আওয়ামী লীগ ভারতের সেবাদাস হিসেবে কাজ করে আসছে -কর্নেল অলি
০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম
আওয়ামী লীগ ভারতের সেবাদাস হিসেবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন দেশটি কেউ আমাদের উপহার হিসেবে দেয়নি। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।
ভারত পেয়েছে দ্বি-খণ্ডিত পাকিস্তান। আমরা উভয়ে নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি। সুতরাং হিসাব সমান-সমান। বরং প্রায় লক্ষাধিক পাকিস্তানি সেনা সদস্যের ফেলে যাওয়া সকল অস্ত্র, গোলাবারুদ, যানবাহন ও অন্যান্য সামগ্রী এবং বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার মেশিন ইত্যাদি ভারতের সেনাবাহিনী নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার তখন একটি টু-শব্দ পর্যন্ত করার সাহস পায়নি। কর্নেল অলি বলেন, প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ভারতের সেবাদাস হিসাবে কাজ করে আসছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অপমানজনক। এই অবৈধ সরকারের কোন এম.ও.ইউ. স্বাক্ষর করার সাংবিধানিক অধিকার নেই। কারণ তারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি নয়। বিশেষ করে, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাথে যে এম.ও.ইউ.স্বাক্ষর করেছে, তাতে দেশের জন্য অনেকগুলি ক্ষতিকর, সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে। আওয়ামী লীগ যেনতেনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। দেশের এবং জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতার বালাই নেই। তাদের কারণে দেশে ন্যায়বিচার নির্বাসিত, মানবাধিকার পদদলিত।
গতকাল রোববার রাজধানীর মগবাজারের এলডিপি কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্নেল অলি আহমদ বলেন, এই অবৈধ সরকার সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে, দলীয় নেতাকর্মী এবং সেবাদাস কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে নির্বিবাদে দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করাসহ অনেকগুলি আইন-বহির্ভূত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে। সব সময় বলেন, দেশের উন্নতি করার জন্য আমার ক্ষমতা চাই। কিন্তু বাস্তবতা এবং তাদের আচরণ দুইটাই ভিন্ন। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বারবার জাতির সামনে বলেছেন যে, আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, তা তারা কখনও ভুলতে পারবে না। কয়েকদিন পূর্বে তিনি আরো বলেছেন যে, ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে অবাধে যাতায়াত বিদ্যমান রয়েছে। এতে কি তাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে? তাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েনি। কারণ তারা এক দেশ অন্য দেশের ব্যাপারে কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করে না। বিশেষ করে, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নির্বাচন, রাজনীতি এবং অর্থনীতির ব্যাপারে তো নয়ই। তাদের নাগরিকদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য ভিসারও প্রয়োজন হয় না। অপর দিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কি সেই ধরণের অবস্থা বিরাজ করছে? মোটেও না। ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। আমার জানামতে, ভারতের রেলওয়েতে শক্তিশালী গোয়েন্দা ইউনিটসহ প্রায় ৮০ হাজার অস্ত্রধারী সদস্য রয়েছে। বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে ভারতের রেল লাইন স্থাপিত হলে, ভারতের রেলওয়ের এই ৮০ হাজার অস্ত্রধারী এবং শক্তিশালী গোয়েন্দাদের বাংলাদেশ কিভাবে সামাল দেবে? বর্তমান ভারত সরকার, বাংলাদেশের অবৈধ সরকারকে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে, একে একে বিগত ১৫ বছরে একতরফাভাবে তাদের স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলিকে সুকৌশলে পঙ্গু করে দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার ষড়যন্ত্রে অনেকাংশে তারা সফল হয়েছে। একেতো আমাদের কৃষিযোগ্য জমি খুবই কম, তার উপর ভারতের এই রেললাইন, বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে চলাচলের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হলে, তা এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতার নেশা, দেশ এবং জনগণকে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। তাই এখন দেশকে তাদের হাত থেকে মুক্ত করা অত্যাবশ্যক।
কর্নেল অলি বলেন, ১৯৯৬ সালে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে, আমরাও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারতাম, কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, পুনঃ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলেন। আপনারাও (আওয়ামী লীগ) ২০১৪ সালে পুনঃনির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় হলো, আপনাদের কথা এবং কাজের মধ্যে কখনও কোন মিল নেই। আপনারা সব সময় সুযোগের সন্ধানে থাকেন। দেশের ও জনগণের কথা মোটেও আপনাদের মস্তিষ্কের মধ্যে নেই। শুধু চাই হালুয়া-রুটি আর মসনদ। মনে রাখবেন, সামনে চরম দুঃসময় অপেক্ষা করছে। এখন সময় হয়েছে, সম্মানের সাথে বিদায় নেন।
বিভিন্ন কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ইদানিং সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধানদের দুর্নীতির ফিরিস্থি ক্রমান্বয়ে বের হয়ে আসছে। এই অবৈধ সরকারের পৃষ্ঠপোষক ব্যবসায়ীরা, কর্মকর্তা/কর্মচারীরা দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে দেশে ও বিদেশে বিলাস বহুল জীবন যাপন করে চলেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এরা সকলে অবৈধ সরকারের ক্ষমতার ভাগীদার, তাই সরকার দুর্নীতিবাজদেরকে টাকা পাচার ও নিরাপদে দেশ ত্যাগ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। শাসন ব্যবস্থা, ন্যায় বিচার ও দেশের অর্থনীতি, বর্তমানে এই লুটেরাদের হাতে জিম্মি। বাস্তবিক পক্ষে, তাদের কোন বিচার হচ্ছে না, অথচ সাজানো মামলায় জেলে ঢুকানো হচ্ছে বিরোধীদলের নেতা/নেত্রীদের। সরকারের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, এমপি এবং মদদদাতাদেরও বিচার হওয়া প্রয়োজন। কেন বিগত ১৪ বছরেও সাগর-রুনি হত্যার বিচার হচ্ছে না? জনগণ বর্তমান বিচার ব্যবস্থা বা প্রশাসনের উপর কিভাবে আস্থা রাখতে পারে? একদিকে দুর্নীতি করার পর টাকা পাচার করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ ও সময় দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ভীষণ অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আল্লাহর নিকট আপনারা ক্ষমতাসীনরা কি জবাব দেবেন?
এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশ আজ দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে। সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের, যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ রয়েছে। কারণ দেশ ও প্রশাসন পুরাতন জমিদারি পন্থায় পরিচালিত হচ্ছে। যাকে ইচ্ছা ঋণ দেওয়া হয়, যাকে ইচ্ছা ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়, যাকে ইচ্ছা দুর্নীতি করার পর টাকা পাচার করে, বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ ও সময় দেওয়া হয়। অথচ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও গরিব কৃষকদের সুদ মওকুফ করা হয় না। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একই ধরনের আইন বা নিয়ম হওয়া উচিত। সুতরাং যে যেখানেই থাকুক না কেন, প্রত্যেককে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে এবং এটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিশেষ করে, সরকারি চাকরির নিয়োগের সময় নিজের মাতা, পিতা, ভাই, বোনসহ সকলের আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করতে হবে। দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা, আমাদের সকলের কর্তব্য।
কর্নেল অলি বলেন, নিঃসন্দেহে বলা যায়, অবৈধ সরকারই দুর্নীতি, টাকা পাচার, চোরাচালান ইত্যাদি লালন ও পালনকারী। অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা দখল করার জন্য এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সবসময় পুলিশ, বিজিবিসহ প্রশাসনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। ২০১৪, ২০১৮, এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে সমগ্র জাতি এবং সমগ্র পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে, এই অবৈধ সরকারের পাতানো নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করেনি। সুতরাং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, এই অবৈধ সরকারকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। অপরদিকে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল জরিমানা এবং হয়রানি করা হয়। নিঃসন্দেহে বলা যায়, অবৈধ সরকারই দুর্নীতি, টাকা পাচার, চোরাচালান ইত্যাদি লালন ও পালনকারী। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবৈধ সরকারের পক্ষে দুর্নীতি দমন আদৌ কি সম্ভব?
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি প্রমুখ।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান
গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২
ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক
পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ
আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ
সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!
গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ
গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম
সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা
গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের
বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক
লক্ষ্মীপুরে ড্রামট্রাকের চাপায় প্রাণ গেল দুই অটোরিকশা যাত্রীর
মানিকগঞ্জে পদ্মায় বড়শিতে ধরা পরল ৯ কেজি ওজনের বোয়াল
রাজশাহী নার্সিং কলেজের ১৪ শিক্ষার্থী ফেল করে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিলেন
মেলানিয়া ট্রাম্প বাজারে আনলেন নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি
সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার
শরীয়তপুর পৌরসভার বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা
সাইফ ইস্যুতে মেজাজ হারালেন অভিনেতা জাকি শ্রফ
হাজীগঞ্জে কুমড়ার বাম্পার ফলন দাম না পেয়ে কৃষকরা হতাশ
ইবিতে 'কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও শৃঙ্খলা বিধানে করণীয়' শীর্ষক কর্মশালা