ধরাছোঁয়ার বাইরে বিতর্কিতরা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
১৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাবেক আমলা এবং সাবেক এমপি সুনামগঞ্জের মান্নানকে গ্রেফতার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। নেটিজেনদের বেশির ভাগই মনে করছেন আইন শৃংখলা বাহিনী যে গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছেন তা নিছক লোক দেখানো; প্রকৃত অভিযুক্ত বিতর্কিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনাকে গণহত্যার ইন্দন দেয়ার হোতা এবং ১৫ বছর ঘুষ-দুর্নীতি করে টাকার পাহাড়ে বসবাস, বিদেশে টাকা পাচার এবং আইন শৃংখলা বাহিনীকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করে দেশকে জাহান্নামের কিনারে নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা দায়ী তাদের অনেকেই এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের কেউ পালিয়ে রয়েছেন, কাউকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়েছে। বিতর্কিত ওই সব নেতা ও পুলিশের সাবেক কর্তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ফেসবুকে অনেকেই লিখেছেন, এম এ মান্নানকে গ্রেফতার আইন শৃংখলা বাহিনীর গ্রেফতার অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। কারণ হাসিনা রেজিমে মন্ত্রী ও এমপি হিসেবে কেবল একজন ব্যাক্তি ছিলেন, যিনি দুর্নীতিমুক্ত থেকে নিজের আত্মসমালোচনা করেছেন এবং সরকারের ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতা, অযোগ্যতাগুলো অবলীলায় তুলে ধরেছেন, তিনি এম এ মান্নান। হাসিনা রেজিমের আর দশটা মন্ত্রী-এমপি ও নেতার মতো তিনি ছিলেন না। ফলে তাকে গ্রেফতার নিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় বইছে। প্রশ্ন হচ্ছে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর আইন শৃংখলা বাহিনী কি প্রত্যাশিত সাফল্য দেখাতে পেরেছে? গণহত্যা ইন্দনতাদা, ঘুষ-দুর্নীতি বাণিজ্যের হোতা, পুলিশ বাহিনীকে দানবে পরিণত করা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে যারা টাকা পাচার করে বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত তাদের গ্রেফতারে কি সাফল্য দেখাতে পেরেছে? সোস্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা বিতর্কে নিজেরাই প্রশ্ন করছেন আবার নিজেরাই উত্তর দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্য আইন শৃংখলা বাহিনী এতে চরম ভাবে ব্যর্থ। এমনকি আইন শৃংখলা বাহিনীর ওপর অন্তর্র্বর্তী সরকার এখনো পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি? হাসিনার পতনের পর যাদের সেনাবাহিনী আশ্রয় দিয়েছিল তারা এখন কোথায় সে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়ার আগে রাজধানী ঢাকাকে রক্তের সাগরে ভাসিয়ে দেন এবং সারাদেশে ম্যাচাকার করেন। আইন শৃংখলা বাহিনীকে দাবনের মতো ব্যবহার করে শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেন। এ জন্য তিনি প্রচুর টাকা ছিড়িয়ে দেন। ঢাকার রাজপথে শত শত মানুষের সামনে গানপয়েন্টে নিয়ে আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা, লাখো জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, পুলিশ-র্যাব-বিজিবি যৌথভাবে গুলি করে মানুষের বুক ঝাঁঝরা করা, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা এমনকি স্নাইপার দিয়ে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। যাদের ইন্দনে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং যারা রাজপথে নেতৃত্ব দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন সেই সাবেক মন্ত্রী-এমপি-আওয়ামী লীগ নেতাদের এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেশির ভাগকেই গ্রেফতার করা হয়নি। বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন তারা। বিতর্কিত নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না এবং কাউকে কাউকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু হাসিনার মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন সে কারণে এম এ মান্নানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হাসিনা পালানোর পর সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক, মন্ত্রী হাছান মাহমুদকে আটক করা হয়। গণমাধ্যমে এ খবর প্রচারের এক সাপ্তাহের মাথায় খবর বের হয় পলক গ্রেফতার হলেও হাছান মাহমুদ বেলজিয়াম গেছেন। অতপর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়। রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুসহ কয়েকজন নেতার গ্রেফতারে মানুষ খুশি হলেও পুলিশের বিতর্কিত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় জোয়াদ্দার, মনিরুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমানদের গ্রেফতার করা হয়নি। জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুবুল আলম হানিফ, ওবায়দুল কাদের, আ ক ম মোজাম্মেল হক, আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাহাউদ্দিন নাসিম, অসিম কুমার উকিল, শিরিন শারমিন চৌধুরী, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয় ও সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে শেখ সারহান নাসের (তন্ময়), হেলালের ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এবং আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে ও বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, জাপার রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ অনেকেই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা পালানোর সুযোগ না পেলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। অথচ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রজনতাকে গুলি করে হত্যা, শিক্ষার্থীদের ওপর নিষ্ঠুরতা এদের নেতৃত্বে ঘটেছে। এরাই দেশের গণতন্ত্র হত্যা এবং শেখ হাসিনাকে কর্তৃত্বাবাদী নিষ্ঠুর শাসকে পরিণত করতে সহায়তা করেছেন। শেখ হাসিনা বোন রেহানাকে নিয়ে পালানোর পর অনেক নেতা গ্রেফতার হলেও এখনো শেখ পরিবারের কেউ গ্রেফতার হয়নি।
শেখ হাসিনার প্রধান অলিগার্ক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এক রাতে ১০ লাখ লোককে হত্যা করা হবে।’ ওবায়দুল কাদেরের সে আশঙ্কা মিথ্যা প্রমান হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেড় মাস আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে না থাকলেও বেশির ভাগ নেতা নিরাপদেই রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সে হত্যাকাণ্ডের অপরাধে যে ৬ জন গ্রেফতার হয়েছে তার ৫ জনই ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে বিতর্ক চলছে। ওই সব হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এসব হত্যাকাণ্ড কোনো ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। মানুষ চায় এসব হত্যকান্ডের হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের যে অপপ্রচার, আওয়ামী লীগ নেতা ও হাসিনার দলদাস গণমাধ্যমগুলোর যে ভাবে প্রচারণা চালিয়েছে যে দেশের আইন শৃংখলার চরম অবণতি হয়েছে। বাস্তবে কি তাই! শেখ হাসিনা ১৫ বছরের শাসন ক্ষমতায় থেকে সবকিছুকে দলীয়করণ করেছিলেন। এমনকি ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইস, স্বাচিপ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও শিক্ষক সমিতি সবকিছুকেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনে পরিণত করা হয়েছিল। একই ভাবে সিভিল আমলা ও আইন শৃংখলা বাহিনীর মধ্যেও আওয়ামী লীগ অনুগতের প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। ফলে আইন শৃংখলা বাহিনী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিষ্ঠুর ভাবে শত শত মানুষ হত্যা করে ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করে। ফলে সাধারণ মানুষ পুলিশ বাহিনীকে নিজেদের প্রতিপক্ষ ভাবে। আর হাসিনা পালানোর পর আইন শৃংখলা বাহিনীর দায়িত্বরত সদস্যরা নিজেদের অপকর্ম বুঝতে পেরে ভীতি আতঙ্কে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকে। কেউ কেউ আত্মগোপন করে। ড. মুহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর কয়েকদিন দেশের প্রায় সবগুলো থানা পুলিশ শূণ্য ছিল। তারপরও বড় ধরণের অপ্রীতিকরা কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভারতের গণমাধ্যম এবং দেশের হাসিনার সেবাদাস গণমাধ্যমগুলো আইন শৃংখলার অবনতির মনগড়া তথ্য তুলে ধরে ডাকাতি-রাহাজানি নিয়ে ফলাও করে খবর প্রচার করেছে। বাস্তবতা হলো আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। পুলিশ না থাকলেও ছাত্ররাই আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে; রাজপথে দাঁড়িয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছে। রাজধানী ঢাকায় হাজার হাজার জুয়েলারি দোকান; আইন শৃংখলা অবণতি হলে এসব দোকানে দুস্কৃতিকারীরা হামলা করে লুটপাট চালাতো। সেটা হয়নি।
গণমাধ্যমে খবর বের হচ্ছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনেকেই দেশত্যাগ করে ভারতে গেছেন। তারা সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে পালাতে সক্ষম হন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ধরা পড়েছেন। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এরা দেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে কিভাবে? নেটিজেনদের হাজার বিলিয়ন ডলারের এ প্রশ্নের উত্তর কোথায়?
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন
গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২
আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান
জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার
গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন
ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান
হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের
দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার
শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?
ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল
এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়
নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে
স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার
‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন
ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন