শিশুদের সাথে এ কেমন প্রতারণা!
০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম
রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্র শাহবাগ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শহীদ জিয়া শিশু পার্ক। ঢাকার শিশুদের কাছে ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন কেন্দ্র। শিশু সন্তানদের আবদার মিটানোর জন্য বাবা-মা সন্তান ও আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে যেতেন শিশু পার্কে। হরেক রকম বিনোদন রাইডে উঠে আনন্দ-উল্লাস করতো শিশুরা। হয়তো অনেকের মানসপটে সেই স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বল করছে। একসময় ঢাকা শহরে শিশু-কিশোরদের আনন্দ-বিনোদনের প্রধান আকর্ষণ ছিল এই শিশু পার্ক। যে কোনো সরকারি ছুটির দিন বা ঈদের ছুটিতে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো শিশু-কিশোর এ পার্কে যেতো। কিন্তু সংস্কার বা আধুনিকায়নের কার্যক্রমের নামে চলমান থাকা অবস্থায় বন্ধ করে দেয়া হয়। বছরের পর বছর ধরে পার্কটি বন্ধ। নির্মাণ কাজও চলছে না তেমনভাবে। সেখানে এখন নেই শিশু-কিশোরদের সেই চিরচেনা কোলাহল। পুরো পার্কজুড়ে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। সৃষ্টি হয়েছে মাদক সেবনের আড্ডাখানা। এই শিশু পার্কটি নিয়ে হাসিনা সরকারের লোকজনের মাঝে ছিলো ইর্ষান্বিত মনোভাব। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম থাকার কারণেই মূলত পার্কটি বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে অবশ্য নামও পরিবর্তন করা হয়। শিশু পার্কটি নিয়ে মূলত রাজনৈতিক খেলাই খেলেছেন বেশি। প্রতারণা করেছেন কোমল মতি শিশুদের সাথে। বঞ্চিত করেছে ঢাকার সাধারণ শিশু-কিশোর ও ছিন্নমূল শিশুদের বিনোদন থেকে। এমনটাই জনালেন কয়েকজন অভিভাবক।
জানা যায়, পার্কটি চালু আছে বা পার্কের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে, এমন ধারণা থেকে এখনো প্রতিদিন সকাল-বিকেল শিশু-কিশোরদের নিয়ে শাহবাগে যেতে দেখা যায় অভিভাবকদের। বিশেষত, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেকেই পার্কটিতে ঘুরতে যাচ্ছেন। কিন্তু পার্কের কাছে গিয়ে তারা প্রতিনিয়তই আক্ষেপ আর হতাশা নিয়েই ফিরে যান। অভিভাবকদের অভিযোগ, শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে শিশু পার্ক আনন্দ-বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। অথচ পার্কটি সংস্কারের নামে বছরের পর বছর ধরে তালাবদ্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এটি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। পার্কটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বিনোদনের সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছে ঢাকার শিশু-কিশোররা। শিশু পার্কের ভেতরে যে রাইডগুলো ছিল এখন তার অধিকাংশেরই অস্তিত্ব নেই। চরকিজাতীয় আলাদা দুটি রাইড টিন দিয়ে ঘেরা। পার্কের পশ্চিম পাশে ঝোপঝাড়ে ফেলে রাখা হয়েছে বিমানবাহিনীর উপহার দেওয়া সেই জেট প্লেন। লতাপাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কোনো শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে পানি জমে থাকতেও দেখা গেছে। তৈরি হয়েছে মশা জন্মের কারখানা হিসেবে।
শাহবাগ শিশু পার্কের আগের নাম ছিল শহীদ জিয়া শিশু পার্ক। পরে পার্কটির নাম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু পার্ক করা হয়। এ পার্কের জায়গার মালিক গণপূর্ত অধিদফতর। পার্কটি পরিচালনার দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। তবে এখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় পার্কটির নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ করছে গণপূর্ত অধিদফতর। পার্কিং নির্মাণের এই কাজ শেষ হতে সময় লাগবে কতো বছর তা কেউ জানে না। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পার্কের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করেছিল ডিএসসিসি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশু পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশু পার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে।
প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। একই সময়ের মধ্যে শিশু পার্কের নিচে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসা পর্যটকদের গাড়ি পার্কিং ও কিছু অবকাঠামো সংস্কারকাজ শেষে এটি খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে শাহবাগে ১৫ একর জায়গার ওপর শহীদ জিয়া শিশু পার্ক নামে এ পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে শিশুদের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তখন থেকে পার্কটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা সিটি করপোরেশন। পার্কটিতে একটি খেলনা ট্রেন, একটি গোলাকার মেরি গো রাউন্ড রাইড ও একাধিক হুইলসহ ১২টি রাইড ছিল। ১৯৯২ সালে এ পার্কে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে সৌজন্য উপহার হিসেবে একটি জেট প্লেন দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দ্বিতীয় পরিষদের ১১তম বোর্ড সভায় শহীদ জিয়া শিশু পার্কের নাম পরিবর্তন করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু পার্ক করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যান্ত্রিক সার্কেলের প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশু পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৬ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়