তেজগাঁও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রথম অফিস করেছেন ড. ইউনূস
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম
অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অফিস শুরু করেছেন। এখন থেকে এটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সরকারের সব সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী বুধবার বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকটি হবে। এ সংক্রান্ত চিঠি সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে এখনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এখনো দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এসব কর্মকর্তাদের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বদলী করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এদিকে গতকাল রোববার থেকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অফিস শুরু করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং তখন থেকে প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অফিস করছিলেন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের দিন গণভবনসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়। এতে স্থাপনাগুলো কাজের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। টানা ১৫ দিনব্যাপী সংস্কার কাজ করে প্রস্তুত করা হয়েছে অন্তর্র্বতী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়। ইতোমধ্যে কার্যালয়ের বাইরে-ভেতরে নামফলক পরিবর্তন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রধান উপদেষ্টার সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাদের বসার কক্ষও ঠিকঠাক করা হয়েছে। এদিকে সরকারের সকল সচিবদের সঙ্গে আগামী বুধবার বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকে বসছেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকার গঠনের পর এটি সচিবদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রথম বৈঠক। এ সংক্রান্ত চিঠি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সভাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখাসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হতে পারে বলে জানা গেছে। মূলত সরকারের অগ্রাধিকারগুলো মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের সচিবদের সামনে তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেবেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান। মূলত সরকারের অগ্রাধিকারগুলো মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের সচিবদের সামনে তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেবেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ভারতে পালান শেখ হাসিনা। ওইদিনই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা। পরদিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। এরপর গত ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া রয়েছেন উপদেষ্টারা।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনকে শতভাগ দলীয়করণ করে সাজানো হয়েছিলো। বর্তমান প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। কয়েকভাবে এর প্রভাব পড়েছে, একদিকে অধিদপ্তর, পরিদপ্তর সমূহ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ মানছে না আবার জুনিয়র কর্মকর্তারা সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মানেন না। প্রশাসনে সমন্বয় নেই। এক সময় মন্ত্রণালয় গুলোর সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তারা তাকিয়ে থাকতে থাকে প্রধানমন্ত্রির কার্যালয় দিকে কি নির্দেশনা আসে। সার্ভিস রুলস উপেক্ষিত করে সে গুলো বাস্তবায়ন করতো বড় বড় কর্মকর্তরা। গত ১৫ বছরে এর মাশুল দিতে হয়েছে সাধারন জনগনকে। প্রশাসনের উর্”চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জনবান্ধব হতে পারেনি। আওয়ামীলীগ সরকারে আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা এখানো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বসিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আবার অনেক কর্মকর্তা উপদেষ্টাদের পিএস হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের আবার নিয়োগ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বদলী করার কারণে অন্তর্বতীকালীন সরকারে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং প্রশাসনিক তথ্য পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহা-পরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়ে দেশ ছাড়িয়ে পালিয়েছেন আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। এরপরে ধ্বংসস্তূপের উপর সার্বজনীন মতামতের উপর ক্ষমতা গ্রহণ করে নোবেল লরিয়েট ড.ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বতী বা তত্বাবধায়ক সরকার। এ সরকার মারাত্বক সমস্যার মুখোমুখি হয় সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নিয়ে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনে সরকারি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস্তুপে পরিণত হলেও তা আস্তে আস্তে ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বিগত পনেরও বছরের অধিক প্রশাসনে যে ধ্বংসস্তূপ তৈরী হয়েছে তা অপসারণে যে বিলম্বের সৃষ্টি হচ্ছে তার কারণে প্রশাসনে মারাত্বক নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর পিছনে আছে বিরাট এক ষড়যন্ত্রের নীল নকশা। প্রশাসনে এখনো অধিষ্ঠিত আছে সচিব থেকে পদস্থ কর্মকর্তারা যারা বিগত পতিত সরকারের আস্থাভাজন, প্রিয়ভাজন, মদদপুষ্ট এবং সুবিধাভোগী। তাদের মাধ্যমে বর্তমান সরকার যত সংস্কার কর্মসূচিই গ্রহণ করুক না তা বাস্তবায়ন বড় সুকঠিন। বিগত পতিত সরকারের ছায়ার মধ্যেই বসবাস করছেন এই সকল কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, আওয়ামীলীগ সরকারে আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা এখানো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বসিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আবার অনেক কর্মকর্তা উপদেষ্টাদের পিএস হিসেবে নিয়োগ নিয়েছেন। তাদের এ ভাবে নিয়োগ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বদলী করার কারণে অন্তর্বতীকালীন সরকারে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং প্রশাসনিক তথ্য পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের চুক্তিবাতিল এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবকে ওএসডি করা হলেও তাদের দোসরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সচিবরা হলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন,নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো.মোস্তফা কামাল, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবির, সেতু বিভাগ ও নির্বাহী পরিচালক মো. মনজুর হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবতী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সাবেক শিক্ষা সচিব সোলামান খান, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু: আব্দুল হামিদ জমাদ্দার, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবতন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.ফারহিনা আহমেদ, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মুশফিকুর রহমান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কেএম শামিমুল হক সিদ্দীকি, অর্থ বিভাগ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমীর মহাপরিচালক সুকেশ কুমার সরকার, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমীর রেষ্টর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক, জালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশীক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন, বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাৎ সেলিম, বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমি উল আহসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাইদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় মুরাদনগরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ
গুজব উড়িয়ে দিয়ে পুরোদমে অফিস করলেন প্রধান উপদেষ্টা
রাজশাহী থেকে চালু হচ্ছে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন
ফরিদপুরের পদ্মায় চলছে ইলিশ মাছ ধরার মহা উৎসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব নিথর।
নোবিপ্রবি বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিনিময়
তথ্য ও সস্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নবনিযুক্ত সচিবের মতবিনিময়
সরকারি ইন্ধনে তাণ্ডব হিন্দুদের, বাহরাইচে আতঙ্কে মুসলমানরা
রাজশাহীতে রেড ক্রিসেন্টের পিপিপি প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা
কেরানীগঞ্জে অবৈধ শিশা কারখানায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, জরিমানা ২ লক্ষ টাকা
বন, বনভূমি, ডলফিন সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
ইরানের সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়া চালাতে চায় সৌদি
কুষ্টিয়ায় হাসপাতালের ২০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি চার শতাধিক শিশু
সুন্দরবনে ৯০ অফিসের ৮শতাধিক বনকর্মীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ জেলায় প্রস্তুত ৩৫৯ আশ্রয় কেন্দ্র
পুলিশের ৬ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন
পাসপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে যেভাবে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান হারুন
তবে কি ঐশী-শুভ'র প্রেমের গুঞ্জন সত্যি? সংসার জীবনের ইতি টানতে চলেছেন আরিফিন শুভ?
লক্ষ্মীপুরে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি,লঞ্চঘাটে আটকা পড়েছে ভোলাগামী শতাধিক যাত্রী
সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গ্রেপ্তার
সাড়ে ৩ বছর পর ফিরে ওয়াশিংটনের রেকর্ড গড়া বোলিং
৮ম আন্তর্জাতিক সম্মেলন করতে যাচ্ছে রাবির পরিসংখ্যান বিভাগ