বাধা দিলে তীব্র হবে আন্দোলন
০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বল প্রয়োগ বা ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে তীব্র হয়ে উঠবে আন্দোলন। তাছাড়া বিষয়টির যৌক্তিক সমাধান না করা গেলে এবং ছাত্রলীগ বাধা দিলে আন্দোলন আরও ছড়িয়ে তীব্র আকার ধারণ করে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যা সরকারকে বড় সমস্যায় ফেলবে। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কোনভাবেই সঠিক হবে না এবং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে আনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে কোটা বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে বেশকিছু সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে। অত্যন্ত সর্তকতার সাথে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন পর্যবেক্ষন ও পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সারা দেশে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, কোটা বাতিলের দাবির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন থাকায় বিষয়টির যৌক্তিক সমাধান না করা গেলে এ আন্দোলন সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়বে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চলাকালে রাস্তা অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা চালাতে পারেন। বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠনসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে নাশকতা ঘটাতে পারে। তার দায় সরকারের ওপর চাপানোর চেষ্টা করতে পারে। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা-কর্মীদৈর সমন্বয়ে গঠিত স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি’ এর আহ্বায়ক আখতার হোসেন, সদস্য সচিব নাহিদ ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ সজিব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে বাধা দিতে পারেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটলে অতীতের মতো দায় ছাত্রলীগের ওপর চাপিয়ে সারা দেশে কোটা বাতিলের আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। প্রতিবেদনে ১১টি সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, আন্দোলন চলাকালে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মন্তব্য করার ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে।
এর বাইরে আন্দোলন চলাকালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যাতে মুখোমুখি অবস্থানে না যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার তাগিদ দেয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন এই ইস্যুতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় সভা করেন। এই সভায় ডিএমপির পক্ষ থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে ৭টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেগুলো হলো-আন্দোলনের নামে কেউ সড়কে অরাজকতা সৃষ্টি করে ও আইন হাতে তুলে নিলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে, এই আন্দোলনে যাতে কেউ সরকারবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে না পারে সেই বিষয়টি কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে না করতে পারে সেই দিকে খেলাল রাখা ও মনিটরিং বাড়ানো, ২০১৮ সালে যারা কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তাদের অবস্থান নির্ণয় করা, মোবাইল ট্র্যাকিং বাড়ানো ও আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, অতীতের দিকে নজর দিয়ে চলমান কোটা আন্দোলনের বিষয়ে আমরা পরিস্থিতি নজরে রেখেছি। আইন ভঙ্গ করলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে বড় আন্দোলন হয়েছিল। সেই সময় ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয়েছিল। অতীতের বিষয়টি মাথায় রেখেছে পুলিশ। গত এক সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে কোটা বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আবারও মাঠে নেমেছেন।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা এই কোটার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। এই সব তরুণ নেতৃত্বের গ্রামের বাড়িতেও তার পরিবারের সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত সেই বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ বাধা দিতে পারে এতে উভয়পক্ষে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এতে অতীতের মতো দায়ভার ছাত্রলীগের ওপর চাপিয়ে কোটা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। প্রতিবেদনে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সন্নিহিত এলাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা, সরকারবিরোধী চক্র ও স্বার্থান্বেষী মহল যাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে সতর্কতা বাড়ানো, আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীসহ সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন বিশেষ করে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাম ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের গতিবিধির প্রতি নজরদারি, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে আন্দোলনে মুখোমুখি অবস্থানে না যায় সে ব্যাপারে সতর্কতা বাড়ানো, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থান নিশ্চিত করা এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনায় না জড়ানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করা, সড়ক-মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের যেকোনো ধরনের কর্মসূচি পালন রোধ এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ফোর্স মোতায়েন, মোতায়েনকৃত ফোর্সের যথাযথ ব্রিফিং এবং যেকোনো ধরনের উস্কানিতেও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ রোধে নজরদারি বাড়ানো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব রোধে সাইবার প্যাট্রোলিং জোরদার এবং সব গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত নজরদারি বাড়ানো।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা
বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ
বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান
গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২
ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক
পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ
আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ
সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!
গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ
গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম
সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা
গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের
বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক
লক্ষ্মীপুরে ড্রামট্রাকের চাপায় প্রাণ গেল দুই অটোরিকশা যাত্রীর
মানিকগঞ্জে পদ্মায় বড়শিতে ধরা পরল ৯ কেজি ওজনের বোয়াল
রাজশাহী নার্সিং কলেজের ১৪ শিক্ষার্থী ফেল করে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিলেন
মেলানিয়া ট্রাম্প বাজারে আনলেন নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি
সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার
শরীয়তপুর পৌরসভার বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা
সাইফ ইস্যুতে মেজাজ হারালেন অভিনেতা জাকি শ্রফ