ভোলপাল্টিয়ে ভিড়ছে বিএনপি-জামায়াতে
০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
পতিত হাসিনা সরকারের ১৬ বছরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে রূপান্তরের সরকারি ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়নি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা ফাউন্ডেশনের সরঞ্জাম ক্রয়ের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং তাদের একাস্ত সহকারী সচিবরা এ প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়েছেন। গত ৫ আগস্টের পরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অসাধু কর্মচারী এবং হাসিনার দোসরা ভোল পাল্টিয়ে বিএনপি-জামায়াত বলে দাবি করে একে অপরকে হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরছেন। ফাউন্ডেশনের ষ্টোর কিপার আব্দুল আল জাহির এবং উপ-পরিচালক এসএম জাহিদুল সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় হিসাবে সংস্থাটিতে দাপটের সঙ্গে রয়েছেন। ষ্টোর কিপার আব্দুল আল জাহির আওয়ামীলীগের ফরিদপুর জেলা কমিটিতে রয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত অতি নিম্নমানের থেরাপি যন্ত্রপাতি কম দামে কিনে উচ্চ মূল্যে বিল তুলে নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। অপরদিকে সংস্থার এক অফিস সহায়ক নারীর সাথে অশোভন ও অনৈতিক আচরণ করার কারণে পরিচালক উন্নয়নের দায়িত্ব সেলিম হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থপনা পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে।
প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ঘাটতি থাকায় দেশের অধিকাংশ প্রতিবন্ধী মৌলিক মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া রাষ্ট্রীয় বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ অর্থ বাস্তবসম্মত ও যথেষ্ট নয় এবং যে বরাদ্দ দেয়া হয় তাও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে যথাযথভাবে তাদের কাছে পৌঁছায় না। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, পরিবহন, সার্বিক অবকাঠামো, সম্পদের ওপর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতির কারণে উন্নয়নে প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে বলেও মনে করে সংস্থাটি। এছাড়া সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর নিয়মিত তদারকি ও নিরীক্ষা না হওয়ায় সেবা প্রদান কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ঘাটতি থাকায় অধিকাংশ ব্যক্তি মৌলিক মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কিছু অসাধু কর্মচারীর বিরুদ্ধে চিকিৎসা সহায়ক সরঞ্জাম ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত অতি নিম্নমানের থেরাপি যন্ত্রপাতি কম দামে কিনে উচ্চ মূল্যে বিল পরিশোধ করছে। বিশেষ ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানকে সরঞ্জামগুলো সরবরাহের কাজ পাইয়ে দেওয়ার সঙ্গে চক্রটি জড়িত। ভুক্তভোগীরা নিম্নমানের সামগ্রী পেয়ে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদনও করেছেন। প্রতিবন্দী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অফিস সহায়ক নারীর আবেদনে বলা হয়, গত ১৬ অক্টোবর দুপুর উপ-পরিচালক (কার্যক্রম) সেলিম হোসেন তার অফিস রুমে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে অশোভন ও অনেতিক আচরণ করেন।
উপ-পরিচালক এসএম জাহিদুল হাসান ইনকিলাকে বলেন, প্রকল্পের সব কর্মচারীকে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে যোগদান করতে বলেছি। এখানে টাকা-পয়সার কোনো বিষয় ছিল না। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। কতদিন সংস্থাটিতে কর্মরত আছেন এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে এসএম জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের প্রশ্নে তিনি বিব্রতবোধ করছেন। শিক্ষা ক্যাডারের ২২তম বিবিএসের এই কর্মকর্তা ২০১৮ সালের ৩০ জুন থেকে সংস্থাটিতে কর্মরত। তিনি সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় হিসাবে সংস্থাটিতে আছেন দাপটের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, আমি ১৬ বছর থেকে বঞ্চিত আছি। যারা পতিত হাসিনা সরকারের দালালি করেছেন, তারাই আজ বিএনপি-জামায়াত সেজেছে। উপপরিচালক রেজাউল এসব কাজ করেছেন। আপনারা তাকে ধরেন।
জানা গেছে, ফাউন্ডেশনে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রমোশন অব সার্ভিসেস অ্যান্ড অপারচ্যুনিটিজ টু দ্য ডিজঅ্যাবল পারসন্স ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ৩০ জুন। প্রকল্পের আওতায় মাঠপর্যায়ে ৫০টি অফিস আছে। এসব অফিসে কর্মরত স্টাফ, গার্ড, ড্রাইভার, হেলপারসহ অন্যান্য পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হয় আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যেমে। ওই প্রকল্পের কর্মচারীদের চাকরি রাজস্ব খাতে অর্থাৎ নবগঠিত জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে আত্তীকরণে সক্রিয় একটি চক্র। চক্রটি সংস্থার মূল কাঠামোতে চাকরি আত্তীকরণের প্রলোভন দেখিয়ে কর্মচারীদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। ফাউন্ডেশনের আওতায় দেশে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জনবলও সংস্থাটির মূল কাঠামোতে যোগ দিতে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। সংস্থাটির কিছু নন-ক্যাডার কর্মচারী নিম্নমানের থেরাপি মেশিন, হুইল চেয়ারসহ যাবতীয় কেনাকাটা সম্পন্ন করে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের সব অপকর্ম জায়েজ করেন। দরপত্র কমিটির বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ) অভিযোগ করে। সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ) করা অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং সংস্থটি রি-টেন্ডারে বাধ্য হয়।
এক উপপরিচালক নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যেমে নষ্ট যন্ত্রপাতি মেরামত করার নামে লাখ লাখ টাকার বিল হাতিয়ে নিয়েছে। ওই উপ-পরিচালক টেন্ডারে মালামাল ক্রয়ের জন্য তিনি নিজেই দর ও পরিমাণ ঠিক করে থাকেন। এছাড়া যে প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয় সে প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দরপত্র তৈরি করা হয়। ওই উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের ওই সভাপতির স্ত্রীর নামের প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার যন্ত্রপাতি সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির ওই ডিডি ডিজঅ্যাবল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এডুকেশন ফাউন্ডেশন একটি এনজিও পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসাবে তিনি আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ ভ্রমণও করেছেন। সেবা নিতে আসা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবাসিক সুবিধা দিতে ২০১৯ সালে ফাউন্ডেশনের জন্য নির্মিত ১৫ তলার একটি ভবনে ২টি তলা (ফ্লোর) রাখা হয়। ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা বরাদ্দ করা হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবাসিক সুবিধা দেওয়ার জন্য। এমনকি এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জামও কেনা হয়। তবে পাঁচ বছর পার হতে চললেও এখনো সেখানে আবাসিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এখানে এসে দিনের মধ্যেই সেবা নিয়ে চলে যান। ১৩ অক্টোবর সরেজমিন ভবনটির পঞ্চম তলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের থাকার জন্য ৬০টি শয্যা পড়ে আছে। তবে সেখানে কেউ নেই। আলমারি, টেবিল, চেয়ার, ফ্যানসহ অন্যান্য সরঞ্জাম অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। অন্যদিকে ষষ্ঠ তলা গিয়ে দেখা যায়, সেটি ফাউন্ডেশনের ‘স্টোররুম’ হিসেবে ব্যবহৃর হচ্ছে। ফাউন্ডেশনটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংস্থা। ১৯৯৯ সালে সংস্থাটি গঠিত হয়। ফাউন্ডেশনের সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের আবাসিক সুবিধা দিতে ২০১৯ সালে বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়। আবাসিক সুবিধা চালু করতে গেলে চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্ট, অফিস সহায়ক ও পিয়নের মতো জনবল দরকার। গত ২০১০ সালে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে পূর্ণাঙ্গ অধিদপ্তরে রূপ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। পরে ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরে রূপান্তরের ঘোষণা করে সরকার। সে সময় একটি নামফলকও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উপ-পরিচালক রেজাউল করিম ইনকিলাবকে বলেন,আমাকে আওয়ামলীগ সরকারের সময় রাজাকারে ছেলে বলতো। এখন তারাই আবার জামায়াত বিএনপি সেজে কাজ করছেন। আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করছেন তারা মিথ্যাচার করছেন। কারণ আমি এ সংগঠনের সভাপতি। তারা পদ দখলের জন্য এ গুলো করছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন
হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট
শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ
আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা