কিশোর নিহত হওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন যেকোনো সময় -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৭ এএম

যেকোনো সময় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিসকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এটি এখনও প্রক্রিয়াধীন। যেকোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। প্রজ্ঞাপন জারি হবে যেকোনো মুহূর্তে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি এখনও ফাইল পাইনি। আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা সকালে একটা মিটিং করেছি। দুপুরে একটা মিটিং করেছি। আমাদের মিটিং ছিল ১৫ আগস্ট জাতির পিতার ৪৯তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গেও জামায়াতকে নিষিদ্ধসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির আগেই নিষিদ্ধ ছিল। এদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকগুলো এবং সুশীল লোকগুলো জামায়াতকে নিষিদ্ধের কথা বলে আসছেন। এটা সাধারণ মানুষের দাবি ছিল। এ নিয়ে ১৪ দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে তারাও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের পরামর্শ দিয়েছিলেন। জামায়াত-শিবির চলমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে জামায়াত-শিবির-বিএনপি ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতেই নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে নতুন করে দেশে অশান্তি হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবিরই তো এই অবস্থা তৈরি করে রেখেছে। এই অবস্থা তৈরি করার পেছনে তাদের যথেষ্ট যোগসাজশ রয়েছে। কোটা আন্দোলনের সবকিছু মেনে নেওয়ার পরেও আন্দোলন থামছে না, সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। পরামর্শদাতারা পরামর্শ না দিলে ছাত্ররা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটাতো না। এই যে এত মানুষ হতাহত হয়েছে, সবই কী পুলিশের গুলিতে হয়েছে? আমরাও প্রকাশ করব, কার গুলিতে কতজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে। সবই আমরা প্রকাশ করব। এসব কিছু ছাত্ররা করেনি। ছাত্রদের পেছন থেকে জামায়াত-বিএনপি ও অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোও সম্পৃক্ত ছিল বলে আমরা জেনেছি বলেন মন্ত্রী।

তিনি জানান, যে কারণে অনেকদিন ধরে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি ছিল, সেটার বাস্তাবয়নের প্রক্রিয়া চলছে। এই পরিস্থিতির অবনতির জন্য যারা রয়েছেন, তাদেরও আইনের সামনে আনার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। যারা এগুলো করছেন, জনগণকে সে সম্পর্কে জানাতে হবে। জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে আছে, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যখন জামায়াত-শিবির আগেই নিষিদ্ধ ছিল। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলো এবং সুশীল সমাজও জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বলে এসেছে। এটা জনগণেরও দাবি।

আজকের মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হবে কি না; প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেক কিছু হতে পারে, তবে এখনো আমি বলবো এটা প্রক্রিয়াধীন। সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ অনুচ্ছেদে এমন একটি সুযোগ রয়েছে। কাজ চলছে, যে কোনো সময় সিদ্ধান্ত এলে আমরা ঘোষণা দেবো। মঙ্গলবার থেকেই জেনে আসছিলাম, বুধবারের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসবে, প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনারা যদি সবকিছু এখনই জানতে চান, আমি তাহলে জানাতে পারবো। প্রক্রিয়া শেষ হলেই আমরা জানাতে পারবো।

কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ঘটনায় পেছন থেকে পরামর্শ না দিলে এতো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটতো না জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সব হতাহতই কী পুলিশের গুলিতে হয়েছে? আমরাও প্রকাশ করবো কার গুলিতে কতজন হতাহত হয়েছে।
কিশোর নিহত হওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ: চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুয়েকজন কিশোর নিহত হওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিসকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা জিজ্ঞাসা করেছেন আর কতদিনের মধ্যে অবস্থা স্বাভাবিক হবে। আমরা বলেছি, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। অল্পসময়ের মধ্যেই আমরা কাভার করতে পারবো। কারফিউ তুলে নিতে পারবো, সামরিক বাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে।
দুয়েকজন কিশোর নিহত হওয়ার বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা একটি কিশোরের কথা জানালাম, তার বয়স কত, এখনো সার্টিফিকেট পাইনি, স্কুল থেকে বলা হয়েছে সাড়ে সতেরো। কিন্তু সেই ছেলেটি যে অন্যায় করেছে, সেটা জঘন্য।

যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সে জড়িত ছিল। তার ভিডিও অন্যান্য যে কথোপকথন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেই আমরা তাকে শনাক্ত করতে পেরেছি। সে তো পুলিশ হত্যা করেছেই, পরে তাকে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে। এই কাজ শেষ করে সে যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত, তাকে ফোন করে জানিয়েছে যে পুলিশ হত্যা করতে পেরেছি, তাকে ঝুলিয়ে দিয়েছি। অপরপ্রান্ত থেকে তাকে সাবাশ দেওয়া হয়েছে।

এই কিশোরকে আমরা কোথায় নেব, তার কাছেই প্রশ্ন রেখেছি। তাকে কিশোর সংশোধনাগারে রাখা হয়েছে, আইন অনুসারে তার ব্যবস্থা হচ্ছে। আর প্রাণহানির বিষয়ে বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তাদের দেখতে গিয়েছেন, তাদের কিছু নগদ টাকা সাহায্য করেছেন। আমরা মনে করি, এই ঘটনা পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী ইচ্ছা করে কিংবা কারও প্ররোচণায় করেনি। তারা জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। শিশু-কিশোরদের সামনে রেখে তাদের পেছনে ছিল আসল ব্যক্তিরা। তারা আগুন ধরিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। চরম ধৈর্যের সঙ্গে আমাদের পুলিশ বাহিনী তাদের মোকাবিলা করেছে।

তিনি কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি কিছু বলেননি। তিনি আরেকটি প্রশ্ন করেছেন যে সেনাবাহিনী জাতিসংঘ লেখা এপিসি ভেহিকেল ব্যবহার করেছে। আমি বলেছি, এটা জাতিসংঘ থেকে ফেরত এনেছে, সেনাবাহিনী তাড়াহুড়ো করে সেটা বের করেছে। যখন দৃশ্যমান হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যখনই তাদের নজরে এসেছে, তখনই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তদন্তের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের একজন সদস্যের একটি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন ছিল। আমরা সংখ্যা বাড়িয়ে আরও শক্তিশালী করেছি। তদন্ত শুধু তাদেরই না, পুলিশেরও তদন্ত হবে। কেন পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হলো, সেই তদন্ত হবে। কেউ ভুল করে থাকলে সেটাও আমরা দেখবো।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত  মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন

গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন

বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে

সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন

বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়

বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়

আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি

আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি

মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ

মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ

বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি

বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি

রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা

বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা

না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা

না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা

এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২

এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২

ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ

ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ

ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু

ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু

ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা

ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা

মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫

মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫

আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা