রেলে লোকসান সব ক্ষেত্রে
০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
রেলে লোকসান যেন সব ক্ষেত্রে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, আর্থিক কেনাকাটা ও ট্রেন পরিচালনায় সবখানেই শুধু লোকসান আর লোকসান। বড় বড় মেগা প্রকল্পে অনিয়ম। ডেমু ট্রেন প্রকল্পে লোকসান। অপ্রয়োজনীয় স্থানে স্টেশন নির্মাণ, কর্তা ব্যক্তিদের নির্দেশনায় প্রকল্প নেয়া ছাড়াও রয়েছে ম্যাংগো স্পেশাল ও ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন পরিচালনায় লোকসান। সর্বশেষ লোকসানের চাপে বন্ধ হয়ে গেলো কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন। রেলে সেবার মান বাড়ানোর জন্য আর্থিকভাবে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হলেও বাড়েনি সেবার মান। এছাড়া বিনিয়োগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেলওয়ের লোকসানও।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত বিনিয়োগের খেসারত দিচ্ছে রেলওয়ে। গত এক যুগে রেলওয়ের জন্য করা বিনিয়োগ ছাড়িয়েছে অতীতের সব রেকর্ড। শুধু এর উন্নয়নের জন্য এ সময় খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ এ অর্থে বেশকিছু মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নও হয়েছে। তবে বাড়েনি যাত্রীসেবা, যাত্রীদের অনেক অভিযোগ রয়ে গেছে এখনও। আয় বাড়ানোর উদ্যোগ না নিয়ে অহেতুক নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের খেসারত দিচ্ছে খাতটি। নিয়মিত যাত্রীদের দুর্ভোগ তো রয়েছেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু এতেই শেষ নয়, এত উন্নয়নের মধ্যেও রেলওয়ের ৬৫ শতাংশ লাইনই ঝুঁকিপূর্ণ। ৭০ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন আর কোচ সঙ্কট নিয়ে চলছে খাতটি।
রেলওয়েতে স্বল্প দূরত্বে যাত্রী উচ্চমানের সেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ৬৫৪ কোটি টাকায় ২০ সেট ডেমু ট্রেন কেনা হয়েছিল। ২০১৩ সালে চীন থেকে আনা এসব ২৫-৩০ বছর সচল থাকার নিশ্চয়তাও দেয়া হয়েছিল। তবে চালুর পরে মাত্র ৫ বছরও চলেনি এসব ডেমু ট্রেন। ২০১৯ সাল থেকে ডেমু ট্রেনে যাত্রী পরিবহন সেবা বন্ধ হয়ে যায়। অথচ ডেমু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও মেরামত বাবদ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৩৩ হাজার ৪০ টাকা খরচ করে ফেলেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ডেমুর জ্বালানি ও যন্ত্রাংশ ক্রয় বাবদ সরকারের ২ কোটি ৪৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪১ টাকা অপচয় করা হয়েছে। এ দুই অর্থ বছরে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা অপচয় করেছে রেলওয়ের দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলী কার্যালয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে (অডিট রিপোর্ট) উঠে এসেছে এমন তথ্য।
গত কয়েক বছরে কোটি টাকা লোকসান হয়েছে ম্যাংগো স্পেশাল ও ক্যাটল স্পেশাল ট্রেনের। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই আবারও চালু হয়েও বন্ধও হয়ে গেছে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন। একদিন চালানোর পরই পশ্চিমাঞ্চল রেল ট্রেনটি বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। আম পরিবহনের জন্য ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর চালানো হয় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। রাজশাহী থেকে ঢাকা কেজিপ্রতি আম পরিবহণে খরচ পড়ছে দেড় টাকা। কিন্তু এরপরও ট্রেন লোকসানে চলে। সাড়া মেলে না ব্যবসায়ীদের। গত মৌসুমে শুধু যমুনা সেতু বাদ দিয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন ঢাকায় নিয়ে বাড়তি এক লাখ ৫৪ হাজার ৪০৮ টাকা বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে। কৃষকের উৎপাদিত সবজি ঢাকার বাজারে কম খরচে সরবরাহের জন্য চালু হয়েছিল কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন। তবে উদ্বোধনের দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে ঢাকায় চলেই বন্ধ হয়ে যায় এই বিশেষ ট্রেনটি। ছয়টি রুটে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চালু হয়েছিল। কৃষকদের সাড়া না পাওয়া এবং খরচ তুলতে না পারায় পাঁচটি রুটে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রহনপুর-ঢাকা রুটে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনটিতে পাঁচটি লাগেজ ভ্যান বগি। এরমধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি একটি, বাকি চারটি সাধারণ বগি। অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে কৃষিপণ্যের মধ্যে ফল, সবজি ছাড়াও রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে হিমায়িত মাছ, গোশত ও দুধ পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
২২ অক্টোবর খুলনা-ঢাকা রুটের কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনে ১ হাজার ৮৬০ কেজি পণ্য বুকিং হয়। এতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৩২০ টাকা। ২৪ অক্টোবর পঞ্চগড়-ঢাকা রুটের ট্রেনে ৭৬০ কেজি পণ্য বুকিং হয়। আয় হয় ১ হাজার ২৯৬ টাকা। ২৬ অক্টোবর রহনপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)-ঢাকা রুটের ট্রেনে মাত্র ২৬০ কেজি পণ্য বুকিং এ আয় হয়েছে ৪৮২ টাকা। উত্তর-দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকা চলাচলকারী কৃষিপণ্যবাহী এ তিনটি ট্রেনে মোট ২ হাজার ৮৮২ কেজি পণ্য পরিবহন করা হয়। এতে রেলের আয় হয়েছে ৪ হাজার ৯৮ টাকা।
আরেকদিকে ট্রেনের সময় সকালে হওয়ায় বাজারজাত নিয়েও রয়েছে নানা শঙ্কা। তবে বিকেল কিংবা রাতে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করলে দিনের কৃষিপণ্য তুলে রাতভর পরিবহন করে সকালে মোকামে পৌঁছনো যায়। এ ছাড়া ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়সহ নানা কারণে সময়মতো মালামাল পৌঁছাতে না পারলে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কৃষকের সঙ্গে ঢাকার ব্যবসায়ীদের সমন্বয় ও আবহাওয়া খারাপের কারণে প্রথমদিন সবজি আসেনি। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ট্রেনটি ব্যবহার করতে পারলে ভালো হতো। তবে ট্রেনটি যে চালু হবে সেটি ব্যবসায়ীরা জানেন না। তাদের কেউ জানায়নি। রেল বা কৃষি অধিদফতর থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। বর্তমান সময়ে সবকিছুতেই প্রচারের প্রয়োজন আছে। রেলের লোকজন শুধু তাদের মতো করে কাজ করলে হবে না। ব্যবসায়ীদেরও বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের (পশ্চিমাঞ্চল) চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, ট্রেনটি চালুর পর কৃষক বা কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী ও কৃষকের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তারা ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনে আগ্রহী নন। সেজন্য ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, একদিকে রেলের পেছনে বিনিয়োগ বাড়ছে, অন্যদিকে এর আয় কমছে। আয় এবং বিনিয়োগের মধ্যে একটা বড় ফারাক হয়ে গেছে। যে প্রকল্পগুলোর প্রয়োজন নেই বা অনেকটা ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্প আছে, সেখানে তারা বিনিয়োগ করছে। কেনাকাটায় যে অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে, সেটার জন্যও রেলওয়ে লোকসানে পড়ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন
হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট
শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ
আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা
শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ