রাজধানীজুড়ে শিক্ষার্থী-আ.লীগের সংঘর্ষ ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলি
০৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:১২ এএম
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েকটি জায়গায় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা, পুলিশ ও তাদের গুলিতে অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং দুইজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তাঁর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, আনোয়ারুল ইসলাম উত্তরা এলাকায় আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচিতে ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে বেলা একটার দিকে উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকার লতিফ এম্পোরিয়াম মার্কেটে আশ্রয় নেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা গিয়ে তাঁর ওপর হামলা করেন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম আবদুল্লাহ সিদ্দিকী। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। বিকেল পৌনে চারটার দিকে আবদুল্লাহকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, তাঁকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।
আবদুল্লাহর বন্ধু পরিচয় দিয়ে জহির ইসলাম জানান, জিগাতলা এলাকায় আবদুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আবদুল্লাহ পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকার কলতা বাজারের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম আবু বকর।
কারওয়ানবাজার এলাকায় সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন রূপ নামের বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রমিজের বাড়ি রংপুরে। তাঁর বাবার নাম মো. রাহেল।
এদিকে সন্ধ্যায় আনুমানিক ২৫ বছরের এক যুবকের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন। নিহত ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে তৌহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি মহাখালীর ডিএইট কনসালট্যান্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, মৃত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। তৌহিদুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।
বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লায় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে তাঁর বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাজধানীর শাহবাগ, শনির আখড়া, নয়াবাজার, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, পল্টন, প্রেসক্লাব এবং মুন্সীগঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ১১১ জনকে এখানে আনা হয়। এর মধ্যে ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
লাশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিছিল, পুলিশের গুলি:
এক দফার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা ও গুলিতে শাহাদাত বরণকারী ৪ জন শহীদের লাশ নিয়ে গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে লাশগুলো নিয়ে প্রথমে শহীদ মিনারে যায়। পরে সেখান থেকে লাশ নিয়ে শাহবাগে মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা এক দফা ও হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থানাকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন। পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। সেখান থেকে সরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে এসময় সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেটও ছোড়া হয়। পরে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এর আগে সকাল থেকেই শাহবাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। সকাল ১১টার দিকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। তবে দুপুরের পর থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগে জমায়েত করেন। বিকেলে বাংলামোটর থেকে শাহবাগের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে লাঠিসোটা, হকিস্টিক, রামদা হাতে সরকারদলীয় সমর্থকদের দেখা যায়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে পুলিশ ও সরকারদলীয় সমর্থকরা কারওয়ানবাজার পার হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। তবে সেখানে কয়েক দফা ধাওয়া-পল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে পুলিশের গুলির মুখে আন্দোলনকারীরা আবার শাহবাগের দিকে ফিরে যায়।
মিরপুরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া: আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, গুলি, রাজধানীর মিরপুরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরের নিয়ন্ত্রণ নেয় আন্দোলনকারীরা। এর আগে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান ছিল মিরপুর গোলচত্বর এলাকায়। দুপুর ১২টার দিকে সেখানে তাঁদের সমাবেশ করতে দেখা যায়। দুপুর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল। বিক্ষোভকারীদের একটি দল কাজীপাড়ার দিক থেকে, অন্য আরেকটি দল মিরপুর-১১ নম্বরের দিকে থেকে গোলচত্বরের দিকে আসার চেষ্টা করলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকেল ৪টার দিকে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তেও দেখা গেছে। তবে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ায় খেয়ে ৪টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটে। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চলে যাওয়ার পর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন বিক্ষোভকারীরা।
সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সংঘর্ষ: রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় গতকাল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাব থেকে জিগাতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ৪১ জন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। ল্যাবএইড হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তিনজন তাজা গুলি ও বাকিরা ছররা গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন। হাসপাতালে গুলিবিদ্ধদের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা বলেছেন, জিগাতলা এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে ছররা গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। আহতদের জিগাতলা থেকেই আনা হয়।
আন্দোলনকারীদের দখলে যাত্রাবাড়ী শ্যামপুর ডেমরা ও কদমতলী থানা এলাকা, ধাওয়া খেয়ে পালালেন আ’লীগ নেতারা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, ডেমরা ও কদমতলী থানা এলাকা দখলে রেখেছে আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের শ্লোগানে মুখরিত ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, জুরাইন, ধোলাইপাড় ও নারায়ণগঞ্জের সানারপাড়। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে নেয়ার চেষ্টা করলে যাত্রাবাড়ী, কাজলা, জুরাইন রেলগেইট, পোস্তগোলা ব্রিজ, রায়েরবাগ ও সানারপড়ে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এর মধ্যে কাজলায় গণপিটুনিতে আহত এক আওয়ামী লীগ কর্মী (অজ্ঞাত ৪২) এবং পোস্তগোলায় মোটরশ্রমিক লীগের সহসভাপতি রাজুর (৪০) অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছিল হাজার হাজার আন্দোলনকারীর দখলে। এর আগের দিন শনিবার থেকেই আন্দোলনকারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দখল করে নিলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বেলা ১১টার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে ২০/২৫ জনের একদল আন্দোলনকারী পোস্তগোলা ব্রিজ অতিক্রম করে জুরাইনের দিকে আসছিল। এসময় মোটর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি রাজু তাদের উপর গুলী ছোঁড়ে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে আশপাশে থাকা আন্দোলনকারীরা ধাওয়া করে রাজুকে ধরে ফেলে। তাদের এলোপাথারী লাঠির আঘাতে মোটরশ্রমিক লীগ নেতা রাজু গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। স্থানীয়রা জানান, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
একই সময়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের একটি মিছিল দনিয়া আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজলা এলাকায় ওঠার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেয়। এসময় কামরুল হাসান রিপনের এক সহযোগীর হাতে একটা শর্ট গান ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের মিছিলে বাধা দিতে গেলে ওই শর্টগান দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলী ছোঁড়া হয়। এসময় হাজার হাজার জনতা মিছিলটিকে ধাওয়া দিলে কামরুল হাসান রিপনসহ নেতাকর্মীরা পেছনের দিকে দৌঁড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিয়ে একজনকে ধরে পিটিয়ে জখম করে। পরে তাকে স্থানীয় অনাবিল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, ৪০/৪২ বছরের আওয়ামীলীগের ওই কর্মীর অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, এই ঘটনার পর দনিয়া গোয়ালবাড়ী মোড় থেকে আওয়ামীলীগের একটি মিছিল ‘ডাইরেক্ট এ্যাকশন’- শ্লোগান দিতে দিতে শনিরআখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওঠার চেষ্টা করলে হাজার হাজার জনতা মুখে পড়ে নিজেরাই দৌঁড় দিয়ে পালিয়ে যায়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় ৪/৫ হাজার আন্দোলনকারী সমবেত হয়ে এক দফা, এক দাবি শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ নেতা হারুনুর রশীদ মুন্না, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর অনু, মাসুম মোল্লাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যাত্রাবাড়ী পুলিশ বক্সের সামনে সমবেত হওয়ার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দেয়। হাজার হাজার আন্দোলনকারীর ধাওয়া খেয়ে তারা বিচ্ছিন্নভাবে পালিয়ে যায়।
দুপুর ৩টার দিকে বিএনপি নেতা মীর হোসেন মীরুর নেতৃত্বে বিএনপির একটি মিছিল জুরাইন মন্দিরের সামনে এলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। এসময় ইট পাটকেলের আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
উত্তরায় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, ২২ জন গুলিবিদ্ধ: রাজধানী উত্তরায় গতকাল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত ২২ জন গুলিবিদ্ধ হন।
এর আগে উই ওয়ান্ট জাস্টিজ, এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি, এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা গদি ছাড়। আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না। স্বৈরাচারের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও সেøাগানে সেøাগানে উত্তরার আজমপুর বিএনএস সেন্টারের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এসময় উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা দুপুরে ১২ টায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালায়। এতে ৩ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ও কয়েকজন আহত হয়। গুলিবিদ্ধ ও আহতরা উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ভর্তি হয়েছে। ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর খবর পেয়ে সাথে সাথে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিএনএস সেন্টার থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এক সাথে আজমপুর এলাকায় গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে। এসময় উত্তরা পুর্ব থানার সামনে অবস্থানরত শতাধিক পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করেন। এসময় ছাত্ররা সাবেক এমপি হাবিব হাসান, আ.লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেন ও আনোয়ারকে ধাওয়া করে। আ.লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। এর কিছুক্ষণ পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
অসহযোগ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সাথে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উত্তরা হাউজবিল্ডিং থেকে বিএনএস সেন্টার আজমপুর ও রাজলক্ষী এলাকা দখল করে শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। দুপুরের পর থেকে উত্তরা সেক্টর এলাকায় শত শত মানুষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য পানি, বিস্কুট, কলা রুটি নিয়ে সড়কে উপস্থিত হন। এসময় গত ২০ তারিখ কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে ডেকে ডেকে পানি খাওয়াতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হওয়া মুগ্ধের মতো শতাধিক শিক্ষার্থী বিমানবন্দর মহাসড়কে পানি নিয়ে হাজির হয়েছে। এছাড়াও উত্তরা এলাকার অনেক গৃহিণী নিজ হাতে নাস্তা বানিয়ে শিক্ষার্থীদের খাইয়েছেন।
ঢাকা-আরিচা মহসড়কে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শিক্ষার্থীরা অবরোধ শুরু করেন। এ ছাড়া সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিষেবার বাহনগুলো চালু রয়েছে। এর আগে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে জড়ো হন। পরে একটি মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন।
ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর পারভীন জলী বলেন, সরকারপ্রধানের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কারো মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছে, কারো বুকে গুলি করেছে। এসব দায় স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর বিবেকের তাড়না থেকে সরে যাওয়া উচিত।
মহাসড়কে বিক্ষোভ চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আহসান লাবিব বলেন, ‘এক দফা দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। স্বৈরাচারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না। গণভবন জনগণের ভবন, স্বৈরাচারীর অবস্থান সেখানে হবে না। জনগণকে মুক্তি দিতে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছি। জনগণকে রাস্তায় নামার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
সিএমএম কোর্টের সামনে গাড়িতে আগুন: রাজধানীর পুরান ঢাকায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলার মধ্যে পুরান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
রামপুরা-বাড্ডা শিক্ষার্থীদের দখলে: এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে রাজধানীর মালিবাগ-রামপুরা-বাড্ডা এলাকা ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে। তবে সেখানে কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। গতকাল সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে জড়ো হতে থাকেন। ধীরে ধীরে ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী জড়ো হলে তারা রামপুরা ব্রিজ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, গুলশান লিংক রোড, রামপুরা বাজার, মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। একই চিত্র দেখা যায় রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ে। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
হিলিতে কমেছে আলু পেঁয়াজের দাম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ১,১০০ হতাহতের শিকার : সিউল
ঢাকা - মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ কুয়াশায় আবারো দূর্ঘটনা , নিহত ১ আহত ৪
ড্রোন হামলার জবাবে ইউক্রেনে ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ চালানোর হুমকি পুতিনের
রাহাত ফতেহ আলী খানের সম্মানে পাকিস্তান হাইকমিশনারের নৈশভোজ আয়োজন
‘চা পান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী’, স্বীকৃতি যুক্তরাষ্ট্রের
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে কাপ্তাই ভূমিকা রেখেছিলো, আগামীতেও রাখবে : ঢাবি শিবির সেক্রেটারি
মার্কিন টাইফুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অর্জনের পথে ফিলিপাইন
সুন্দরবনকেন্দ্রিক দস্যুতা বন্ধে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হচ্ছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
মায়োতে সাইক্লোন চিডোর ধ্বংসযজ্ঞে ফ্রান্সে জাতীয় শোক
সাড়ে ৪মাস পর হিলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত নাঈমের লাশ কবর থেকে উত্তোলন
কলাপাড়ায় অগ্নিকান্ডে দু'টি দোকান পুড়ে ছাই
গাছ আর জিও ব্যাগ পেয়ে খুশি খুলনার ছাদবাগানীরা
খুলনায় একাধিক মামলার আসামী সন্ত্রাসী রকি গ্রেপ্তার
টাঙ্গাইলে সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর এক বোয়াল ৫২ হাজারে বিক্রি
অচিরেই বিলুপ্ত হবে নেতানিয়াহু শাসন, হুমকি হুতি প্রধানের
এলন মাস্ক কি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন? ট্রাম্প বললেন ‘অসম্ভব’
নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিহত
এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি