ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে করণীয়’ শীর্ষক সিপিডি’র সংবাদ সম্মেলন গভর্নরসহ জড়িতদের বিচার দাবি ষ ১৫ বছরের আর্থিক কেলেঙ্কারি ৯২ হাজার কোটি টাকা

অনেক ব্যাংক ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম

দেশের কিছু ব্যাংক ইতোমধ্যে ‘মৃতপ্রায়’ আর অনেক ব্যাংকের ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ হয়েছে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। এর মধ্যে ‘মৃতপ্রায়’ ব্যাংকগুলোকে একবার সচলের চেষ্টা এবং ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ব্যাংকগুলোকে মরতে দেওয়ার সুপারিশ করছে বেসরকরি গবেষণা সংস্থাটি। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, মৃতপ্রায় ব্যাংকগুলোকে রক্ষায় শেষবারের মত আরেকবার চেষ্টা করা যেতে পারে। এজন্য এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ও পরিচালনা পরিষদ বদলাতে হবে। সংস্কার করতে হবে পুরোটা। গতকাল সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থার কার্যালয়ে ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলছিলেন ফাহমিদা। তিনি বলেন, অনেক ব্যাংক ক্লিনিক্যালি ডেড হয়ে গেছে। এসব ব্যাংক আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। স্বাভাবিকভাবে এদের মরে যেতে দেওয়া দরকার। সরকার এসব ব্যাংকগুলোকে অর্থ দিয়ে, মূলধন দিয়ে পুনর্ভরণ করে চালাচ্ছে। অনুষ্ঠানে ‘মৃতপ্রায়’ ও ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ব্যাংকের সংখ্যা না জানালেও ফাহমিদা বলেন, ব্যাংকগুলোর ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী- ১১টি ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো ক্লিনিক্যালি ডেড হয়ে গেছে। একসময়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ভালো ব্যাংক ছিল; এটিকে দখলের পরে মুমূর্ষু হয়ে গেছে। অনুষ্ঠানে বলা হয়, স্বাধীনতার পরে দেশের অর্থনীতি অনেক খারাপ ছিল। তখন অর্থনীতি সাজাতে এগিয়ে এসেছে দেশের ব্যাংক খাত; তৈরি করেছে উদ্যোক্তা, করেছে অর্থায়ন। ব্যাংক খাত শিল্পায়নে ভূমিকা রাখায় পরবর্তী সময়ে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে। এসব শিল্পগোষ্ঠী অর্থনীতি সচল রাখতে ভূমিকা রাখছে মন্তব্য করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের ব্যাংক খাত এখন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রসারে কাজ করছে। গুটি কয়েক গোষ্ঠীর জন্য নিয়মনীতি করা হচ্ছে। ব্যাংক খাত এখন নিয়মনীতির বাইরে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তার স্বাধীনতা চর্চার জায়গার পুরোটা হারিয়েছে। গত এক দশকের বেশি সময়ে ব্যাংকিং খাতে ২৪টি বড় ধরনের ‘স্ক্যাম’ হয়েছে, যাতে ৯২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায়।

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া জন্য অনেক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। যার ফলে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসনিক দায়িত্ব যারা পালন করেছেন অর্থাৎ গত ১৫ বছরে গভর্নর যারা ছিলেন তারা যেসব নীতিমালা নিয়েছেন, ওইগুলো ব্যাংকিং নর্মসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য অনেক নিয়মে ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। যার ফলে বিশেষ গোষ্ঠীকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিটি কেইস তদন্ত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত যার পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ করার জন্য সিআইডি ৭৯ বার সময় নিয়েছে। নতুন সময় ৪ সেপ্টেম্বর। ভবিষ্যতে দেখা যাবে। আমরা চাই ওই তদন্ত প্রতিবেদন উন্মুক্ত করা দেওয়া হোক।

সিপিডি নির্বাহী পরিচালক বলেন, বারবার পুনঃতফসিল করার কারণে ঋণ খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, এটা বন্ধ করতে হবে। ২০১২ সালের হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারিতে দেখেছিলাম অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা দুর্বল ছিল, এখনও বিভিন্ন ব্যাংকে তা রয়ে গেছে। ২০২১ সালের তথ্যানুসারে ১১টি ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত গবেষণা করে বলেছিলাম শক্তিশালী প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করছি। অনেকগুলো মৃতপ্রায়। এগুলো বেঁচে থাকার কথা নয়। ওইগুলো বন্ধ করা উচিত। যেগুলো দুর্বল রয়েছে, সেগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে যথাযথভাবে ঠিক করতে হবে। না হলে সক্রিয় করা সম্ভব নয়।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, অনেক আর্থিক মামলা আদালতে পড়ে আছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্থিক আদালতে মামলার সংখ্যা ৭২ হাজার ৫০০টি। টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে আর্থিক কেলেঙ্কারি খুঁজে বের করা প্রয়োজন। আমাদের গবেষণায় দেখিয়েছিলাম ২৪টি আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে, যার পরিমাণ ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো মার্জ হওয়ার পূর্বশর্ত হলো অডিট করে ফাইনান্সিয়াল অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখা। পরিচালনা পরিষদের সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ক্যাটাগরি ঠিক করে দিতে হবে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সরকার ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুঁজি হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক বিভাগ বাতিলের দাবি জানিয়ে সিপিডি বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ অর্থাৎ এফআইডি রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে তার কার্যক্রম করতে পারে না। এটা সৃষ্টি করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকিং সেক্টরকে প্রভাবিত করা। আমরা মনে করি অন্যায়ভাবে ঋণ কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত যেগুলো নেওয়া হয়েছে, তার একটি তদন্ত হওয়া উচিত। আমাদের সুপারিশ এফআইডি বন্ধ করে দেওয়া উচিত, এই বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই।

ব্যাংক খাতের সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে তিন মাসের জন্য জন্য ব্যাংকিং কমিশন গঠন করার সুপারিশ করে সিপিডি বলেছে, এ খাতে ‘দ্বৈত প্রশাসন’ কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করতে হবে। এ বিভাগের জন্য সরকারি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নেই। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতের দুষ্টু চক্র ভেঙে ফেলতে হলে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
আরও

আরও পড়ুন

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি