বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মপরিকল্পনা করতে হবে
১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম
চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে অন্তবর্তী সরকারকে ১০০দিনের বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিড)। বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে নানা অনিয়ম হলেও বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। তাই অন্তর্বতী সরকারকে এগুলো বাস্তায়নের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে বলেও মনে করে এই বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার সিপিডি’র প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। এসময় সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে আমরা দেখেছি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হয় নি। যে কোনো কোম্পানির লাইসেন্স দেয়া থেকে শুরু করে দাম নির্ধারণ, বাজার নিয়ন্ত্রণসহ অনেক ক্ষমতা এই কমিশনের হাতে থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে আমরা তার উল্টো চিত্র দেখেছে প্রায় সময়ই। বিশেষ করে সরকারের নির্বাহী আদেশে জ্বালানির দাম বাড়ানো বা কমানোর বিষয়টি ভোক্তাদের কথা চিন্তা না করেই করা হয়েছে। দ্রুত বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিশেষ আইন বাতিল করার পাশাপাশি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে জবাবদিহিতা বাড়াতে বিইআরসিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এখাতের জন্য ১৭ টি সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। টেকসই জ্বালানি রুপান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিতে হবে।
২০৪১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার মেগাওয়াট উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিজার্ভ মার্জিনসহ ৩৫০০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় ৫৮ হাজার মেগাওয়াট ধরা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা, যা অযৌক্তিক। তাই এটার সংশোধন দরকার বলে আমরা মনে করছি। এতে, অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রার সুযোগ নিতে বেসরকারি খাত এলএনজি, কয়লা আমদানির মত অবকাঠামো তৈরির চাপ দিতে পারে।
জীবাশ্ম নয় বরং এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির উত্তরণে কাজ করার সুপারিশ জানিয়ে সিপিডি বলছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিই ভবিষ্যতের জ্বালানি। তাই এটিকে স্রেডার মতো ছোট পরিসরে না রেখে এ প্রতিষ্ঠানকে প্রধানমন্ত্রী কার্যলয় অথবা প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত বলে আমরা মনে করছি। যদি স্রেডার মাধ্যমেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে কাজ হয় তাহলে এটাতে সৌর, বায়ু, হাইড্রো ইত্যাদির আলাদা আলাদা উইং করতে হবে। প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে উদাহরণ নেয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ল্যাব নেই। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে যা গবেষণা হয় তা খুবই সীমিত। তাই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আমাদেরকে বিদেশ থেকে গবেষণা করতে হয়। তাই রিনিউএবল এনার্জি ল্যাবরেটরি তৈরি করতে হবে।
বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র কাছ থেক তথ্য পাওয়া সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিলো উল্লেখ করে খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, কি পরিমাণ তেল মজুদ আছে বা কি পরিমাণ আমদানি হচ্ছে তার কোনো কিছুই স্পষ্ট করে কেউ কখনো বলতে চান নি। আমরা মনে করি এই সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের সব ধরণের তথ্য নিয়মিত তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করলে কেউ আর অন্ধকারে থাকবে না। সব ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা তৈরি হবে। এমনকি জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণও ত্রুটিযুক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, দক্ষ জ্বালানি ব্যবহারের কারণে অন্যান্য দেশে যখন জ্বালানির চাহিদা কমছে তখন আমাদের দেশে বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সিস্টেম লস কমিয়ে আমাদের দক্ষ জ্বালানির ব্যবহার করতে হবে।
তিনি জানান, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার কারণে বিপিডিবিকে বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং বেসরকারি কোম্পানির কাছে বকেয়া বিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সে সঙ্গে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের সঙ্গে চুক্তির আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে প্রতিবছর ৩৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা টানতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অন্তর্বতী সরকারকে প্রথমে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংস্কারে মনোনিবেশ করতে হবে। তিনি জানান, বৈষম্য দূরীকরণ এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে এই সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন ২০১০ বাতিল করতে হবে। সিপিডি পরিচালক বলেন, তৃতীয় পদক্ষেপ হতে হবে, যেসব কোম্পানি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির জন্য অযাচিতভাবে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতে নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পে অনুযায়ী, চুক্তি সংশোধন করলে, ভর্তুকির চাপ কমবে উল্লেখ করে খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, গ্রাহককে বাড়তি দাম দিতে হবে না বলেও আমরা মনে করছি। সংবাদ সম্মেলনে কুইক ইনহ্যান্সমেন্ট অব ইলেক্ট্রিসিটি এন্ড পাওয়ার সাপ্লাই অ্যাক্ট, ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি এন্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইএমপি), ন্যাশনাল এনার্জি পলিসি ও রিনিওয়েবল এনার্জি পলিসি সংস্কারের জোর দাবি জানায় সিপিডি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বালির পরিবেশ রক্ষায় যে উদ্যোগ নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া
নতুন একাদশ নিয়েও চেলসির বড় জয়
নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরিবেশ উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ঢাকায় গ্রেপ্তার
রাজধানীতে কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ গ্রেপ্তার
ব্যর্থতার আবর্তে ম্যান ইউ
যেখানে নাহিদাই প্রথম
যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ডলারে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন জয়
সরকারের সর্বত্র এখনো শেখ হাসিনার দোসররা সক্রিয় : রিজভী
পোশাক খাতে অস্থিরতা
সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থাপনা এত করুণ কেন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের জন্য রহমত স্বরূপ
পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দুদকের উল্টো সুর কেন
বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য : যুবদল সভাপতি মুন্না
বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ শনিবার
চলতি পথে
সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ
ডেঙ্গু গল্প
তারেক রহমানের পক্ষে বাবুগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নাজমুল হাসানের গণসংযোগ
অচেনা সুরে