হেফাজতের মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা
১৯ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩২ পিএম | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩২ পিএম
সারাদেশে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে পুলিশ সদর দফতর থেকে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার এসব নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতরের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে। মোট ২০৩টি মামলায় হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। কিছু মামলার চার্জশীট দেওয়া হলেও বেশিরভাগ মামলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ওসব মামলার কথা বলে হেফাজতকে জিম্মি করা রাখতো পুলিশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আশার আলো দেখছে হেফাজত। তারাও চাচ্ছেন দ্রুত সময়ে মামলাগুলোর প্রত্যাহার করতে। সরকারও আশ^াস দিয়েছেন নেতাদের।
পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা প্রত্যাহার করার ইঙ্গিত মিলেছে। সেই জন্য পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। সহিংসতার পর থানাগুলোর কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ ছিল। বর্তমানে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হওয়ায় মামলাগুলোর তদন্ত শুরু করে ফাইনাল প্রতিবেদন দেবে। আর যেসব মামলার চার্জশীট হয়েছে সেগুলোও আদালতের মাধ্যমে সুরাহা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিয়ে আমাদেরই কিছু কর্মকর্তা নাটক করেছেন। তারা সরকারকে খুশি করতে এসব মামলা করে হেফাজতের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন। এখন সময় এসেছে যেকোন হয়রানি করা থেকে পুলিশ বিরত থাকবে। হেফাজতের মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে সিগন্যাল এসেছে। আশাকরি আগামী ৩ মাসের মধ্যে সবকটি মামলা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, হেফাজতের কোনো নেতাকর্মী করাগারে থাকলে তারা জামিন নিয়ে মুক্তি পাবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় যেসব শিক্ষার্থী গ্রেফতার হয়েছিল তারা সবাই মুক্ত হয়েছে এবং মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তাছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মামলাও প্রত্যাহার হচ্ছে। আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করে মামলার কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মামলাগুলো দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে পুলিশ সদর দফতর থেকে বেশকিছু নির্দেশনা এসেছে। এ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমালোচনা হচ্ছে সবখানে। এগুলোর দ্রুত সুরাহা চাচ্ছি আমরাও। ২০১৩ সালের ৬ মে বাগেরহাটে হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে হেফাজতের দু’জন কর্মী মারা যান। ওই ঘটনায় ফকিরহাটে ৪টি ও সদর থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ। এতে হেফাজত, জামায়াত, স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীসহ অন্তত ১২ হাজার জনকে আসামি করা হয়। তারমধ্যে একটি মামলার বিচার হয়েছে। রায়ে আসামিরা খালাস পেয়েছেন। ২০১৩ সালের ৫ মে তাণ্ডবের পর ঢাকাসহ ৭টি জেলায় ৮৩টি মামলা হয়। এসব মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয়। দুটি মামলার অভিযোগ প্রমাণ করতে না পেরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। আর ১৮টি মামলার অভিযোগপত্র দিলেও এর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
ওই কর্মকর্তারা আরো বলেন, শাপলা চত্বরের ঘটনার পর ২০২১ সালে বেশি মামলা হয়েছে হেফাজতের বিরুদ্ধে। তারমধ্যে ঢাকার মতিঝিল, পল্টন ও যাত্রাবাড়ী থানায় ১৪টি মামলা হয়। তাছাড়া চট্টগ্রামে ১১টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশ বাদি হয়ে সদর থানায় ১২টি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ৩৭টি, সরাইল থানা পুলিশ বাদি হয়ে ২টি, আশুগঞ্জ থানা পুলিশ বাদি হয়ে ১টি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ৩টি ও আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশ ১টি, নারায়ণগঞ্জে ৮টি, মুন্সীগঞ্জে ১০টি, কিশোরগঞ্জে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়। আশাকরি এসব মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৩ সালের শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে সক্রিয় হয় হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ৬টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে। এক পর্যায়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় তারা। এসময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক বিভিন্ন স্থানে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাংচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। আবার ২০২১ সালে মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। এসময় তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু ও পুলিশসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী আহত হন। হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়। এসব ঘটনায় সারাদেশে ১৫৪টি মামলা দায়ের করা হয়। তবে কোনো মামলারই তদন্তের পাশাপাশি অভিযোগপত্রই দেয়া হয়নি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দীর্ঘদিন পর প্রিয় দেশে ফেরার ঘোষনায় খুশির জোয়ারে ভাসছে মুরাদনগর উপজেলায়
ঢাবি ও বণিক বার্তার যৌথ আয়োজনে ৮ম নন-ফিকশন বইমেলা শুরু আগামীকাল
মঠবাড়িয়ায় মালয়শিয়া প্রবাসীর ঘরে ডাকাতি, বৃদ্ধাসহ ৩ নারী আহত
টুইটার থেকে এক্স ,ইলন মাস্কের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন যুগ
বিপুল পরিমাণ গাঁজা, ট্রাক ও ধানসহ নকলার মাদক কারবারিকে ফুলপুরে আটক
বিপিএলে অনিশ্চিত সাকিব নাম লেখালেন পিএসএলে
আলফাডাঙ্গায় চলছে হালি পেঁয়াজ লাগানোর মহোৎসব, শ্রমিকের অভাবে বাড়ছে চাষির খরচ
শ্রীনগরে পুকুর থেকে ভাসমান বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
কলকাতায় দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা চিন্ময়ের আইনজীবী এবার জাতিসংঘে যাওয়ার হুমকি দিলেন
রোববার হারিছ চৌধুরীর পুনর্দাফন
চলছে বিক্ষোভ, তারেক রহমানকে স্মারকলিপি, জবির অন্যান্য সংগঠনের প্রতিবাদ
চীনে তৈরি হবে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ
কোহলির আরও বড় শাস্তি প্রাপ্য ছিল: পন্টিং
বান্দরবানে আগুন দিয়ে ১৭ ঘর পুড়ে দেয়ার সাথে জড়িত দের ছাড় দেয়া হবে না- পার্বত্য উপদেষ্টা
জাহাজ সেভেন মার্ডারের খুনি ধর্মান্তরিত ইরফানের অজানা কাহিনী
খুলনার তাবলীগ মসজিদ এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল
দেশে কি চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে? জামায়াত আমীরের প্রশ্ন
ভারতে ইসকন মন্দিরে চিন্ময়ের আইনজীবীর বৈঠক
নির্বাচনে অংশ নিতে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের আইনগত কোনো বাধা নেই : অ্যাটর্নি জেনারেল
শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘট, বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরের পণ্য খালাস কার্যক্রম