স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ফেনী নোয়াখালী ও কুমিল্লায়
২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দাড়িয়েছে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। পাশাপাশি দেখে দিয়েছে নদীভাঙন। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। আখাউড়ায় পানিতে ডুবে নারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্নস্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে পড়েছে লাখো মানুষ। পানিবৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছে মৎস্যচাষী ও পোল্ট্রি খামারীরা। ফেনী ও নোয়াখালীতে ভসে গেছে শত শত ঘেরের মাছ। এমন পরিস্থিতিতে এসব এলাকা পুরোপুরি বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে মোবাইল নেটওয়ার্কও।
স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে জানান, সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত সোমবার থেকে চাঁদপুরে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। টানা বৃষ্টিপাতে শহরের রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। কিছু এলাকায় বাসা বাড়িতেও পানি ওঠে গেছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা খুবই নাজুক। বৃষ্টিপাতের সাথে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলের অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে। গতকাল বুধবার চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ মুহাম্মদ শোয়েব জানান, গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার সকাল ১২টা পর্যন্ত ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ৩ দিনের বৃষ্টিপাতে চাঁদপুর শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে আবাসিক এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। ড্রেনের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা জমে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শহরের নাজির পাড়া, মাদরাসা রোড, পালপাড়া, নিউ ট্রাক রোড, রহমতপুর আবাসিক এলাকায় টানা বৃষ্টিপাতে সড়কে পানি জমে আছে। চাঁদপুর লঞ্চঘাটের দায়িত্বরত ট্র্যাফিক পরির্দশক (টিআই) মো. শাহ্ আলম জানান, টানা বৃষ্টি হচ্ছে। তবে চাঁদপুর-ঢাকা নৌপথের সব ধরনের লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের লাখো মানুষ। জেলার কমলনগর, রামগতি, সদর, রামগঞ্জ ও রায়পুরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল এখন প্লাবিত। চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মেঘনা উপকূলের বাসিন্দারাসহ নিম্নআয়ের মানুষ। এছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে পানি। অনেকেই রান্না-বান্না করতে না পেরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, বিভিন্ন খাল, নদী দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ ও রাস্তা নির্মাণ করে পানির গতিরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে পরিকল্পনাহীন ড্রেনেজ ব্যবস্থায় এবং অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
পানিবন্দি এলাকার অনেক স্থানে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, আমনের বীজতলাসহ ফসলি জমি, ভেসে গেছে মাছের ঘের, পুকুর ও জলাশয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ও কৃষিখাতে। লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন জানান, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে জেলায় ১৭ হাজার ৫০০ পুকুর-জলাশয় ভেসে গেছে, চাষিদের বিভিন্ন প্রকার ছোট বড় অন্তত ৩ হাজার মেট্রিক টন মাছ বের হয়ে গেছে। এতে করে ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থা থাকলে তা বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন জানান, বন্যায় আমন ধানের বীজ তলা ১৪৮৬ হেক্টর, আমন ধান ধান ২৬১৮ হেক্টর, আউশ ধান ২৯৬৩ হেক্টর ও শরৎকালীন ৪৪৩ হেক্টরের সবজি আক্রান্ত হয়েছে। পানি আরো বেড়ে ২ দিন থাকলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। কৃষকদের জন্য বীজ সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জমান খান জানান, অবৈধভাবে খাল ও নদী দখলের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে, বেড়িবাঁধের কাজ চলমান রয়েছে, তবে কিছু স্থানে এখনো বাঁধ অরক্ষিত থাকায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণপাড়া সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধের উপরে অবস্থান নিয়েছেন মানুষ। গতকাল বুধবার বেলা বারোটার দিকে আকস্মিকভাবে গোমতী নদীর পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের ভেতরে থাকা শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইতোমধ্যেই। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সাময়িক মেরামতও করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তবর্তী চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাকড়ী নদীর বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে আছে সেখানকার কয়েক হাজার মানুষ।
নোয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে জনদুর্ভোগ চরমে। পুরো জেলাই প্রায় বন্যা কবলিত। পানিবদ্ধতায় ভাসছে নোয়াখালী জেলার নয়টি উপজেলা। নিম্ন আয়ের মানুষ এবং তাদের পরিবারে আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। দিনদিন হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্য্ াগত চারপাঁচদিনে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে সাড়ে চারশত রোগি ভর্তি আছে। নোয়াখালীর সব উপজেলাতেই বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগি।
এদিকে সরকারিভাবে আশ্রয় কেন্দ্র বা স্কুল-কলেজে আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ ব্যতীত ওইসব পরিবারের সাহায্য প্রদানে সরকারি কোনো উদ্যোগ দৃষ্টি গোচর হয়নি। জেলার সব কটি উপজেলায় অনেক পরিবারের মাটির চুলায় পানি ওঠায় রান্না-বান্না হয়নি বলে খবর আসছে। গত কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল বুধবার আরো নুতন এলাকা প্লাবিত এবং বসতবাড়িতে পানি ঢুকে দূরাবস্থায় আছে জেলার কয়েক লাখ মানুষ।
পানিবদ্ধতায় লাখ লাখ মানুষ তাদের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার, বিত্তশালী এবং মানবিকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলের পানিতে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। উপজেলাগুলোতে নৌকার অভাব ও তীব্র স্রোতে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এসব এলাকার লাখো মানুষ। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ফুলগাজী পরশুরামের সব এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে গত সোমবার দুপুর থেকে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে তিন উপজেলার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক ও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ।
ফুলগাজীর ইউএনও তানিয়া ভূঁইয়া জানান, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ এ বন্যায় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবক-ছাত্রদের সহায়তায় দুটা ডিঙি দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে। পানির তোড়ে একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাত থেকে আখাউড়ায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। সকাল থেকে বন্দরের পাশ বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ১০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী সেতু। এর আগে খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাধের কিছু অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বীরচন্দ্রপুর গ্রামের পারভেজ মিয়ার স্ত্রী।
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার গোমতী নদীর নিম্নাঅঞ্চলের ঘরবাড়ি ছাড়া শত শত মানুষ। বুধবার ফজরের পর থেকে বিরামহীনভাবে বৃষ্টি নেমেছে। রাস্তা থেকে পানি এখনো নিচে রয়েছে। তবে টানা বৃষ্টিপাত থাকলে এবং ভারতের বাঁধের পানি আসলে সেটা এলাকাবাসীর জন্য বিপদজনক হবে। এছাড়া নিম্নাঞ্চলের মানুষ গত মঙ্গলবার রাত থেকে রাস্তায় রয়েছ। বর্তমানে তারা অতি কষ্টে রয়েছে এই মুহূর্তে প্রশাসন এবং এলাকাবাসী পাশে দাঁড়াতে হবে।
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত রোববার থেকে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত কখনো হালকা, কখনো মাঝারি বা ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতে ব্যাপক জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে এলাকার নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু আমন ধানের জমি। টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন শ্রমজীবী, দিনমজুর ও দৈনন্দিন কাজে বাইরে বের হওয়া মানুষ। দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। গাছপালা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে পড়েছে লাখো মানুষ। পানিবৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছে মৎস্যচাষী ও পোল্টি খামারীরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌলি মন্ডল জানান, বৃষ্টির কারনে পানি প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জেনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলদের সাথে কথা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মীরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পানিবন্দি মানুষের মাঝে উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের গোভনিয়া ও ফেনাফুনি গ্রামে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ বিএনপি। এসময় মীরসরাই উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন মাহমুদ, উপজেলা বিএনপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন, উত্তরজেলা যুবদলের সদস্য হারুন অর রশিদ, সাইফুল ইসলাম, উপজেলা যুবদল নেতা জাহাঙ্গির আলম সহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ও টিলাগাঁও ইউনিয়নে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে দু’টি স্পটে গত মঙ্গলবার মধ্যরাত প্রায় ৬০০ ফুট এলাকা জুড়ে বিশাল ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টার টানা ভারি বর্ষণে এবং সীমান্তের ওপার থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও টিলাগাঁও ইউনিয়নের আশ্রয়গ্রাম, মিয়ারপাড়া, সন্দ্রাবাজ ও খন্দকারের গ্রাম ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া, ছৈদলবাজার এবং হাজিপুর ইউনিয়নের মন্দিরা ও কাউকাপন বাজার এলাকায় মনু নদীর পানি প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। একাধিক স্থানে প্রতিরক্ষাবাঁধের উপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। যেকোন সময় এসব স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নাঙ্গলকোট ও বুড়িচং (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ভারতীয় পানির প্রবাহে এবং টানা ছয়দিনের অরিরাম বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী বাঙ্গড্ডা, রায়কোট উত্তর, দক্ষিণ, মৌকরা, ঢালুয়া, বক্সগঞ্জ এবং সতাবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম পৌর সদরসহ উপজেলার অন্যান্য ১০টি ইউনিয়নের আরো ৫০টি গ্রামের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি উঠায় মানুষজনকে ঘরের খাটে বসে থাকতে হচ্ছে। পানিতে নিমজ্জিত বাড়িঘরের চুলায় আগুন না জলায় হাজার-হাজার মানুষকে অর্ভুক্ত থাকতে হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার অধিকাংশ কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাটে পানি উঠায় মানুষজনকে হাঁটু ও কোমর পানি মাড়িয়ে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠে এবং ভিতরে পানি উঠায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলার সর্বত্র মাছের প্রজেক্ট ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষীদের কোটি-কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে।
এদিকে মৎস্য প্রজেক্টের পাড় পানিতে ভেসে মাছ নদী, খালে-বিলে এবং ডোবায় চলে যাওয়ায় সর্বত্র মানুষজন বৃষ্টিতে ভিজে উৎসাহ নিয়ে জাল পেতে মাছ ধরছেন। অবিরাম বৃষ্টিতে আমন ধানের বীজতলা ডুবে যাওয়াসহ শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার ঢালুয়াতে বন্যা কবলিত ৬৬০ জন মানুষকে খাবার দেওয়ার জন্য বেনিফিট ফর উম্মাহ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছেন। অন্যদিকে এলাকাবাসীকে তাদের গবাদিপশু গরু, ছাগল, হাঁসমুরগী নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন পোল্টিফার্মের মুরগি মরে যাওয়ায় খামারিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন থেকে বন্যাকবলিত মানুষকে বিভিন্ন সাইক্লোন সেন্টার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের জন্য শুকনা খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকি।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৮০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ মাদরাসা মাঠে পানি উঠায় বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব একটা নেই বলে জানা যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুরাইয়া আক্তার লাকী বরেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের লোকজনকে সাইক্লোন সেন্টারসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। বন্যাদুর্গত মানুষজনের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। যেসব ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের মধ্যে চাল এবং শুকনা খাবার বিতরণ করা হবে।
এদিকে বুড়িচং উপজেলার সর্বত্র নদীর পানি বৃদ্ধিতে কৃষকের বীজতলা ও শাক সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। চাষকৃত পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বন্যার পানিতে বের হয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ চর এলাকা নিম্নাঞ্চল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখাযায়, বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়ন, পীরযাত্রাপুর ইউনিয়ন, বুড়িচং সদর, ভারেল্লা উত্তর ও দক্ষিণসহ রাজাপুর ও বাকশীমুল ইউনিয়নের হাজার জনগণের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করছে। বিশেষত গোমতী নদীর চর এলাকার হাজার জনগণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ষোলনল ইউনিয়নের ভান্তি, বালিখাড়া, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুরা, মিথিলাপুর, কোশাইয়াম, সোনাইসার, কাহেতরা, ছয়গড়িয়া, ষোলনল এবং পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, বরইয়া কোমাল্লা, শ্রীপুরসহ আশপাশের গ্রাম এতবারপুর, রামচন্দ্রপুর কুসুমপুরের জনগণ গত দুইদিন যাবত নির্ঘুম রাত্রিযাপন করছে।
গোমতী নদীর বেরিবাধ দিয়ে পূর্বহুড়া, বালিখাড়ার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি প্রবেশের চেষ্টাকালে স্থানীয় জনগণের প্রচেষ্টায় বস্তা দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার গোমতী বেরী বাঁধের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। গোমতি নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের অবস্থা নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উপজেলার ৯ ইউনিয়ন যথাক্রমে রাজাপুর, বাকশীমুল, বুড়িচং সদর, ষোলনল, পীরযাত্রাপুর, ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা (উ.) ও ভাবেল্লা (দ.) ইউনিয়নের বেশীর ভাগ গ্রামীণ সড়কগুলোতে বৃষ্টি হলে জনগণ ও যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অনুপ্রবেশকারীদের টার্গেট নরসিংপুর সীমান্ত!
রাউজানে বিএনপিপন্থী পরিবারের ওপর হামলা