ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না
০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম
ইসলামী বছরের প্রথম মাস মহররম। এই শব্দটি মূলতঃ নামবাচক বিশেষ্য নয় গুণবাচক বিশেষণ। ইসলামের অবির্ভাবের পূর্বে প্রাচীন মক্কার বছরের প্রথম দুই মাস ছিল প্রথম সফর ও দ্বিতীয় সফর। আল মহররম ও সফরের স্থলে ‘আস্ সফরাইনি’ এই দ্বি বাচনিক রূপ দেখে তা বুঝা যায়।
প্রাচীন আরবের বছরের প্রথম অর্ধ বছরে তিনটি মাস ছিল এবং তিন মাসের প্রত্যেকটিতে দুটি মাস ছিল। যেহেতু দুই সফরের পরে দুই রবি ও ২ জুমাদা ছিল দুই সফরের প্রথমটি অলঙ্ঘনীয় পবিত্র মাসগুলোর অন্যতম ছিল বলে এর গুবাচক আখ্যা দেয়া হয়েছিল ‘আল-মহাররম’। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা-ই মাসের নাম হয়ে গেছে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বছর গণনায় মাসের সংখ্যা বারটি নির্ধারণ করেছেন এবং তন্মধ্যে চারটি মাসকে নিষিদ্ধ ও অলঙ্ঘনীয় বলে স্থিরীকৃত করেছেন। এতদ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : “নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনার মাস বারটি, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ ও অলঙ্ঘনীয় মাস, এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বিন। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলম করোনা এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। [সূরা আত্-তাওবাহ আয়াত ৩৬]
এই আয়াতে কারীমের অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা লাভ করা যায়। যথা (এক) এই আয়াতের মাধ্যমে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ইসলামী বারটি মাসের ধারাবাহিকতা নির্ধারণ করা হয়েছে আসমান ও যমিনের সৃষ্টি পরবর্তী মুহূর্তে। এটা মহান আল্লাহপাকের সর্ব জ্ঞানী হওয়ার সাক্ষ্য বহন করে। [তাফসীরে সা’দী]
(দুই) এই আয়াতে ‘ফী কিতাবিল্লাহি’ (আল্লাহর বিধানে) বলে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, এই বিষয়টি সৃষ্টির প্রথম দিনেই তকদীরে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। [তাফসীরে সা’দী] আর সে অনুসারে ‘লাওহে মাহফুজ’ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। [তাফসীরে কুরতুবী]
(তিন) এই আয়াতে বলা হয়েছে নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট গণনার মাস হল বারটি। এখানে উল্লেখিত ‘ইজ্জত’ শব্দটির অর্থ গণনা। আর শুহুর হল শাহরুল এর বহুবচন। এর অর্থ মাস। আয়াতে কারীমায় সারমর্ম হলো এই যে, আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারতেই নির্ধারিত, এতে কমবেশি করার কারো সুযোগ নেই। জাহেলিয়াতের আমলে লোকেরা বদলালেও তোমরা সেটা বদলাতে পারো না। তোমাদের কাজ হল আল্লাহ পাকের এ নির্দেশ মোতাবেক সেটাকে ঠিক করে নেয়া। [ তাফসীরে কুরতুবী]
(চার) হিজরী দশম সালে বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে প্রদত্ত খুতবায় নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্মানিত ও অলঙ্ঘনীয় মাসগুলোকে চিহ্নিত করে বলেন, তিনটি মাস হল ধারাবাহিক- যিলক্কদ, জিলহজ ও মহররম, অপরটি হল রজব। [সহীহ বুখারী ৩১৯৭, সহীহ মুসলিম ১৬৭৯] সাহাবী আবু বকর (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় সময় আবার ঘুরে ঘুরে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফিরে এসেছে। যে পদ্ধতিতে আল্লাহ পাক আসমান ও যমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিনের মত। মাসের সংখ্যা বারোটি। তন্মধ্যে চারটি হচ্ছে অলঙ্ঘনীয় ও নিষিদ্ধ মাস। তিনটি পরপর জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর হচ্ছে মুদার গোত্রের রজব মাস। যা জুমাদাস সানি ও শাবান মাসের মাঝখানে থাকে। [সহীহ বুখারী ৪৬৬২, সহীহ মুসলিম : ১৬৭৯]
(পাঁচ) বারোটি মাসের ধারাবাহিকতা নির্ধারণ ও সম্মানিত এবং মর্যাদাপূর্ণ মাসগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হুকুম-আহকামকে সৃষ্টির প্রথম পর্বেই ইলাহী নিয়মের সাথে সঙ্গতিশীল রাখাই হলো সঠিক দ্বিন (ইসলাম)। এতে কোন মানুষের কম বেশি কিংবা পরিবর্তন করার প্রয়াস অসুস্থ বিবেক ও মন্দ স্বভাবের আলামত। এর দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, মাসগুলোর ধারাবাহিকতা এবং সেগুলোর যে নাম ইসলামী শরীয়তে প্রচলিত, ও তা’ মানব রচিত পরিভাষা নয়, বরং মহান রাব্বুল আলামীন যেদিন আসমান ও যমিন সৃষ্টি করেছেন, সে দিনই মাসের তরতীব নাম ও সম্মানিত মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট হুকুম আহকাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
আলোচ্য আয়াত দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর দৃষ্টিতে শরীয়তের আহকামের ক্ষেত্রে চন্দ্রমাসই নির্ভরযোগ্য। চন্দ্রমাসের হিসাব মতেই রোজা, হজ ও যাকাত প্রভৃতি আদায় করতে হয়। [তাফসীরে কুরতুবী] তবে কুরআন মাজীদে চন্দ্রের মত সূর্যকেও সন তারিখ নির্ধারণের মানদণ্ডরূপে অভিহিত করা হয়েছে। [সূরা আল আনায়াম : আয়াত ৯৬, সূরা আর রহমান, আয়াত : ৫, সূরা ইউসুফ, আয়াত : ৫] অতএব চন্দ্র ও সূর্য উভয়টির মাধ্যমেই সন তারিখ নির্দিষ্ট করা যায়েজ। তবে চন্দ্রের হিসাব আল্লাহ তায়ালার অধিকতর পছন্দ। তাই শরীয়তের আহকামকে চন্দ্রের সাথে সংশ্লিষ্ট রেখেছেন। এজন্য চন্দ্র বছরের হিসাব সংরক্ষণ করা ফরজে কেফায়া। সকল উম্মত এ হিসাব ভুলে গেলে সবাই গুনাহ্গার হবে। চাঁদের হিসাব ঠিক রেখে অন্যান্য সূত্রের হিসাব ব্যবহার করা যায়েজ আছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা
বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ
বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান
গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২
ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক
পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ
আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ
সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!
গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ
গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম
সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা
গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের
বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক
লক্ষ্মীপুরে ড্রামট্রাকের চাপায় প্রাণ গেল দুই অটোরিকশা যাত্রীর
মানিকগঞ্জে পদ্মায় বড়শিতে ধরা পরল ৯ কেজি ওজনের বোয়াল
রাজশাহী নার্সিং কলেজের ১৪ শিক্ষার্থী ফেল করে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিলেন
মেলানিয়া ট্রাম্প বাজারে আনলেন নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি
সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার
শরীয়তপুর পৌরসভার বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা
সাইফ ইস্যুতে মেজাজ হারালেন অভিনেতা জাকি শ্রফ