প্রত্যয় স্কিম, শিক্ষকদের আন্দোলন চলবে

Daily Inqilab বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম

সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করে যাচ্ছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে শিক্ষক নেতাদের আলোচনায় বসার কথা থাকলেও তা হয়নি। শিক্ষকদের দাবি আদায়ে এখন পর্যন্ত সরকারের উচ্চ মহল থেকে কোন প্রকার আশ্বাস পাননি তারা। ফলে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, সরকারের উচ্চ মহলের সাথে আমাদের এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আমরা আশাবাদী যে অতি শীঘ্রই আলোচনা হবে। আমরা শিক্ষক সমাজ শান্তিতে বিশ্বাসী, আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না। চলতি মাসের ১ জুলাই থেকে সকল ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ও দাফতরিক কাজ বন্ধ রেখে সর্বাত্মক আন্দোলন করে যাচ্ছেন দেশের প্রায় ৩৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সর্বাত্মক আন্দোলনের অংশ হিসেবে সকল ধরনের অ্যাকাডেমিক ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

গতকাল রোববার সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে সকাল ৯ টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের মোর্চা ‹ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য পরিষদ›। এ সময় সংবিধান সংশোধন করে হলেও সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবি জানান কর্মকর্তারা। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‹দুনিয়ায় মজলুম, এক হও লড়াই করো›, ‹এক দেশে দুই নীতি, মানি না মানব না›, ‹লড়াই লড়াই লড়াই চাই, বাধা দিলে বাধবে লড়াই› ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সারওয়ার মোরশেদ বলেন, আমরা এখনো পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের দাবি না মেনে নেওয়া হলে আমরা আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব। আমরা আজ রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিন্ন রকম আন্দোলনের কর্মসূচি আনব। আগামীকাল থেকে আমরা শুধু এখানেই অবস্থান করবো না, আমরা পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ গড়ে তুলবো। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তাদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলে।

একই দিন সকাল ১২ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জিনত হুদার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষকরা। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিমউদদীন হলের প্রভোস্ট সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শাহীন খান বলেন, আমাদের এ আন্দোলন কোনো নতুন কিছুর দাবিতে আন্দোলন নয়, এটি উচ্চ শিক্ষাকে বাঁচিয়ে রাখার আন্দোলন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। আমরা আশা করি তিনি আমাদের অবস্থানটি বুঝবেন এবং একটি আলোচনায় বসে এর সমাধান করবেন।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জিনাত হুদা বলেন, আমাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই বিভ্রান্তিতে কান দিবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কলাভবনে ২০০৭-৮ সালে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বসে ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে আজকে আমরা যারা বক্তব্য রাখছি তারাই তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মাইনাস ফর্মুলার বিরুদ্ধে কালো পতাকা উড়িয়েছিলাম। আমি নিজে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে কালো ব্যাজ ধারন করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলাম এবং তা সর্বসম্মতভাবে শিক্ষক সমিতিতে গৃহীত হয়। সেই শিক্ষক আমরা।

নিজেদেরকে শেখ হাসিনার পক্ষের শক্তি দাবি করে জিনাত হুদা বলেন, সেদিন কেউ জানতো না কি হবে। জীবন বাজি রেখে সন্তানের ভবিষ্যৎ ভুলে গিয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি। জরুরি অবস্থা ভঙ্গ করেছি। দ্যাট মুভমেন্ট মেড দ্যা হিস্ট্রি। সেদিনও আমরা ভয় পাইনি আজও ভয় পাবো না। আমরা সেই দুঃসময়ের পরীক্ষিত শক্তি। আমাদের সেই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে আজকের প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন।

আমরা সেই পরীক্ষিত শক্তি, যারা ২০১৩-১৪, ১৫ সালে যখন পেট্রোল বোমায় দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল সেই কঠিন সময়েও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে দিনে তিন চারটা টকশো করেছি। আজ আমাদের বিরুদ্ধে আপনারা দাঁড়িয়েছেন! আমাদের বেতন কাটছেন! কত ক্ষমতাবান! ক্ষমতাবানদের আমাদের দেখা আছে। আমাদের এই আন্দোলন চলছে চলবে। মানবিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সেবার জন্য যারা নিয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছেন। সুতরাং যারা প্রত্যয় নিয়ে খেলা করছেন, প্রত্যয় চলবে না। আমরা প্রত্যয়ে থাকবো না।

যারা ষড়যন্ত্র করছেন তাদের এই দেশ নিয়ে কোন দায়বদ্ধতা নেই। বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনাদের কারো ছেলে মেয়েরা এই বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেনা। আমরা স্ট্যাটিস্টিকস দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছি প্রত্যয় একটি শুভংকরের ফাঁকি। প্রত্যয় স্ক্রিমে আমরা কেবল শূন্য সুবিধা পাব।

শিক্ষকদের তিন দফা দাবি তুলে ধরে অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, যারা ষড়যন্ত্র করছেন তারা এই দেশকে ভালোবাসেন না, দেশের প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই, অবসরের ১ মাস আগে ফাইভ স্টার হোটেলে থেকে বিজনেস ক্লাসে বিদেশ যাত্রা করেন তারা। আমরা স্পষ্ট করে বলছি আমাদেরকে ২০১৫ সালের প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে নিয়ে যান, প্রত্যয় স্কিম বাতিল করেন, আমাদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো তৈরি করুন। ###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক
সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার
সারা দেশে কমবে রাতের তাপমাত্রা,জানালো আবহাওয়া অধিদপ্তর
অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেলেন মামুন
সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
আরও

আরও পড়ুন

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা

বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ

বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ

বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান

বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান

গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২

গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২

ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক

ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক

পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ

পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ

আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ

আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ

সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!

সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!

গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ

গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ

গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম

গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম

সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা

সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা

গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের

গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের

বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক

বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক

লক্ষ্মীপুরে ড্রামট্রাকের চাপায় প্রাণ গেল দুই অটোরিকশা যাত্রীর

লক্ষ্মীপুরে ড্রামট্রাকের চাপায় প্রাণ গেল দুই অটোরিকশা যাত্রীর

মানিকগঞ্জে পদ্মায় বড়শিতে ধরা পরল ৯ কেজি ওজনের বোয়াল

মানিকগঞ্জে পদ্মায় বড়শিতে ধরা পরল ৯ কেজি ওজনের বোয়াল

রাজশাহী নার্সিং কলেজের ১৪ শিক্ষার্থী ফেল করে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিলেন

রাজশাহী নার্সিং কলেজের ১৪ শিক্ষার্থী ফেল করে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিলেন

মেলানিয়া ট্রাম্প বাজারে আনলেন নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি

মেলানিয়া ট্রাম্প বাজারে আনলেন নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি

সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার

সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার

শরীয়তপুর পৌরসভার বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

শরীয়তপুর পৌরসভার বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

সাইফ ইস্যুতে মেজাজ হারালেন অভিনেতা জাকি শ্রফ

সাইফ ইস্যুতে মেজাজ হারালেন অভিনেতা জাকি শ্রফ