ্বান জানালে মহাসড়কের একপাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দেয়। দীর্ঘ দেড়ঘণ্টা আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে চলে আসেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা জানান, ২০২৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটা প্রথা পুনর্বহাল করায় শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে। বিচার বিভাগের প্রতি সম্মান রেখে আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, তিনি আমাদের যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করে অধিকার ফিরিয়ে দেয়। দাবি মেনে আমাদেরকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়।

ইবি সংবাদদাতা জানান, বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রায় আধাঘণ্টা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণ থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে এ মিছিল করেন তারা। পরবর্তীতে মিছিলটি ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজার হয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে এসে সমবেত হয়। সেখানে মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই, সারাবাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে, মেধাবীদের কান্না, আর না আর না, লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছেসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমারা কোটা পদ্ধতি বাতিল নয়, সংস্কার চাই। সরকার কোটার নামে মেধাবী শিক্ষার্থীদের যে অবমূল্যায়ন করছে আমরা তার বাতিল চাই। এভাবে কোটা পদ্ধতি চালু থাকলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় অমেধাবীদের দখলে চলে যাবে, বেড়ে যাবে দুর্নীতি। দেশ স্বাধীন হয়েছে বৈষম্য রোধ করতে কিন্তু কোটা পদ্ধতি সেই বৈষম্য সৃষ্টি করছে। আমরা এই বৈষম্য বন্ধের আন্দোলন করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।

পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। প্রায় এক ঘণ্টা এই অবরোধ চলে। এতে দুইপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের অনুরোধে ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ক্যাম্পাসেই সমাবেশ করেন তারা। পরে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্বাধীনতার এতো বছর পরও কোটা ব্যবস্থা মেনে নেয়া যায় না। এর মাধ্যমে আমাদের মেধার অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এই কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল। আবার কোনো উদ্দেশ্য এটা বহাল হলো তা অজানা। এটা মেনে নেয়া যায় না। কোটা ব্যবস্থা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।

চবি সংবাদদাতা জানান, কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থীদের আহবানে গত শুক্রবার বিকাল পৌনে পাঁচটায় চট্টগ্রাম শহরের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয় চবিসহ চবি অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত চলা এই অবরোধে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর সমাগম ঘটে। শিক্ষার্থীদের অবস্থানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে উভয় লেনের সড়ক। দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় এই রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রীদেরকে।

এসময় শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা-মেধা, মেধা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকে। এর আগে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। গত শুক্রবার থেকে শহরের ষোলশহর স্টেশন ও দুই নম্বর এলাকায় কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, এদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে বাঁচতে। আমরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। কিন্তু বর্তমানে কোটা পদ্ধতির যে অনুপাত আছে তা মেধার সঠিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম নয়। আমরা কোটার বিরুদ্ধে নই। তবে এটা সংস্কার করে সীমিত আকারে আনতে হবে। আমরা চাই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে একটা বৈষম্যহীন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠুক। ছাত্র সমাজের এই দাবি সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে মেনে নিতে হবে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্সে বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, আমরা আন্দোলনে সামিল হয়েছি কোটানামক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আমরা আজকে কর্মসূচি পালন করছি আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য এবং স্বাধীন বাংলায় সাম্য প্রতিষ্ঠার পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আমরা চাই না একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী চাকরি বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করুক, আমরা চাই সমতা ও ন্যায্য অধিকার। আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা তাসরিন বলেন, আমরা মূলত কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছি। এর মূল কারণ আমরা মেধা দিয়ে দেশ গড়তে চাই, কেবল কোটাধারীদের দিয়ে না। এভাবে চললে এই দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে। যতদিন আমাদের দাবি না মানা হবে আমরা আন্দোলন করে যাব।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিলেন ৩৫ প্রত্যাশীরা
হাসিনার গোপন চুক্তি বাতিলে ভারতকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ
ভূমি উপদেষ্টা হলেন আলী ইমাম মজুমদার
বিগত সরকারের আমলে প্রতিটি সেক্টরের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোক্তার অভিযোগের জন্য ওয়েব পোর্টাল চালু
আরও

আরও পড়ুন

শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিলেন ৩৫ প্রত্যাশীরা

শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিলেন ৩৫ প্রত্যাশীরা

সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ির ২৩ লাখ  টাকা ছিনতাইয়ের  মূল মাস্টারমাইন্ড আলিমুদ্দিনসহ দু'জন গ্রেপ্তার

সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ির ২৩ লাখ  টাকা ছিনতাইয়ের  মূল মাস্টারমাইন্ড আলিমুদ্দিনসহ দু'জন গ্রেপ্তার

কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতাকে বিএনপি নেতার হুশিয়ারি

কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতাকে বিএনপি নেতার হুশিয়ারি

এনামুলকে সরিয়ে রাজশাহীর নেতৃত্বে তাসকিন

এনামুলকে সরিয়ে রাজশাহীর নেতৃত্বে তাসকিন

কাপ্তাইয়ে পাহাড় কাটার ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর

কাপ্তাইয়ে পাহাড় কাটার ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর

শিক্ষার্থীদের জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করতে হবে  :  আভা রাণী দেব

শিক্ষার্থীদের জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করতে হবে : আভা রাণী দেব

হাসিনার গোপন চুক্তি বাতিলে ভারতকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ

হাসিনার গোপন চুক্তি বাতিলে ভারতকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ

মাগুরায় এক শ্রমিকের মৃত দেহ উদ্ধার

মাগুরায় এক শ্রমিকের মৃত দেহ উদ্ধার

জিয়া পরিষদের দপ্তর সম্পাদক হলেন সালথার হেমায়েত হোসেন

জিয়া পরিষদের দপ্তর সম্পাদক হলেন সালথার হেমায়েত হোসেন

ভূমি উপদেষ্টা হলেন আলী ইমাম মজুমদার

ভূমি উপদেষ্টা হলেন আলী ইমাম মজুমদার

শ্রীপুরে কারখানার বয়লার বিস্ফোরণ, আহত ২০

শ্রীপুরে কারখানার বয়লার বিস্ফোরণ, আহত ২০

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -২ এর মাথা থেকে নামতে পারেনি আওয়ামী ভূত

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -২ এর মাথা থেকে নামতে পারেনি আওয়ামী ভূত

স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক এমপি বাহারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক এমপি বাহারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বিগত সরকারের আমলে প্রতিটি সেক্টরের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বিগত সরকারের আমলে প্রতিটি সেক্টরের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

প্রকাশ পেল 'রিকশা গার্ল' সিনেমার মিউজিক ভিডিও 'কোন লাটাইয়ে উড়বা ঘুড়ি'

প্রকাশ পেল 'রিকশা গার্ল' সিনেমার মিউজিক ভিডিও 'কোন লাটাইয়ে উড়বা ঘুড়ি'

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: জিএম কাদের

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: জিএম কাদের

সিলেটকে তলানীতে পাঠিয়ে ঢাকার দ্বিতীয় জয়

সিলেটকে তলানীতে পাঠিয়ে ঢাকার দ্বিতীয় জয়

আবু সাঈদ হত্যা: রংপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল

আবু সাঈদ হত্যা: রংপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল

ট্রাম্পের ২.০: তার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন যারা

ট্রাম্পের ২.০: তার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন যারা

গম সহ কৃষি পণ্যে উৎপাদন ও গুনগত মান ব্যহতের আশংকা

গম সহ কৃষি পণ্যে উৎপাদন ও গুনগত মান ব্যহতের আশংকা