শাহবাগ যেন জনসমুদ্র
১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ‘বাংলা ব্লকেড’ এর চতুর্থদিন অবরোধে উত্তাল হয়ে উঠে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙ্গে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড়ের দখল নিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বক্ষমতা জানান দিয়েছে। সড়কে পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে প্রথমে রাজধানী শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
রাজপথে অবস্থান নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দেন। শাহবাগ থেকে অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের শ্রোত বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। শাহবাগ কার্যত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এ সময় কিছু শিক্ষার্থীকে পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপর উঠে উল্লাস করতে দেখা যায়। কোটা বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে আসা ছাত্রলীগ নেতাদের অনতিদূরে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাজধানী ঢাকার মতোই সারাদেশে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কুমিলায় ঢাকা টু চট্টগ্রাম মহাসড়কে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের একপর্যায়ে আইন শৃংখলা বাহিনী ফাঁকা গুলি ছোড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙ্গে ঢাকা- মানিকগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে। চট্টগ্রামে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান গ্রহণ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশের লাািঠ সার্জে ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশী ব্যারিকেট ভেঙ্গে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির মধ্যে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নগরীর জিরোপয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। ময়মনসিংহে ট্রেন অবরোধ করা হয়। রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। অতপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্তীরা ফার্মগেইট-মিরপুর সড়ক অবরোধ করে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার রাহাদ উদ্দিন জানায়, সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় নিয়ে কোটাকে ন্যূনতম ৫ শতাংশে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতিকে সংস্কার করার দাবিতে দেশব্যাপী ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় আগে থেকে সতর্ক অবস্থানে থাকা পুলিশের ব্যাডিকেড ভেঙে পুরো শাহবাগ এলাকা নিজেদের দখলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বিকাল ৪টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেয় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অতিক্রম করে বিকাল ৫টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় আগে থেকে এই এলাকায় পুলিশের বড় একটি ইউনিট জল কামান, সাঁজোয়া গাড়ির বহর নিয়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল। শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ চত্বর, শাহবাগ মেট্রো স্টেশনের নিচ ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত পুরো এলাকা নিজেদের দখলে নেয়। এসময় পুলিশ কোনো আক্রমণ করেনি। ব্যারিকেড ভাঙার পর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা পেছনে সরে যায় এবং ছাত্ররা পুরো শাহবাগ এলাকা নিজেদের দখলে নেন।
অবরোধ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ছাত্র সমাজের অ্যাকশন’, ‘হুমকি দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’, ‘বাধা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘বুলেট দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘বাধা দিলে বাধবে লড়াই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দিব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিব না’ ইত্যাদি সেøাগান দিতে দেখা যায়। এসময় বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির এক সাংবাদিককে ধাওয়া দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে পুরো ঢাকা শহরে অবরোধ কর্মসূচির কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে শিক্ষার্থীরা বিকাল ৪টা থেকে জমায়েত হয়। তবে পুরো ঢাকা শহরে অবরোধ না করে শুধু শাহবাগ চত্বরেই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করতে গেলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। পরে শিক্ষার্থীরা দলে দলে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দিয়ে ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অতিক্রম করে শাহবাগ চত্বরে গিয়ে মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ব্যাপক উপস্থিতি ও পুলিশ কমিশনারের হুমকিতে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করেছিল কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের মাঝে। কিন্তু এসব বাধা-বিপত্তি জয় করে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাসান রাকিব জানান, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের এক দফা দাবিতে নবম দিনের মতো ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। অবরোধের শুরুতে পুলিশের বাঁধার এবং ব্যারিকেডের মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। তবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।
মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গেলে প্রক্টরিয়াল টিমের বাঁধার মুখে পড়ে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান ফটক পার হলে পুলিশ বাঁধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে বাগবিত-ার পর শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় প্রধান ফটক এলাকায় অন্তত পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য অবস্থান করতে দেখা যায়। অবরোধের ফলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ কর্মসূচি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত চলে।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একদফা দাবি হলো, সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে নূন্যতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা।
এদিকে অবরোধে পুলিশি বাঁধার খবর শুনে হল থেকে আরো শিক্ষার্থীরা ঢাকা আরিচা মহাসড়কে জড়ো হন। এতে শিক্ষার্থীরা উজ্জীবিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। অবরোধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, ‘আমরা সব ধরনের অন্যায্য কোটা বাতিল করে এটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছি। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পুলিশ আমাদেরকে বাঁধা দিয়েছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, হামলা-মামলা করে পুলিশ দিয়ে আমাদের আন্দোলন দমানো যাবে না।’
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘এই মহাসড়ক অবরোধ করলে অসুস্থ মানুষ, রোগী ছাড়াও উত্তরবঙ্গগামী মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হয়। এসব ভোগান্তি এড়াতে মহাসড়ক অবরোধ না করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ করেছি। রাস্তা অবরোধ করে আমাদের জনগণ ও যানবাহনের যে ক্ষতি হয়, সেটি দেশের সামগ্রিকভাবে ক্ষতি হয়। ছাত্র ভাইদের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা ধৈর্য ধরে আদালতের দেওয়া একটি মাস অপেক্ষা করুন, রায় নিশ্চয়ই আপনাদের পক্ষে আসবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আকিজ মাহমুদ জানান, কোটা সংস্কারের এক দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচিতে বাঁধাদান ও দফায় দফায় লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে অন্তত ৪ জন আহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে মিছিল নিয়ে প্রবেশের সময় বাঁধার সম্মুখীন হয় তারা।
বাঁধা দেওয়ার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা বাঁধা উপেক্ষা করে করে রাস্তা অবরোধ করে নগরীর টাইগারপাস মোড় থেকে ২ নম্বর রেল গেইট এলাকার দিকে মিছিল নিয়ে বের হলে আরেক দফায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে অন্তত চারজন আহত হয় বলে জানান আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘বিষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোল’ এর অন্যতম সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফিও এতে আহত হন। পরে আহতদের বিভিন্ন মেডিকেল ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
চবি ‘বিষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোল’ এর সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, আজ পুলিশ আমাদের যৌক্তিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেওয়া ভাইদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের ওপর যত হামলাই হোক না কেন আমরা আন্দোলন ছাড়বো না। দাবি মানা না হলে আমরা আরো তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো। তবে লাঠিচার্জের বিষয়টি অস্বীকার করে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর কোনো লাঠিচার্জ করা হয়নি। তাদেরকে আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আটকানো হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী আহত হয়নি।
পুলিশের লাঠিচার্জ পরবর্তী শিক্ষার্থীরা শহরের ২ নম্বর গেইট অবরোধ করে অবস্থান নেয়, এতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর সমাগম ঘটে। এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে পুলিশের লাটিচার্জের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে মূল ক্যাম্পাস অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইট অবরোধ করে। এতে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি রাস্তাটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাবিবুর রহমান জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে পুলিশ। এতে একাধিক গণমাধ্যমকর্মীসহ গুরুতর আহত অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আনসার ক্যাম্পের সামনে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার উদ্দেশ্যে বের হলে পুলিশের বাঁধায় এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশ ও ডিবির প্রায় শতাধিক সদস্য শিক্ষার্থীদের বাঁধা দিতে গেলে প্রথমে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর আবাসিক হল ও মেসের প্রায় সাত-আটশ শিক্ষার্থী এসে যুক্ত হয়ে পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে। এরপর শর্টগান দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলির পাশাপাশি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। যা কিছুক্ষণপর তুমুল সংঘর্ষে রুপ নেয়। এসময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ করে ইট ও পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পরবর্তী পুলিশের আঘাতে আমাদের সময়ের সংবাদদাতা অনন মজুমদার, দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা মানছুর আলম অন্তরসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরে তাদের অ্যাম্বুলেন্স যোগে কুমিল্লা মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে মহাসড়কে এসে জড়ো হয়। তারা ধিক্কার ধিক্কার প্রশাসন ধিক্কার, প্রক্টরের চামড়া তুলে নিব আমরা, আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাইসহ নানা স্লোগান দিয়ে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান।
এবিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ সার্কেলের অতিরিক্ত এএসপি এমরানুল হক মারুফ বলেন, প্রতিদিন এভাবে রাস্তা ব্লক করে রাখা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা আজ শিক্ষার্থীদের বাঁধা দিতে আমরা এখানে এসেছি। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্খিত। এবিষয়ে আমরা পরে ব্যবস্থা নিবো।
কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আমরা কথা বলবো বলে এড়িয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ভারপ্রাপ্ত কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, পুলিশের যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলবো। এখানে আমার কোন ইন্দন নেই।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় থেকে শাহজালাল ইসলাম তুহিন জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাবি) শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে একটি ট্রেন আন্দোলনের স্থান থেকে এক কিলোমিটার দূরে অপেক্ষমান। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজার সংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এসময় ‘আমার ভাইয়ের রক্ত কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই, মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’ এমনসব স্লোগানে মুখর করে তুলেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে আমার ভাইদের উপর গুলিয়ে চালিয়েছে পুলিশ। এরই প্রতিবাদে আজ বিকেলে আমরা ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ করেছি। ছাত্র থেকেই আপনারা পুলিশ হয়েছেন। কিভাবে আমাদের উপর আপনার গুলি চালান? আন্দোলনে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের পর তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. মোস্তফা মিয়া। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ফরহাদ হোসেন খান ও নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনে অংশ নেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোস্তফা। বিষয়টি ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদকে জানান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। পরে ফরহাদ ভুক্তভোগীকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। তাতে শঙ্কিত হয়ে মোস্তফা বিষয়টি তার বিভাগের সিনিয়র আরিফ মাহমুদকে জানান।
পরে গত মঙ্গলবার আরিফের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মু. শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে দেখা করেন তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরিফের বন্ধু ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজা। এরপর তাকে (শামীম) বিস্তারিত বললে তিনি ফরহাদকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘শিবির ধরছি, নিয়ে আসব নাকি?’ পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান তারা। কক্ষটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর।
ওই কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে মোস্তফা মিয়ার ফোন চেক করতে শুরু করেন মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। তবে তার ফোন চেক করে শিবিরের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া পায়নি। কিন্তু ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেখে প্রচ- রেগে যান ছাত্রলীগ সভাপতি। একই সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার কারণে তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এ সময় তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘তুই শিবির করিস, স্বীকার কর।’
তারা কিছু সময় বিরতি দিয়ে দিয়ে মোস্তফাকে মারতে থাকেন। মার খেয়ে শামীম রেজাকে জড়িয়ে ধরলে তিনি ধাক্কা দিয়ে বাবুর কাছে পাঠিয়ে দেন। এ সময় বাবু তাকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ফারহাদ তাকে লাথি-ঘুষি মারতে শুরু করলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাকি কয়েকজনও মারতে থাকেন। ৮ থেকে ১০ মিনিট মেরে কিছু সময় বিরতি নিয়ে আবার মারধর শুরু করেন। এভাবে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাকে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতারা।
মারধর চলাকালে ছাত্রলীগ নেতা ফারহাদ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কানে কানে বলেন, ‘তুই শিবির করিস, এটা স্বীকার কর, তাহলে ছেড়ে দিব। আর তোর ডিপার্টমেন্টে কে কে শিবির করে এটা বল ছেড়ে দিব। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। পরে ছাত্রলীগ নেতারা তাকে হল ছাড়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই আজই হল ছেড়ে দিবি।’ পরে তার সঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতির এক অনুসারী পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের গণরুম থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। হল থেকে নামিয়ে দিলে আমি আবাসন সঙ্কটে পড়ে যাই। বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে এসেছি। বর্তমানে আমি বাড়িতে আছি।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন খান বলেন, ‘মোস্তফা মিয়া নামের কোনো শিক্ষার্থীকে আমি চিনি না। এমনকি অতীতেও তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়নি। এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই।’
অভিযোগের বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। কিছুক্ষণ আগেই শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তারপর বলতে পারব।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর হয়ে তিনজন আমাকে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনজন সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
স্টাফ রিপোর্টার, লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচির পালন করে শিক্ষার্থীরা।
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। প্রায় এক ঘণ্টা এই অবরোধ চলে। এতে দুইপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের অনুরোধে ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সামনে জড়ো হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ক্যাম্পাসেই বিক্ষোভ করেন তারা। পরে শিক্ষার্থীরা পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
বরিশাল : সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সারা দেশের সঙ্গে একযোগে কর্মসূচি পালন করে আসছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবস্থান নিতে শুরু করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে জমায়েত হতে শুরু করেন। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মূল ফটক দিয়ে বের হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এসময় পুলিশ তাদের বাঁধা প্রদান করলেও পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক বন্ধ করে অবরোধ শুরু করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া শ্লোগান দিলে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ক্যাম্পাসের সামনের মহাসড়ক ত্যাগ করে। ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন, প্রশাসন জবাব চাই, মেধা না কোটাসহ নানা শ্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না। আমরা রক্ত দেব। তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছু হবোনা।’ মহাসড়ক অবরোধের ফলে উভয়প্রান্তে যানবাহন আটকে পরে। ফলে সাধারণ যাত্রীদের গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। আর পণ্যবাহী গাড়িগুলো সড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
সিলেট : সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করতে যাওয়ার পথে পুলিশের বাঁধার মুখে পড়েন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বাঁধা উপেক্ষা করে মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়ক অবরোধ করতে শিক্ষার্থীদের বাঁধা দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বাঁধা দেওয়ার সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। এতে ১৫ থেকে ২০ জন আহত হন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
আন্দোলনকারী কয়েকজন জানান, বেলা তিনটা থেকে তাদের কর্মসূচি শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড নিয়ে গোলচত্বরে জড়ো হন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকের দিকে যান। এরপর পুলিশ বাঁধা দিলে বাঁধা ঠেলে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। পৌনে এক ঘণ্টা অবরোধের পর বিকেলে সোয়া পাঁচটার দিকে তারা মহাসড়ক ছেড়ে দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে প্রধান ফটকে আসি। এ সময় পুলিশ বাঁধা দেয়। পুলিশের লাঠিপেটা করে আমাদের ১৫ থেকে ২০ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে আহত করেন। তবে কেউ গুরুতর আহত হননি। আমরা বাঁধা উপেক্ষা করে সড়ক অবরোধ করি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সড়কে যানজট হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। তারা ছাত্রনেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলনকারীদের সড়ক অবরোধ ছেড়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, কোনো বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এড়াতে প্রক্টরিয়াল বডি সড়কে ছিল। শিক্ষার্থীরা কিছুক্ষণ আন্দোলন করে চলে গেছেন। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।
ক্যাম্পাসে ক্যাম্পসে বিক্ষোভ-সমাবেশ আজ : কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে। আজ শুক্রবার সারাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এই কর্মসূচি পালন করবে তারা। টানা চার দিন বাংলা ব্লকেড পালনের পর নতুন এ কর্মসূচি এলো। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি জানান, এক দফা দাবি বাস্তবায়ন, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও বাধা প্রদানের প্রতিবাদ এবং বাধাদানকারীদের বিচারের দাবিতে শুক্রবার বিকাল ৪টায় সারাদেশের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের প্রথম মহিলা নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক
মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন
ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!
মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম
যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল
দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত
টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি
বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
মার্কিন মুলুকে নিষিদ্ধ টিকটক, আমেরিকা প্লাটফর্মটি প্রত্যাশা করেঃ মি.বিষ্ট
আমাদের রক্ত ঝরবে, কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ইনকিলাবে রিপোর্টের পর সরিয়ে দেয়া হলো তিন কর্মকর্তাকে
জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবে তারা সংস্কার শেষ করবে : মির্জা ফখরুল
ঘাটতি পূরণে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে: কবির উদ্দিন
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ডিবিসিসিআই’র নতুন সভাপতি মামুন, সেক্রেটারি রিসালাত
হামাস বন্দি তালিকা না দিলে যুদ্ধবিরতি স্থগিত : নেতানিয়াহু
কুলাউড়ায় পাওনা টাকা চাওয়ায় নারীকে পিটিয়ে হত্যা, আটক-১
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরের '৯ম কর্ণেল কমান্ড্যান্ট' অভিষেক অনুষ্ঠিত
দ. কোরিয়ায় ইয়ুনের আটক বাড়ানোর পর আদালতে হামলা ও বিক্ষোভ
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে ট্রাম্প