প্রাথমিক থেকে মাদরাসায় যাচ্ছে ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী
১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান, শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি, মিড ডে মিলসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। অন্যদিকে প্রায় ১৮ হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার মাত্র ১ হাজার ৫১৯টি প্রতিষ্ঠানের ৬ হাজার ৭৬ জন নামমাত্র ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। ভিনদেশী এসব মাদরাসা শিক্ষার্থীদের (একই দেশের নাগরিক হয়েও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হওয়ায়) উপবৃত্তি কিংবা মিড ডে মিল নিয়ে তো সরকার কখনো ভাবেইনি। তারপরও প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেড়ে মাদরাসা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের। প্রায় ২৭ শতাংশ (২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ) শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেড়ে ভর্তি হচ্ছেন মাদরাসায়। এর কারণ হিসেবে একদিকে যেমন কাজ করছে অভিভাবকদের ধর্মীয় অনুভূতি, অন্যদিকে অভিভাবকরা মনে করেন মাদরাসায় সন্তান দিয়ে নিরাপদ থাকা যায়। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন ও ঝরে পড়ার অবস্থান বিশ্লেষণ: ময়মনসিংহ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় ১৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে নমুনায়নের মাধ্যমে ৪৪টি হতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২০২৩ সালের জুলাই হতে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
ওই গবেষণায় তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়ার গড় হার ৩৭ দশমকি ৭৫ শতাংশ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থানান্তর হয় মাদরাসায়। এই হার ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। অন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত সরকারি প্রাথমিকে ৩ দশমিক শূণ্য চার শতাংশ, কিন্ডারগার্টেনে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং এনজিও বিদ্যালয়ে ১ দশমিক ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী চলে যায়।
শিক্ষার্থীদের মাদরাসায় চলে যাওয়ার কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়, অভিভাবকদের ধর্মীয় অনুভূতি, করোনাকালীন স্কুল বন্ধ ছিলো কিন্তু মাদরাসা চালু ছিলো, অভিভাবকরা মনে করেন মাদরাসায় সন্তান দিয়ে নিরাপদ থাকা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উত্তরদাতারা বলেন, শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব বা স্কুলে লেখাপড়া না হওয়ায় সন্তানকে মাদরাসায় নিয়ে গেছেন। আবার অনেক অভিভাবক মনে করেন, বর্তমানে বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়ায় চাকরির অভাব। কিছু অভিভাবক বলেন, সরকারি প্রাথমিকে পরীক্ষার সংখ্যা কম সেজন্য তাদের সন্তানদের মাদরাসায় ভর্তি করেছেন।
গবেষণায় আরো বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার গড় হার ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এরমধ্যে বালক ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও বালিকা ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঝরে পড়ে জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ দশমিক ৯১ শতাংশ। শহর এলাকার সরকারি প্রাথমিকে ১০ দশমিক ৮৭, গ্রামীন এলাকার প্রাথমিকে ১১ দশমিক শূণ্য ১, পুরাতন সরকারি প্রাথমিকে ৯ দশমিক ৩৬, এ-গ্রেডভুক্ত সরকারি প্রাথমিকে ৯ দশমিক ৯৫ এবং বি-গ্রেডভুক্ত সরকারি প্রাথমিকে ঝরে পড়ে ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।
ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, দারিদ্রতা, অভিভাবকদের অসচেতনতা, শিশুশ্রম, লেখাপড়ায় অমনোযোগিতা, পারিবারিক সমস্যা, অভিভাবকদের বাসস্থান পরিবর্তন, করোনায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকা, শিক্ষকদের অবহেলা ও অদক্ষতা, অনিয়মিত উপস্থিতি, বাল্যবিবাহ, খেলাধুলার প্রতি নেশা, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দুর্বল হওয়ায় তৃতীয় শ্রেনীতে গিয়ে ঝরে পড়ে।
ঝরে পড়া অভিভাবকদের পেশা সম্পর্কে বলা হয়, দিনমজুর ও শ্রমিকদের সন্তানরা সবচেয়ে বেশি ৪৭ শতাংশ ঝরে পড়ে। এরপর কৃষকদের সন্তান ১৭ শতাংশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ১৩ শতাংশ, অটো-সিএনজি-বাস-ট্রাক চালক ৮ শতাংশ, কাঠমিস্ত্রি-রাজমিস্ত্রি ৪ শতাংশ, গৃহকর্মী ৩ শতাংশ এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের সন্তানদের ঝরে পড়ার হার ১ শতাংশ।
গবেষণায় ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে- শিক্ষার্থীর তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ডাটাবেজ তৈরি, শ্রেনীকক্ষ সুসজ্জিত ও খেলাধুলার সামগ্রীর ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, স্কুল ফিডিং এর ব্যবস্থা করা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকের ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অন্যতম।
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে খাবার কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে। স্কুলগুলোকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে বাচ্চারা আনন্দের সাথে লেখাপড়া করতে পারে। শিক্ষার্থীদের সমাজের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের যৌক্তিকভাবে শেখাতে হবে, যাতে সে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারে।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কনসালটেন্ট দেবরাহ ওয়েবার্ন, নেপ এর সহকারী বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান এবং এটিএম রাফেজ আলম।
নেপ এর মহাপরিচালক ফরিদ আহমেদের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিম, ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অফ ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন মাইকেল ক্রেজজা প্রমুখ।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালায় কিন্তু খালেদা জিয়া পালায় না-গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
মণিপুরে পুড়িয়ে মারার আগে ৩ সন্তানের মাকে ভয়াবহ নির্যাতন
সমাজবিধ্বংসী ইসলামবিরোধী এবং খুনীদের সহযোগীকে উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভূক্ত করে উপদেষ্টা পরিষদকে কলঙ্কিত করা হয়েছে- কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন
ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে সকল আলেম-ওলামাদের হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে মতবিনিময় সভায় মাহমুদুর রহমান
বাবরের দুই রেকর্ডের ম্যাচে পাকিস্তানের হার
ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় রাশিয়া, চীনের প্রশংসায় এরদোগান
ইসলামী আন্দোলনের আমীর গণ বিপ্লবের মহানায়ক ছিলেন: মাও. জাফরী
ভিয়েতনামে পুরস্কার জিতলো আফসানা মিমির সিনেমা প্রকল্প ‘রেড লাইটস ব্লু অ্যাঞ্জেলস’
শিক্ষার্থীর উপর হামলার জের বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজে মানববন্ধন
ইউরোপের প্রথম এআই গায়ককে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
আইন পাসে বাধা, জার্মানির সংসদে বিরোধীতা চরমে
রাজশাহী মেডিকেল টেকনোলজি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অচল করে দেয়ার হুশিয়ারী
চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার
‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ইরানে মানবাধিকার কর্মীর আত্মহত্যা
দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যের কোন বিকল্প নেই- এ জেড এম জাহিদ
বগুড়ায় বাড়ছে ডেঙ্গু
শাহজাদপুরে আ.লীগের সাবেক ২ এমপি কবিতা ও চয়ন ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের
আলেমদের রাজনীতি আল্লাহর নবীদের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার পাকিস্তানের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজলুর রহমান
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে স্ত্রীর হাতে স্বামী খুনের অভিযোগ
এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর, বেড়েছে ১০০ টাকা ফি