রাশেদ খান মেনন ও দিলীপ বড়ুয়ার গণবিরোধী ভূমিকায় ধিক্কার সাবেক ছাত্র নেতাদের
০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৬ এএম
রাশেদ খান মেনন ও দিলীপ বড়ুয়া এক সময় সংগ্রামী মানুষের পক্ষে কন্ঠ সোচ্চার করতেন। কিন্তু আমরা সাম্প্রতিককালে অবাক হয়ে দেখছি তারা তাদের সেই অতীত রাজনীতি থেকে একশ’ আশি ডিগ্রি বিপরীত অবস্থান নিয়ে গণবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের পথ ত্যাগ করে পুঁজিবাদের উচ্ছিষ্ট ভোগে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। নিপীড়িত নির্যাতিত অসহায় মানুষের পক্ষে না দাঁড়িয়ে নিপীড়ক স্বৈরাচারের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। বাংলাদেশে চলমান ছাত্র গণহত্যার সহযোগী মুখোসধারী বামপন্থি এই নেতাদের ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়েছে তাদের সাবেক অনুসারী ছাত্র নেতারা। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ নিন্দা জানান।
বিবৃতিতে সাবেক অনুসারী ছাত্র নেতারা বলেন, রাশেদ খান মেনন ও দিলীপ বড়ুয়ার রাজনীতির শুরু ও প্রতিষ্ঠা ১৯৬০-এর দশকে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে। তারা উভয়ে তখন প্রগতিশীল ধারার ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের ঝান্ডার তলে সমবেত হয়ে পরে নেতা হয়েছিলেন। পরবর্তীতে সংগঠনটি দুই ভাগে ভাগ হলে রাশেদ খান মেনন একাংশের নেতা হন। সে সময় সংগঠনটির রাজনীতি ছিল মেহনতী মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে শোষনমুক্ত বৈষম্যহীন দেশ প্রতিষ্ঠা করা। এই ছাত্র সংগঠনটির অতীত ঐতিহ্য হচ্ছেÑ ১৯৬২ সালের গণবিরোধী শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে তদানীন্তন পাকিস্তানের সকল ছাত্র ও গণআন্দোলনে গৌরবোজ্জল ভূমিকা পালন। এই সংগঠনের অনেক নেতা কর্মী পাকিস্তান আমলে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে জীবন দিয়েছেন, কারাভোগ করেছেন, নজির বিহীন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এভাবেই নেতা কর্মীদের আত্মত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত এর রাজনীতি।
১৯৬৮ সালে তিন ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে যে এগারো দফা ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে এরও অন্যতম রূপকার এই ছাত্র সংগঠন। ছাত্রদের ঐ এগারো দফা আন্দোলন শ্রমিক-কৃষকের আন্দোলনের সাথে একাকার হয়ে সৃষ্টি হয় ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছিল এই সংগঠনের ত্যাগী নেতা আসাদুজ্জামানের শহীদ হওয়ার মধ্য দিয়ে। কিশোর স্কুল ছাত্র মতিউরসহ আরো অনেকের রক্ত ঝরেছে সেই অভ্যুত্থানে পরে। আর তাতে এশিয়ার লৌহ মানব বলে খ্যাত স্বৈরাচারী আইয়ুব খানকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়।
এমন সংগ্রামী ঐতিহ্য রয়েছে যে ছাত্র সংগঠনের রাজনীতির, এর বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ধাপে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছি। সংগঠনটির এক সময়কার নেতা ছিলেন রাশেদ খান মেনন। আজকের দিলীপ বড়ুয়াও এতে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এই দু’জনের জীবনে যেটুকু কৃতীত্ব ও পরিচিতি, তা তৎকালীন ছাত্র আন্দোলনের সুবাদে। তারা তখন সংগ্রামী মানুষের পক্ষে কন্ঠ সোচ্চার করতেন। কিন্তু আমরা সাম্প্রতিককালে অবাক হয়ে দেখছি তারা তাদের সেই অতীত রাজনীতি থেকে একশ’ আশি ডিগ্রি বিপরীত অবস্থান নিয়ে গণবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের পথ ত্যাগ করে পুঁজিবাদের উচ্ছিষ্ট ভোগে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। নিপীড়িত নির্যাতিত অসহায় মানুষের পক্ষে না দাঁড়িয়ে নিপীড়ক স্বৈরাচারের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের সময়ে তারা সরকারের দোসর হিসেবে বিপক্ষে প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী এই আন্দোলনে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর গুলিতে ২৬৬ জন নিহত হয়েছেন। কোনো আন্দোলন সংগ্রামে এদেশে এত মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি কখনো। কী আশ্চর্য! তারা ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের পাশে না দাঁড়িয়ে ন্যাক্কারজনকভাবে ফ্যাসিস্ট হত্যাকারীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন। হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নের সাফাই গাইছেন।
তাদের এই ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধকালের হানাদার বাহিনীর দোসরদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাদের। এখন তারা সেই একইরকম ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আমরা তাদের রূপান্তরকে নিদারুন রাজনৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতন হিসেবে দেখছি। এই অবস্থায় তারা যে এক সময় আমাদের আদর্শিক রাজনৈতিক নেতা ছিলেন তা মনে করে চরম ঘৃনাবোধ করছি। আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি। এখনও যারা তাদের দল করেন তাদের প্রতি আমাদের আহ্বানÑ অবিলম্বে অসংখ্য ছাত্রের রক্তে হাত রাঙানো খুনি জান্তার পদলেহি এই দোসরদের ত্যাগ করুন। এরা আদর্শহীন, অধঃপতিত গণবিরোধী। দেশবাসীর কাছে এদের ভণ্ড চেহারা একযোগে তুলে ধরুন।
সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ও বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন সময়ের ছাত্রনেতাগণের পক্ষে যারা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন, সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ, ইমেরিটাস অধ্যাপক এ টি এম নূরুল আমিন, ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ,. ড. সৈয়দ জহির সাদেক, ড. নাজমা শিখা, মনজুর আহমেদ, দেওয়ান শামসুল আরেফিন, লুৎফর রহমান হেলাল, হামিদ রেজা খান, সৈয়দ সফিক উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ারুল কাদের বাকী, মোজাম্মেল হক, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, শামসুজ্জামান মিলন, আলী ইমাম শিকদার, কামরুল হুদা, খন্দকার নাজিম উদ্দিন, খন্দকার ফরহাদ, মোহাম্মদ হোসেন খান, এডভোকেট ওয়াহিদুর রহমান, অধ্যক্ষ মাকসুদুর রহমান খান, সিরাজ উদ্দিন সাথী, মোহাম্মদ তমিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ রমিজ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর চৌধুরী, ফালান সাহা, শহীদুল আমিন চৌধুরী, জামাল হোসেন ভুইয়া, মোহাম্মদ ঈসমাইল, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, কামাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, ফরিদ মাজহার, সমীর চন্দ্র কর, আলাউদ্দিন আহমেদ, খোরশেদ হোসেন, এডভোকেট মুজিবুর রহমান, কাজী মোহাম্মদ নজরুল, সিরাজ উদ্দিন সাথী প্রমুখ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
"তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না" : মালালা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট
মোবাইল ইন্টারনেটে সুখবর ‘শর্ত শিথিল’, থাকছে ১ ঘণ্টার প্যাকেজও
গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন
বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে
এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন
বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়
আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি
মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ
বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি
রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা
না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা
এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২
ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ
ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু