দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় টিএম জোবায়েরের
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম
জাতীয় গোয়েন্দা অধিদফতরের (এনএসআই)’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) টিএম জোবায়ের এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সংস্থার বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি তদন্ত টিমও গঠন করা হয়েছে। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের। সূত্রটি জানায়, টিএম জোবায়ের এনএসআই’র মহাপরিচালক থাকাকালে ঘুষ গ্রহণ, বিভিন্ন পদে ঘুষের বিনিময়ে চাকরি প্রদান, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ নিজ নামে, পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে ২৯ লাখ ৪৫ হাজার পাউন্ড খরচ করে লন্ডনে বাড়ি ক্রয়সহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিন পৃষ্ঠার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, টিএম জুবায়ের বাংলাদেশের অন্যতম মাফিয়া, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট। তিনি ঠাণ্ডা মাথার খুনি। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী। শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সালমান এফ. রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক আহমদ আকবর সোবহান (শাহ আলম), এস. আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল ইসলাম, পরিবহন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এনায়েতুল্লাহ খন্দকার, পলাতক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং প্রাক্তন বিভিন্ন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গঠন করেন। এই সিন্ডিকেট দেশে চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন বাণিজ্য, ব্যবসা বাণিজ্য, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্ম করতেন। যা দেশবাসীর কাছে আজ পরিষ্কার। টিএম জোবায়ের ছিলেন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একসময়কার চরমপন্থি সর্বহারা নেতা মৃত রউফ তালূকদারের পুত্র। তার গ্রামের ঠিকানা- বড় রমজানপুর, রমজানপুর, উপজেলা-কালকিনি, জেলা মাদারিপুর। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে টিএম জোবায়ের গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের বিশাল পাহাড়। হাজার হাজার কোটি টাকায় দেশ ও বিদেশে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন বিত্ত-বৈভব।
দেশের ভেতর সম্পদ : রাজধানীর গুলশান-২-এর ৮৪ নম্বর রোডে লেকের কিনারে রয়েছে একটি বিশাল বাড়ি। বাড়িটি ছিলো জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র নিজস্ব সম্পত্তি। টিএম জোবায়ের গণপূর্তের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছেন। একটি দেখারও কেউ নেই।
তার ব্যবসায়িক বন্ধু বসুন্ধরার মালিক আহমেদ আকবর সোবহান (শাহ আলম)-র পুত্র বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানবীর আহমেদ সানভির নারী কেলেঙ্কারির মামলার বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকসহ সার্বিক সমন্বয় সাধন এবং ধামাচাপা প্রদানের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে ঘুষ বাবদ বাগিয়ে নিয়েছেন বসুন্ধরার প্লট ও বিপুল নগদ অর্থ।
টিএম জোবায়েরের গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় রিসোর্ট এবং গাজীপুর সদরে রয়েছে বহুতল ভবন। রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে নিজের এবং বোনের নামে ফ্ল্যাট, উত্তরা রাজলক্ষ্মী মার্কেটে ৩/৪টি দোকান, রংপুরে বিস্তৃত ফসলি জমি দখল, ঢাকার পূর্বাচল ও বসুন্ধরায় বাগিয়ে নিয়েছেন প্লট।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ফ্ল্যাট, ধানমন্ডির ৭/এ, তে একটি ফ্ল্যাট, ও সাভার ডিওএইচএস এ ১০ তলা বাড়ি রয়েছে টিএম জোবায়েরের।
দুর্নীতিবাজ জুবায়ের মাদারিপুর গ্রামের বাড়িতে গড়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি। এছাড়া অবৈধ উপায়ে অর্জিত অধিকাংশ অর্থই তিনি পাচার করেছেন লন্ডন, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও তুরস্কে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে লন্ডন, তুরস্ক, দুবাইয়ে কিনেছেন বিলাসবহুল বাড়ি।
টিএম জোবায়েরের কয়েকজন পার্টনার নিয়ে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখভালের জন্য নিজের অধীনস্থ অযোগ্য, সেবাদাস ও ভৃত্য টাইপের অফিসারদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দূতাবাসে পোস্টিং দিয়ে চাকরের মতো কাজ করিয়েছেন।
মেজর জেনারেল (অব.) টিএম জোবায়ের লন্ডনে ২৯ লাখ ৪৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা) মূল্যে একটি আলীশান বাড়ি কেনেন। লন্ডনের বেক্সলি এলাকায় হেথ কর্ফট ওয়ানসান্ট সড়কের ৭ নম্বর বাড়িটি লন্ডনের ক্রযডন এইচ আর ভূমি রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে নিজেসহ পরিবারের তিন জনের নামে। তারা হলেন, টিএম জোবায়ের, এফ. মাসুদ এবং মোহাম্মদ এস. ইবনে জুবায়ের নামে। রেজিস্ট্রেশন নথিতে উল্লেখিত তথ্য মতে, এফ. মাসুদ হচ্ছেন টিএম জোবায়েরের স্ত্রী ফাহমিদা মাসুদ এবং তাদের পুত্র মোহাম্মদ এস. ইবনে জোবায়ের। বাড়িগুলো কিনতে কোনো ব্যাংক ঋণ নেয়া হয়নি। পুরো অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে নগদ মূল্যে। দলিলটি স্থানীয় কাউন্সিল অফিস থেকে ভেরিফায়েডকৃত।
টিএম জোবায়ের দরবেশ বাবা হিসেবে পরিচিত সালমান এফ. রহমানের পরামর্শে ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার নাটকীয় ভুয়া অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ থেকে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ডলার আদায় করেছেন। মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক অনেকেই এ ঘটনার সাক্ষ্য দেবেন। টিএম জোবায়ের অন্যান্য সময়ও মানিএক্সচেঞ্জগুলোতে অভিযানের নামে তাণ্ডব চালিয়েছেন। বিপুল অঙ্কের চাঁদা দিয়ে তার অত্যাচার থেকে রেহাই পেতেন মানিএক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের কাছে অনেক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না।
এনএসআই-এ কর্মরত থাকাকালে টিএম জোবায়ের তার চাচাতো ভাই জহির আনুমানিক ৫০ জনকে এনএসআই অফিসে জনপ্রতি ২০ লাখ টাকা করে নিয়ে চাকরি দিযেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দফতর থেকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে শত শত কোটি টাকার ঠিকাদারির কার্যাদেশ হাতিয়ে নিয়েছেন।
মো: কাইয়ুম নামে তার এক ভায়রা ভাই রয়েছেন। তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন জোবায়েরের নামের ওপর। এভাবে এনএসআইকে ব্যবহার করে কাইয়ুমও গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। বিমান বন্দরের দায়িত্বে ছিলেন এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক বদরুল হাসান চৌধুরী। গোপালগঞ্জ বাড়ি এই কর্মকর্তা সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন কাইয়ুমকে। টিএম জোবায়েরর এনএসআই’র মহাপরিচালকের পদটির অপব্যবহার করে বিভিন্ন বিভাগের ঠিকাদারির কাজ পাইয়ে দেয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অর্থ। এনএসআইয়ের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ত্রাসের রাজত্ব। নিজ অপকর্ম আড়াল করতে অন্যদের প্রতি জুলুমবাজি করেছেন। অনেকের চাকরি খেয়েছেন। পেটে লাথি মেরেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনকালে অভ্যন্তরে বিভিন্ন রকম গ্রুপিং সৃষ্টি করেন। নিরীহ সেনা অফিসারদের ক্ষতি করেছেন। পক্ষান্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে অবসরে যাওয়া ব্রিগেডিয়ার (অব.) আমিরুল ইসলাম সিকদারকে দিয়েছেন জবর-দখল, মেঘনাঘাটের বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায়ের অবাধ লাইসেন্স দিয়ে দেন। এই চাঁদাবাজির একটি অংশ পেতেন টিএম জোবায়ের।
গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা পলায়নের কয়েকদিন আগে অবসরে চলে যান টিএম জোবায়ের। অবসরে গিয়েও দেখিয়েছেন দম্ভ। আগের পরিচয়ে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। ছাত্র-জনতা হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। শেখ রেহানার দেবর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর একনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে হেলিকপ্টার গানশিপ দিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি, স্নাইপার দিয়ে রাইফেল দিয়ে গুলি করে সাধারণ মানুষ হত্যায় সরাসরি ভূমিকা রাখেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় মুরাদনগরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ
গুজব উড়িয়ে দিয়ে পুরোদমে অফিস করলেন প্রধান উপদেষ্টা
রাজশাহী থেকে চালু হচ্ছে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন
ফরিদপুরের পদ্মায় চলছে ইলিশ মাছ ধরার মহা উৎসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব নিথর।
নোবিপ্রবি বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিনিময়
তথ্য ও সস্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নবনিযুক্ত সচিবের মতবিনিময়
সরকারি ইন্ধনে তাণ্ডব হিন্দুদের, বাহরাইচে আতঙ্কে মুসলমানরা
রাজশাহীতে রেড ক্রিসেন্টের পিপিপি প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা
কেরানীগঞ্জে অবৈধ শিশা কারখানায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, জরিমানা ২ লক্ষ টাকা
বন, বনভূমি, ডলফিন সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
ইরানের সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়া চালাতে চায় সৌদি
কুষ্টিয়ায় হাসপাতালের ২০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি চার শতাধিক শিশু
সুন্দরবনে ৯০ অফিসের ৮শতাধিক বনকর্মীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ জেলায় প্রস্তুত ৩৫৯ আশ্রয় কেন্দ্র
পুলিশের ৬ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন
পাসপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে যেভাবে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান হারুন
তবে কি ঐশী-শুভ'র প্রেমের গুঞ্জন সত্যি? সংসার জীবনের ইতি টানতে চলেছেন আরিফিন শুভ?
লক্ষ্মীপুরে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি,লঞ্চঘাটে আটকা পড়েছে ভোলাগামী শতাধিক যাত্রী
সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গ্রেপ্তার
সাড়ে ৩ বছর পর ফিরে ওয়াশিংটনের রেকর্ড গড়া বোলিং
৮ম আন্তর্জাতিক সম্মেলন করতে যাচ্ছে রাবির পরিসংখ্যান বিভাগ