রায়হানকে মাথায় গুলি নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে সারাজীবন
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
মাথার ভেতরে গুলি রেখেই বাকী জীবন কাটাতে হবে কলেজ শিক্ষার্থী রায়হান হোসেনকে। আর যতদিন বেঁচে থাকবেন বিছানা থেকে কোনদিন উঠেই দাঁড়াতে পারবেন না স্কুল ছাত্র হাবিবুর রহমান। এ পরিণতি শুধু হাবিবুর কিংবা রায়হানের জীবনেই নয়। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তাদের মতো সারা জীবনই বয়ে বেড়াতে হবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বর্বরতার ক্ষত নিয়ে বহু শিক্ষার্থীকে।
গত ৫ আগষ্ট হাসিনা পালিয়ে ভারত গেছেন। দেশ ত্যাগের আগে তার লেলিয়ে দেয়া দোসরদের গুলিতে আহত হয়ে এখনো দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো চিকিৎসারত হাজারো ব্যক্তি। এদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী, যুবকসহ নানা পেশাজীবী মানুষ। আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য বড় হাসপাতালগুলোর কোন কোন ওয়ার্ডকে বিশেয়ায়িত ইউনিট হিসেবে চালু করেছে কর্র্তৃপক্ষ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিট ভবনের ৫ম তলার ৫০২ ও ৫০৩ ওয়ার্ডকে করা হয়েছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহতদের জন্য বিশেয়ায়িত ওয়ার্ড। সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আবুবকর, হাবিবুর, হাবিবুল বাদশা, ইমরান, খোকন, রায়হানসহ অনেকে।
গতকাল সেখানে কথা হয় ঢাকার মিরপুর সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্র রায়হানের সঙ্গে। গুলিবিদ্ধ হবার দিনের স্মৃতি উল্লেখ করে রায়হান বলেন, দিনটি ছিলো ১৮ জুলাই। সেদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উত্তরা আজমপুর স্পটে রাজপথ অবরোধ করে রেখেছিলেন। তখনই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সেদিন চোখের ঠিক ওপরের অংশ, মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ছররা গুলি লাগে। কিন্তু তাতেও তিনি ঘরে বসে থাকেননি। আন্দোলনে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। কিন্তু বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে আগষ্ট মাসের ৩ তারিখ। সেদিন উত্তরায় আন্দোলনে আহত কয়েকজনকে নিয়ে তিনি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। জম জম টাওয়ার মুনসুর আলী হাসপাতালের সামনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের আটকে দেয়। রোগী নিয়ে সেখানে প্রায় তিন ঘন্টা আটকে থাকতে হয়েছে। এ সময় ছাত্রলীগ ও পুলিশ মিলে তার হাতটি ভেঙ্গে দেয়। ওই ভাঙ্গা হাতেরই এখন তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের বিভিন্নস্থানে বিদ্ধ গুলি গুলো বের করা গেলেও মাথার স্পর্শকাতর স্থানে ছররা গুলি রয়েছে। অপারেশনের মাধ্যমে এ গুলি বের করা সম্ভব নয়। এতে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে শতভাগ। তাই আজীবন তার মাথার ভেতরে গুলি নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। মেধাবী এ শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বিমান বন্দর থানাধীন রফিআদি এলাকায়। বাবা কামাল হাওলাদার একজন কৃষক।
গত ৫ আগষ্ট। হাসিনা সরকারের বিদায়ের ঠিক কয়েক ঘন্টা আগে আশুলিয়া থানার কয়েক গজের মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হন কবি নজরুল হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান। কোমরে, মেরুদন্ডে এবং বামপায়ে গুলিবিদ্ধ হয় সে। মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়ায় শুধুই তাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে চিকিৎসকরা তার মেরুদন্ডে পাইপ স্থাপন করে দিয়েছেন। বাম পা চিরদিনের জন্য অকোজে হয়ে গেছে। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তার বাবা গার্মেন্ট শ্রমিক রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, তার ছেলে কোন দিন আর উঠে দাড়াতে পারবে না। বিছানায় থেকেই কাটাতে হবে পুরো জীবন।
বাকি জীবন পঙ্গু হয়ে থাকতে হবে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনার বাদলা গ্রামের আবু বকরকে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ির চালক ২৫ বছরের এ যুবক বলেন, ঘটনার দিন গত ২০ জুলাই। সেদিন কারফিউ ছিলো। আগে থেকেই তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সময় দিতেন। ছররা গুলিতেও আহত হয়েছিলেন। ওই দিন সন্ধ্যায় কারফিউ ভেঙ্গে তারা ধানমন্ডি শংকর বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেন। সেদিন বাম উরুর ওপরে স্পর্শকাতর স্থানে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেও পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকতে হবে।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাশের ভাইকে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখেছেন কিশোর হাবিবুল বাদশা। ভোলানন্দ স্কুলের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র বাদশা জানায়, গত ২০ জুলাই কারফিউ ভেঙ্গে আমরা চিটাগাং রোডের হিরাঝিল এলাকা দখল করে রাখি। হঠাৎ দেখলাম পুলিশ ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু সাথে সাথেই বিজিবির গাড়ি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাতাড়ি গুলি শুরুবর্ষন শুরু করে তারা। পাশেই ছিলো পরিচিত যুবক ও আন্দোলনের সহকর্মী রুমন। এ সময় আমি বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হই। রুমনকেও দেখলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি করছে। পরে শুনলাম রুমন শহীদ হয়েছেন। বাদশার গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলা সদরের ছড়ারপার। বাবা মানিক মিয়া অটোরিকশা চালক।
ফ্যাসিস্ট সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশের নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি প্রতিবন্দী যুবকও। ৫০২ নং ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে প্রতিবন্ধী যুবক ইমরান। গত ৫ আগষ্ট বিকেল ৩টার দিকে যাত্রাবাড়ি মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয় ইমরান। তার বাবা আলমগীর বেঁচে নেই। মা সাহারা খাতুন বলেন, নরসিংদীর বেলাবো তার বাড়ি। ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি দোকানে বসতো। অন্যদের সাথে ইমারনও আন্দোলনে যায়। তবে ছেলের গুলিবিদ্ধ হবার ঘটনা তিনি জানতে পেরেছেন ১৫ দিন পরে। গুলিবিদ্ধ হবার পর ছাত্ররা তাকে ঢাকা মেডিকেলে এনে ভর্তি করায়। ১৫ দিন নিখোঁজ থাকার পরে ঢামেকে এসে ছেলেকে দেখতে পান তিনি ।
মাছ ব্যবসায়ী খোকনের দোকান রয়েছে আশুলিয়া থানার পাশে। আন্দোলন করতে গিয়ে একাধিকবার গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। খোকন বলেন, গত ৪ আগষ্ট সকাল ১১টায় আশুলিয়া বাইফেলের পাশে পুলিশের ছোরা অন্তত: ৫টি ছররা গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। ওই অবস্থায়ও তিনি আন্দোলন থেকে সরে যাননি। পরদিন বেলা ঠিক আড়াইটায় আশুলিয়া থানার পাশে বেপরোয়া পুলিশের গুলিতে তিনি বাম পায়ে, রানে হাতেসহ ৫টি গুলি লাগে তার শরীরে। প্রথমে তিনি সাভার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় রেফার করেন। পটুয়াখালি জেলা সদর হেতালিয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা খোকন বলেন, তার গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ সকল কষ্ট দূর হয়েছে দ্বিতীয় বার দেশ স্বাধীনের আনন্দে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১
ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন
গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ