র্যাবের ‘আয়নাঘর’ দরজা খুলবে কবে?
০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আলোচনায় এসেছে তার নির্যাতনের বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’। যদিও ২০২২ সালের আগস্টে নেত্র নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ‘আয়নাঘর’ শব্দটি উঠে আসে। শেখ হাসিনার রোষানলে পড়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুমের শিকার রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের গোয়েন্দা সংস্থার ‘গোপন বন্দিশালা’য় রাখা হয়। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত সেই কুঠুরিতে বছরের পর বছর মানুষকে আটকে রেখে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা আয়নাঘর থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মিডিয়ায় ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন।
গত মঙ্গলবার গোপন বন্দীশালা আয়নাঘর থেকে মুক্ত হয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। গত সোমবার মধ্যরাতে তাঁদের রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে ছেড়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে তারা পরিবারের কাছে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। দীর্ঘ ৮ বছর পর তারা মুক্ত হন। এদিকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কথিত আয়নাঘর থেকে মুক্তি পেয়েছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা। গতকাল ইউপিডিএফ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, রাষ্ট্রীয় গুমের শিকার হওয়া ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা দীর্ঘ পাঁচ বছর তিন মাস পর অবরুদ্ধদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রামের একটি স্থানে তাঁকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক অংগ্য মারমা গতকাল বলেন, মাইকেল চাকমা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। নিরাপত্তার জন্য তাঁকে বিশেষ স্থানে রাখা হয়েছে। এদিকে শুধু ডিজিএফআই এই নয়, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) এর ১৫টি ব্যাটালিয়ানের প্রতিটিতেই রয়েছে এভাবে গোপন বন্দীশালা বা আয়নাঘর। র্যাবের হেড কোয়ার্টারসহ ঢাকায় ৫টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এছাড়া বাকী ১০টি রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে অবস্থিত। এসব বন্দীশালায় বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের দীর্ঘদিন বন্দী রেখে নির্যাতন করা হতো। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে র্যাব নাশকতা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অভিযান ব্লক রেইড বা জঙ্গী অভিযান পরিচালনা করতো তখন বন্দীশালা বা আয়নাঘর থেকে বন্দীদের নিয়ে সাজাতেন এরা নাশকতা বা সহিংসতা করেছে। এছাড়া এদের জঙ্গী হামলা বা নাশকতা করার টার্গেট ছিল। আবার অনেককে এখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে ক্রসফায়ার সাজানো হতো। বিভিন্ন সময়ে র্যাবে দায়িত্ব পালন করা একাধিক কর্মকর্তা র্যাবের এই আয়নঘরের তথ্য জানিয়েছেন। তাদের মতে, র্যাবের এই আয়না ঘরেও নিরাপরাধ ও গুমের শিকার অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি রয়েছেন।
২০২২ সালের আগেস্ট ‘আয়নাঘর’ শব্দটি নেত্র নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি জাতির সামনে আসে। রাষ্ট্রীয়ভাবে গুমের শিকার রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদরদপ্তরের একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত সেই কুঠুরিতে বছরের পর বছর মানুষকে আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর সেই আয়নাঘরের সামনে গত মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ করেছেন গুম হওয়াদের স্বজনেরা। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কচুক্ষেতে ডিজিএফআই সদর দপ্তরের সামনে ‘মায়ের ডাক’-এর ব্যানারে অন্তত ২৩ গুম হওয়া ব্যক্তির অর্ধশত স্বজন মানববন্ধন করেন। এ সময় তাদের হাতে গুম হওয়া মানুষের ছবি ছিল। তারা ডিজিএফআই সদরদপ্তরে প্রবেশ করে স্বজনদের দেখতে চান, তবে তাঁদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আয়নাঘর থেকে মুক্তি পাওয়া একজন জানিয়েছেন, এখনো অনেক মানুষ আয়নাঘরে আটক রয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সদ্য পলায়ন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরুদ্ধ মত সহ্য করতে পারছিলেন না। আর সেই কারণে রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য তৈরি করেছিলেন আয়না ঘর। যা ছিল রাজনৈতিক বন্দিদের কাছে ত্রাস বা বিভীষিকাময়। হাসিনার তৈরি বিরুদ্ধ রাজনৈতিক কর্মীদের গুমঘর। প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধ করার একটি উপায়। সারাদেশে ডিজিএফআই’র ২৩টি গোপন আটক কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি রয়েছে ঢাকায়। ২০২৪ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার বছর, ২০০৯ সাল থেকে তার পতন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬০০টিরও বেশি গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী আয়নাঘর থেকে খুব কম বন্দি মুক্তি পেয়েছে। তবে কিছু বন্দিকে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়। অনেকেই আবার এনকাউন্টারের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে এজাতীয় ঘটনার তদন্ত প্রায় হয় নি বললেই চলে। আয়নাঘরে রাখা অনেকেই দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। তারপর লাস সরিয়ে দেওয়া হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয় তাদের খাতা কলমে কোনও তথ্য রাখা হয় না। আর যারা হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন তারাই আয়নাঘরের দায়িত্ব পেতেন। আয়নাঘরের বন্দিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখা করা বা যোগাযোগের কোনও আইন ছিল না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ