ঢাকা   শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
২০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তার চুক্তি সই

বাংলাদেশের পাশে যুক্তরাষ্ট্র

Daily Inqilab কূটনৈতিক সংবাদদাতা

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তথা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদল জানিয়েছেন, বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে সব রকমের সহায়তা করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিনিধিদল জানায়, বাংলাদেশকে আরো ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল রোববার রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠককালে এ কথা জানায় সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদল। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আর্থিক খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউইয়র্ক সফর নিয়ে আলোচনা হয়। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন।

বৈঠকের পর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৈঠকের ছবি পোস্ট করে বলা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান গঠন ও উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন আমাদের প্রতিনিধিদল। যেহেতু বাংলাদেশ আরো ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।’
এদিকে, বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন সহযোগিতা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) চুক্তি সই হয়েছে।

এদিকে, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে আগ্রহী। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহবানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৭৫০ মিলিয়ন পলিসিভিত্তিক ঋণের প্রস্তাব করেছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে কিছু নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ছাড়াও ২৫০ মিলিয়ন বিনিয়োগ ঋণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন পলিসিভিত্তিক ঋণের প্রস্তাব করেছে। এর সাথে আরো ২০০ মিলিয়ন বিনিয়োগ ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। তবে মার্কিন ট্রেজারি কোন ঋণের পরিমাণ উল্লেখ করেনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন। গতকাল রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ সহায়তা চান।

২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার দ্রুততার সঙ্গে অর্থনীতি পুনর্গঠন, সংস্কার ও পুনরায় সচল করার পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। তিনি ছাত্রদের নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লব সম্পর্কে বলেন, এই বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশাজাগানিয়া যুগের সূচনা করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, তাঁর সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভোট কারচুপি প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। স্বৈরাচার সরকারের ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের মাধ্যমে আত্মসাৎ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধিদল ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারলে ওয়াশিংটন আনন্দিত হবে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ড. ইউনূস সরকারের বাস্তবায়নাধীন সংস্কার কর্মসূচিতে তারা প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আর্থিক খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউইয়র্ক সফর নিয়ে আলোচনা হয়।

ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু; যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জেরড ম্যাসন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শহারিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, বাংলাদেশ সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেছেন অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। পরবর্তীতে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
এদিকে, বৈঠক দু’টির পর পৃথকভাবে নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর দূতাবাসের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের নব উদ্যমে প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়াকে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা করব। এ লক্ষ্যে শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়নকে ঘিরে তাদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে আমাদের সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।’

পদ্মায় বৈঠক : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি বিশেষ অগ্রাধিকারে রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংস্কার নিয়ে সরকারের ধারণা ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এতে যুক্ত হতে পারে, তা নিয়ে ঢাকা সফররত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল রোববার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজসভার পর পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব।

পররাষ্ট্রসচিব জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে। সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি এ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার বলে তাদের জানানো হয়েছে। আর্থিক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শ্রম পরিবেশ, মানবাধিকার সুরক্ষা, রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কোন কোন খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে জসীম উদ্দীন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এক মাসের কিছুটা বেশি। আজ বৈঠকে পরিবর্তিত যে পরিস্থিতি ও সরকারের সংস্কার বিষয়ে যে ধ্যানধারণা এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এই সফর একটি ভিত্তি। সামনে আমরা এই আলোচনাকে বিভিন্ন পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাব।

পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমরা বড় আকারে আর্থিক খাতে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পাচার হওয়া অর্থসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে, সেটি হয়তো আমরা ব্যবহার করব, কিন্তু আলাপ-আলোচনা সবে শুরু হয়েছে। এর চূড়ান্ত রূপ পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন বলেন, প্রতিনিধিদলের এই সফরে প্রথম যে আশ্বাস, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে চায়। সেটারই প্রতিফলন হিসেবে সরকার গঠনের দ্বিতীয় মাসেই যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সংস্কারের যেসব খাত চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সব কটি খাতে তারা সার্বিকভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। শ্রম আইন নিয়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো তাদের জানানো হয়েছে এবং এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসার আগে দিল্লি সফর করেছেন। এই সফরে ভারত থেকে কোনো বার্তা নিয়ে এসেছেন কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এ বিষয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশন আছে এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশন আছে। আমরা যদি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, এগুলো আমাদের জন্য প্ল্যাটফর্ম।

২০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তার চুক্তি সই : বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন সহযোগিতা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) চুক্তি সই হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই চুক্তি সই হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য, সুশাসন, মানবিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি ও মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই অর্থ কাজে লাগানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার হলো বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সহযোগিতা করা।

চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সাহাবউদ্দিন এবং ইউএসএআইডির পক্ষ থেকে সই করেন রিড জে অ্যাসচলিম্যান। অনুষ্ঠানে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মূলত রাজস্ব ও আর্থিক খাত নিয়ে কথা হয়েছে। আর্থিক খাতের সংস্কার ও সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়েছে। বাণিজ্য নিয়েও কথা হয়েছে; রপ্তানি বহুমুখীকরণসহ অন্যান্য কারিগরি সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাজার অনুসন্ধানও আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করলে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আলোকে এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দ্য ডেভেলপমেন্ট অবজেকটিভ গ্র্যান্ট অ্যাগ্রিমেন্ট (ডিওএজি) বা উন্নয়নের লক্ষ্যে অনুদান চুক্তির ষষ্ঠ সংশোধনী হিসেবে আজ এই চুক্তি সই হয়েছে। এই চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত।

সেই চুক্তির আলোকে বাংলাদেশকে মোট ৯৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার সহায়তা দেয়ার কথা। এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি সংশোধনীর আলোকে বাংলাদেশকে ৪২৫ মিলিয়ন বা ৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেয়া হয়েছে। এবার ষষ্ঠ সংশোধনীর আলোকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ২০ কোটি ২২ লাখ ডলার সহায়তা দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র মূলত ইউএসএআইডি ও ইউএসডিএর মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগিতা দিয়ে থাকে। ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত অর্থনৈতিক প্রযুক্তিগত ও সম্পর্কিত সহায়তা শীর্ষক একটি চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, সুশাসন, খাদ্যনিরাপত্তার মতো বিভিন্ন খাতে আজ পর্যন্ত ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। ##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিএনপি ক্ষমতায় এলে নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধান হবে : কৃষক দল

বিএনপি ক্ষমতায় এলে নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধান হবে : কৃষক দল

আবারও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা ইসরাইলের

আবারও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা ইসরাইলের

রাউজানে এমপির জানালাবিহীন ‘আয়নাঘর’, মাটির নিচে চলত নির্যাতন-হত্যা

রাউজানে এমপির জানালাবিহীন ‘আয়নাঘর’, মাটির নিচে চলত নির্যাতন-হত্যা

ভেজাল চায়ে চুমুক দিচ্ছেন না তো? এই সহজ উপায়ে চিনে নিন খাঁটি চা

ভেজাল চায়ে চুমুক দিচ্ছেন না তো? এই সহজ উপায়ে চিনে নিন খাঁটি চা

হিলিতে বিভিন্ন পূজা মন্ডব পরিদর্শনে বিএনপির নেতাকর্মীরা

হিলিতে বিভিন্ন পূজা মন্ডব পরিদর্শনে বিএনপির নেতাকর্মীরা

১৭ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা বোয়িং-এর

১৭ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা বোয়িং-এর

পাকিস্তানে কয়লা খনিতে হামলা,তেহরানের তীব্র নিন্দা

পাকিস্তানে কয়লা খনিতে হামলা,তেহরানের তীব্র নিন্দা

১০০ বছর পর এভারেস্ট পর্বতারোহীর দেহাবশেষ উদ্ধার

১০০ বছর পর এভারেস্ট পর্বতারোহীর দেহাবশেষ উদ্ধার

ব্যবহারকারীদের ‘ক্ষতি ও সুরক্ষা’ দিতে ব্যর্থ টিকটকের বিরুদ্ধে মামলা

ব্যবহারকারীদের ‘ক্ষতি ও সুরক্ষা’ দিতে ব্যর্থ টিকটকের বিরুদ্ধে মামলা

ইরানের তেল খাতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

ইরানের তেল খাতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের সমাপ্তি চায় ইউক্রেন

রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের সমাপ্তি চায় ইউক্রেন

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানালো জাতিসংঘ

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানালো জাতিসংঘ

গণহত্যাকারী ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলো নিকারাগুয়া

গণহত্যাকারী ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলো নিকারাগুয়া

ইমরানের মুক্তির দাবিতে পিটিআই এর বিক্ষোভের ঘোষণা

ইমরানের মুক্তির দাবিতে পিটিআই এর বিক্ষোভের ঘোষণা

এক ঘণ্টায় ইসরায়েলে ১০০ রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর

এক ঘণ্টায় ইসরায়েলে ১০০ রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর

টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ৫৪ বছর ধরে একই আঙিনায় চলছে নামাজ ও পূজা

টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ৫৪ বছর ধরে একই আঙিনায় চলছে নামাজ ও পূজা

ভারতীয় দুই নাগরিক আটক

ভারতীয় দুই নাগরিক আটক

যশোরে সাবেক এমপিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আজ মধ্যরাত থেকে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু

আজ মধ্যরাত থেকে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু

বাখরাবাদ পাইপলাইন প্রকল্প পরিদর্শন জ্বালানি উপদেষ্টার

বাখরাবাদ পাইপলাইন প্রকল্প পরিদর্শন জ্বালানি উপদেষ্টার