দেয়াল লিখন, দেয়াল আল্পনা পথচারীর মুগ্ধতার উৎস

Daily Inqilab খুলনা ব্যুরো

০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম

শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দেয়াল লিখন এবং দেয়াল আল্পনা পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। রঙ-বেরঙের এই শিল্পকর্মগুলো কেবলই সুদৃশ্য নয় বরং সমাজের বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। কখনো রাজনৈতিক, কখনো সামাজিক, আবার কখনো শুধুমাত্র নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়াতে এই দেয়াল লিখন এবং আল্পনার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তাইতো খুলনার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে, ছাদে এবং বিভিন্ন সীমানা প্রাচীরে দেয়াল লিখন এবং দেয়াল আল্পনার জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
দেয়াল লিখন সাধারণত সমাজের বিভিন্ন সমস্যার উপর আলোকপাত করে। উদাহরণস্বরূপ, পথচারীরা যখন “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড” বা “সবাই মিলে সোনার বাংলা গড়বো” লেখা দেখে, তখন তারা অনুপ্রাণিত হয়। এই দেয়াল লিখনগুলো সমাজের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে অন্যদিকে, দেয়াল আল্পনা নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। নানা রঙের সংমিশ্রণে তৈরি এই আল্পনাগুলো পথচারীদের মনে আনন্দ এনে দেয়। কখনো ফুলের নকশা, কখনো জীবজন্তু আবার কখনো নানা ধরনের জ্যামিতিক আকারের সংমিশ্রণ এই আল্পনাগুলোতে দেখা যায়। এসব আল্পনা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন হাজারো পথচারী এই দেয়াল লিখন ও আল্পনার সৌন্দর্য উপভোগ করে। অফিস যাওয়ার পথে বা ছুটির দিনে ঘুরতে বেরিয়ে তারা এই শিল্পকর্মগুলো দেখে আনন্দিত হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলের মধ্যেই এই দেয়াল লিখন ও আল্পনা বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে। আর দেয়াল লিখন ও আল্পনার মাধ্যমে অনেক শিক্ষণীয় বার্তা সমাজের বিভিন্ন স্তরে পৌঁছে যায়। যেমন পরিবেশ সংরক্ষণ, নারী অধিকার, শিশু অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে দেয়াল লিখনের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা হয়। খুলনার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সমাজ সেবা অধিদফতর পরিচালিত শিশু সদনের দেয়াল, নদীর পাড়ে অনেক জায়গাতেই এই দেয়াল লিখন ও আল্পনার নান্দনিক উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো শহরের সামগ্রিক সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে। বর্তমানে দেয়াল লিখন ও আল্পনার ব্যবহার শুধু শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। গ্রামের বিভিন্ন জায়গাতেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয় শিল্পীরা নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ পরিবেশকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলছেন। দেয়াল লিখন এবং দেয়াল আল্পনার এই অনন্য প্রয়াস আমাদের চারপাশকে কেবল সুন্দরই করছে না বরং আমাদের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করছে। পথচারীদের মুগ্ধতার এই উৎস যেন আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও বেগবান করে তোলে। আর এই দেয়াল লিখন এবং দেয়াল আল্পনার পেছনে রয়েছে প্রতিভাবান শিল্পীদের অক্লান্ত পরিশ্রম। তারা নিজেদের সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেয়ালগুলোকে জীবন্ত করে তোলেন। এই শিল্পীদের কাজের মাধ্যমে তাদের মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটে, যা সমাজের সকল স্তরে প্রশংসিত হয়।
খুলনা সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী পূজা রায় জানান, আমাদের কলেজের পাশে সরকারি শিশু সদনের দেয়ালে অনেক ভাল ভাল কথা লেখা। সুন্দর সুন্দর ছবি আল্পনা আঁকা। দেখলে ভালই লাগে। এমন যদি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়ির দেয়ালে বাণী বা চিত্র আঁকা থাকতো তাহলে কতইনা সুন্দর হতো।
দীর্ঘদিন ধরে দেয়াল লিখন এবং দেয়াল আল্পনা নিয়ে কাজ করছেন খুলনার বহু চিত্রশিল্পী। তেমনই একজন এম সাইফুর রহমান লিটন। তিনি জানান, এখন আর মানুষ এগুলো লিখতে চায় না। দেয়ালে লেখা বা আল্পনার লোকও এখন পাওয়া কঠিন। কাজ কম থাকায় ভাল ভাল শিল্পীরা অন্য পেশায় চলে গেছে। হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পী রয়েছে। যারা আজও এ কাজ করে যাচ্ছে। অনেক মানুষ যখন কোন দেয়ালে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমার আঁকা ছবি বা লেখা দেখে আমাকে বলে এবং প্রশংসা করে তখন সব কষ্ট মøান হয়ে যায়। তবে এ কাজে সমৃদ্ধি আসছে না। যদিও কিছু কিছু প্রবীণ মানুষ এ কাজকে খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
খুলনা টুটপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মাসুদ মাহমুদ জানান, বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর খালি রাখলে কোন কোচিং বা কোন কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে, বিভিন্ন জন নানান পোস্টারে ভরে ফেলে। দেখতেও খারাপ লাগে। তাই আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের প্রাচীর এবং বিদ্যালয়ের ভবনে নানা রকমের চিত্রকর্ম দিয়ে ভরে ফেলেছি। শিক্ষণীয় সব বাণী, ছবি এবং অক্ষর দিয়ে সাঁজিয়েছি। পরিবেশটা অনেক সুন্দর হয়েছে। শিশুদেরও ভালো লাগে। ভালো লাগে আমাদেরও। ##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক
সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার
সারা দেশে কমবে রাতের তাপমাত্রা,জানালো আবহাওয়া অধিদপ্তর
অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেলেন মামুন
আরও

আরও পড়ুন

ছাগলনাইয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির কমিটি গঠন

ছাগলনাইয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির কমিটি গঠন

বাগেরহাটে এ্যাথলেটিক প্রতিযোগীতা ও গ্রামীন খেলা অনুষ্ঠিত

বাগেরহাটে এ্যাথলেটিক প্রতিযোগীতা ও গ্রামীন খেলা অনুষ্ঠিত

গাজা পুনর্গঠনে কার হাতে থাকবে প্রশাসনিক দায়িত্ব ?

গাজা পুনর্গঠনে কার হাতে থাকবে প্রশাসনিক দায়িত্ব ?

রামগড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৫টি ইটভাটায় জরিমানা

রামগড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৫টি ইটভাটায় জরিমানা

এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কম মূল্যে জমি বিক্রি না করায় দাউদকান্দিতে ছাত্রদলের নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

কম মূল্যে জমি বিক্রি না করায় দাউদকান্দিতে ছাত্রদলের নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

মুক্ত তিন ইসরাইলি জিম্মিকে যে ‘উপহারের ব্যাগ’ দিলো হামাস

মুক্ত তিন ইসরাইলি জিম্মিকে যে ‘উপহারের ব্যাগ’ দিলো হামাস

জেরায় অবশেষে দোষ স্বীকার সাইফের হামলাকারীর

জেরায় অবশেষে দোষ স্বীকার সাইফের হামলাকারীর

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা

বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ

বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ

বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান

বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান

গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২

গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২

ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক

ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক

পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ

পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ

আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ

আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ

সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!

সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!

গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ

গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ

গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম

গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম

সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা

সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা

গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের

গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের