জন্মনিবন্ধনে সমস্যা কাটছে না
০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম
শুধু স্কুলে ভর্তি নয়, চাকরিতে নিয়োগ, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ১৯টি ক্ষেত্রে জন্ম সনদ আবশ্যক। যে কারণে বছরজুড়ে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ নিতে ভিড় লেগে থাকে। পদ্ধতি নিয়ে ধারণার অভাব, প্রয়োজনীয় নথিপত্র জোগাড় করতে না পারাসহ নানা সমস্যায় ঘুরপাক খাচ্ছেন জন্ম সনদ করতে যাওয়া ব্যক্তিরা। একবার জন্মনিবন্ধন করা হলেও সেটি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে নিবন্ধন করাতে হচ্ছে। সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে বাবা-মায়ের জন্ম সনদ তৈরি, সংশোধন করতে হচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে কারো বাংলায় সনদ থাকলেও ইংরেজিতে নেই। কারও আবার ইংরেজি থাকলে বাংলা করা নেই। নিবন্ধনকারী কর্মীদের ভুলে সংশোধন করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে নাগরিকদের। সংশোধনে অনলাইনে আবেদনের একটি পদ্ধতি আছে। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজ শেষ করতে পারে না ভুক্তভোগীরা। আবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যে জন্মনিবন্ধন দিচ্ছে, সেটি গ্রহণ করছে না সরকারি অন্য সংস্থা। এতে যারা সেখান থেকে নিবন্ধন করিয়েছেন তারা জানেন না এখন কী হবে। নিবন্ধন করাতে বা সংশোধন করতে আসা লোকজন রাগারাগি করেন কর্মীদের সঙ্গে। জন্মনিবন্ধন নিয়ে এমন অবস্থাই চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে একটা জন্ম নিবন্ধনেই বাংলা ইংরেজি দুই ভাষাই থাকছে। এ অবস্থায় যাদের জন্ম সনদ ইংরেজিতে করা ছিল তাদেরগুলো সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস বাংলা করে দিয়েছে, বাংলাটা ইংরেজি করে দিয়েছে। এটা করতে গিয়ে অনেকের নামের বানান, ঠিকানা ভুল করা হয়েছে। এই ভুল সংশোধন করতে গিয়ে ছুটোছুটি এক ভোগান্তি, আরেক ভোগান্তি হল এর আগে কেবল একটি ভাষায় করা জন্ম নিবন্ধন এখন গ্রহণযোগ্য না। বাংলা, ইংরেজি দুটোই চাচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় জন্মনিবন্ধন নিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম হয়রানি করে অর্থ বাণিজ্য চলছে। এতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরি প্রার্থী, বিদেশগামীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, জন্মনিবন্ধন নিয়ে বিড়ম্বনা নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। বাড়তি টাকা না দিয়ে জন্মনিবন্ধন বা সংশোধন একেবারে সম্ভব নয়। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কর্মীরা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন এই অফিসটিকে। বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সংগে কথা বলে জন্মনিবন্ধন ও সংশোধনে দুর্নীতির এই তথ্য উঠে এসেছে।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে মোট ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৭টি জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ সংশোধনের আবেদন ঝুলে ছিল। এর মধ্যে ১৪২টি মৃত্যুনিবন্ধন সংশোধনের আবেদন। বাকিগুলো জন্মনিবন্ধন সংশোধনের আবেদন। জন্মসনদ সংশোধনের আবেদনের মধ্যে ৬৪ জেলায় ঝুলে ছিল ২০ হাজার ১২৮টি। ৪৯৫টি উপজেলায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৩টি। আর বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস-মিশনগুলোর মাধ্যমে এসে ঝুলে থাকা আবেদনের সংখ্যা ছিল ৩৪টি।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডিএনসিসির ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হন এই সিটির অঞ্চল-৪-এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা তুফানী লাল রবি দাস। তিনি বলেন, কিছু ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের জন্য নিবন্ধনকাজ বন্ধ ছিল। নিবন্ধন পেতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে বলে কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নেই। তবে কেউ যদি আবেদনের বিষয়ে খোঁজ পাচ্ছেন না বলে মনে করেন, তাহলে কার্যালয়ে এলেই সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের যেসব কার্যালয়ে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ আগে হতো, সেখানেই এখন নাগরিকদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস উপলক্ষে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ হাজার ২৪৬টি নিবন্ধন কার্যালয়ের ১০ হাজার ৪৯২ নিবন্ধক ও নিবন্ধন সহকারীর মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট জন্মনিবন্ধনের সংখ্যা ছিল ৭৭ লাখ ২৪ হাজার। আর মৃত্যুনিবন্ধনের সংখ্যা ৭ লাখ ৪৫ হাজার। সনদ সংশোধনের সংখ্যা ২৫ লাখ ১৭ হাজার। প্রতিদিন গড়ে এক লাখ নাগরিক বার্থ অ্যান্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশন ইনফরমেশন সিস্টেম (বিডিআরআইএস) থেকে সেবা নিচ্ছেন। সেবা নির্বিঘœ করার জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে ২৫০ টেরাবাইট অতিরিক্ত স্টোরেজ কিনে সিস্টেমে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে নাগরিকদের জন্য এখন আবেদনের প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। বর্তমানে ডকুমেন্ট আপলোডে স্টোরেজ ১০ গুণ বাড়িয়ে ২০০ কিলোবাইটের জায়গায় ২ মেগাবাইট করা হয়েছে। এই দুই পরিবর্তনের কারণে সিস্টেমের গতি স্বাভাবিক হয়েছে। নাগরিকেরা সহজে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। কিন্তু বিডিআরআইএসে জন্মনিবন্ধনের সংখ্যা প্রায় ২৩ কোটি। বিদ্যমান বিডিআরআইএস থেকে আগের সিস্টেমের (বিআরআইএস) দ্বৈত, অসম্পূর্ণ, ভুল, বিশৃঙ্খল ডেটা দূরীভূত করে একটি শুদ্ধ ডেটাবেজ তৈরি করা কার্যালয়ের বড় চ্যালেঞ্জ। বিডিআরআইএসের ডেটা ক্লিনজিং, ডেটা ডি-ডুপ্লিকেশন করার জন্য সরকারি ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধনের জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আবেদন করেন। আবেদনটি কী অবস্থায় আছে, তা জানার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে যান এবং গিয়ে দেখেন সেখানে কাজ বন্ধ। এরপর স্থানীয় কয়েকজন জানিয়ছেন আঞ্চলিক কার্যালয়ে যেতে। এখন আমার জন্মনিবন্ধনটি সংশোধন করতে কতদিন লাগবে তা জানিনা।
রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসেন বলেন, প্রতি মাসে জন্ম ও মৃত্যুর সনদ সংশোধনে দুই লাখের বেশি আবেদন আসে। সেই হিসাবে যে পরিমাণ আবেদন ঝুলে আছে, সেটাকে খুব বেশি বলা যায় না। ধারণা করা যায়, এই আবেদনগুলো দু-তিন মাসের বেশি পুরোনো নয়। নাগরিকেরা যেন সহজে সেবা পান, সে জন্য সিস্টেমের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। কাজে গতি এসেছে। সংশোধনের কাজ বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। ফলে স্থানীয় পর্যায় থেকেই সনদ সংশোধন করা হচ্ছে। আগের চেয়ে সংশোধনের আবেদন জমে থাকার হার এখন অনেক কমেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
থেমে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পেছনে বাসের ধাক্কায় এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত ২, আহত ৫
সোমবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
৭ বিয়ে নিয়ে যা বললেন সোহেল তাজ
তিউনিসিয়ায় দুই নৌকাডুবিতে ২৭ অভিবাসীর মৃত্যু
লাস ভেগাসে সাইবারট্রাক বিস্ফোরণ: বিশেষ বাহিনীর সেনার আত্মহত্যা
৮ ডিগ্রিতে নামলো তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ
আরিচা-কাজিরহাট ফেরি ৬ ঘণ্টা পর আবার চলাচল শুরু
আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজি, বিএনপি নেতা বহিষ্কার
দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার অভিযানের প্রস্তুতি, বিক্ষোভে উত্তাল দেশ
ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
গাজায় চিকিৎসা সংকট সমাধানে ডব্লিউএইচও প্রধানের আহ্বান
ঢাবি শিবিরের নতুন সভাপতি ফরহাদ, সেক্রেটারি মহিউদ্দিন
ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল যুদ্ধ: অবশেষে সংস্কারের আশ্বাস দিলেন এডিএম
সীতাকুণ্ডে হাত-পায়ের রগ কেটে শ্রমিক দল নেতাকে হত্যা
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার