কুষ্টিয়া ও কাশিমপুর কারাগার থেকে বন্দির পলায়ন
০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের গেট ভেঙে পালিয়েছেন ১০৪ কারা বন্দি। কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কারাগারের ভেতরে থাকা কুষ্টিয়ার চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস কে সজীবের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার এ ঘটনার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি চালান কারারক্ষীরা। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেনাবাহিনী কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচজন কারারক্ষী আহত হয়েছেন।
কুষ্টিয়ার জেল সুপার আ. বারেক বলেন, ভেতরে দুপুরের খাবার ও বন্দি গণনা শেষে অফিসে নামাজ পড়ছিলাম। নামাজ শেষ করে উঠতেই হঠাৎ কারাগারের ভেতর থেকে চিৎকার ও অভ্যন্তরীণ গেটে আঘাতের শব্দ শুনতে পাই। দৌড়ে গিয়ে দেখি অন্তত ৩০০ জন সংঘবদ্ধ হয়ে ভেতর থেকে একসঙ্গে গেটে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে গেটের হেজবোল্ড ভেঙে যায়। এসময় কারাবন্দিরা পালানোর চেষ্টা করলে রক্ষীরা ফাঁকাগুলি চালান। তখন বন্দিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আবারো ভেতরে ঢুকে যায়।
এই কর্মকর্তা জানান, বন্দিদের ঠেকাতে গিয়ে ৫ কারারক্ষী আহত হয়েছেন। এছাড়া কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অস্ত্র ভাণ্ডার রক্ষিত আছে, বন্দিরা নিরাপদে আছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুরে কারাগারের দর্শনার্থী কক্ষে স্বজনরা বন্দিদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হঠাৎ ভেতর থেকে বেশ কয়েকজন কয়েদি কারারক্ষীদের মারধর শুরু করে। এ সময় বাইরে থাকা করাবন্দিদের স্বজনরাও চেঁচামেচি শুরু করেন।
কুষ্টিয়া ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা লে. কর্নেল মো. মাহবুবুল আলম শিকদার জানান, কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
কারারক্ষীরা জানান, জেলখানার ভেতরের রান্নাঘর থেকে চেলা কাঠ সংগ্রহ করে কারাগারের প্রধান ফটকের আগের ফটকটি ভেঙে বেরিয়ে আসেন দেড় শতাধিক বন্দি। এসময় কারারক্ষীরা বাধা দিতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালান। এরপর বন্দিরা ফটকের কারারক্ষীকে মারধর করে তার কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নিয়ে তালা খুলে একে একে বেরিয়ে যেতে শুরু করেন। এ সময় জেলখানার বাইরে থাকা কারারক্ষীরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। তবে তার আগেই বেশ কয়েকজন বন্দি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
জেল সুপার আব্দুল বারেক জানান, ঠিক কতজন বন্দি পালিছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
এছাড়া পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে কোনো জঙ্গি বা বড় মাপের কোনো সন্ত্রাসী আছে কি না সেটাও বলতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, বন্দিদের তালিকা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তালিকা মেলানোর পর জানা যাবে কতজন বন্দি পালিয়েছেন। পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের পরিচয় জানা যাবে।
কারাগার সূত্র জানায়, ৬০০ ধারণক্ষমতা থাকলেও ৯ শতাধিকের বেশি বন্দি রয়েছে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে।
কাশিমপুর কারাগার থেকে ২০৯ বন্দির পলায়ন, নিহত ৬
এদিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের হাই সিকিউরিটি সেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে ৬ বন্দি নিহত হয়েছে। এসময় কারাগার থেকে পালিয়ে গেছেন ২০৯ জন বন্দি। গত মঙ্গলবার বিকালে কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এ ঘটনা ঘটে। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- নরসিংদীর রায়পুরা থানার নলভাটা গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে মো. জিন্নাহ (২৯), সিলেটর মৌলভী বাজার কমলগঞ্জ থানার রামেশ্বরপুর এলাকার মকবুল মিয়ার ছেলে ইমতিয়াজ পাভেল (২৭), নওগাঁর আব্দুস সালাম সরদারের ছেলে আসলাম হোসেন (২৭), আফজাল হোসেন (৬৩) তার পিতার নাম রইজ উদ্দিন, স্বপন শেখ কালু (৪৫) পিতা আব্দুর রাজ্জাক শেখ ও রাধে শ্যাম হরিজজন জমাদ্দার (৬৭) পিতা মৃত রাম হরিজন। তিনজনের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জেল সুপার জানান, মঙ্গলবার কারাগারের বন্দীরা হঠাৎ বিদ্রোহ শুরু করে। তারা কারাগার থেকে বের হওয়ার জন্য বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে এবং ফটক ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কারারক্ষীরা তাদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে বন্দিরা কারারক্ষীদের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীকে খবর দেওয়া হলে সেনাবাহিনী কমান্ডো অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহ দমন করেন।
বন্দিদের মধ্যে ২০৯ জন দেয়ালটপকে পালিয়ে গেছে। এ সময় গুলিতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাত ৩টার দিকে নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোস্তাক আহমেদ জানান, রাত ৩টা ৪০ মিনিটে কারাগার থেকে ৬টি লাশ হাসপাতালে আনা হয়। তিনি আরো জানান, পুলিশ না থাকায় লাশগুলো পড়ে থাকে। পরে পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে একজন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এসে লাশের সুরতহাল করেন। লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কারাগারে বন্দী নিহতের খবর পেয়ে নিহতের স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় করেন। এসময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহত বন্দী ইমতিয়াজের ভাই সোহেল আহমেদ বলেন, আমার ভাই আড়াই বছর ধরে কারাগারে বন্দী ছিল। সকালে খবর পাই কারাগারে সে গুলিতে মারা গেছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বিস্তারিত খবর নিয়ে জানাতে পারবো।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প