যমুনায় চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন
২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
শিবালয়ে ’হাত বদলে’ আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। তীব্র নদী ভাঙনেও যমুনায় চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে একটি হাই স্কুল, মুজিব কেল্লা, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। নতুন করে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে আরো অনেক মসজিদ, মাদরাসাসহ কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাঙন আতংকে অনেক চিন্তিত নদী পারের মানুষজন। অবৈধ ড্রেজার বন্ধ এবং ভাঙন রোধে সম্প্রতি মানববন্ধন করেছে তেওতা ইউনিয়নবাসী। তারা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের যমুনা নদীতে হাসিনা সরকারের আমলে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে। বরাবরই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। বিগত দিনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই অবৈধভাবে এ বালু উত্তোলন করা হতো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্যসহ জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। তাদের সিংহভাগই হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া আত্মগোপনে আছেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দলীয় শীর্ষ পদধারীরা। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারাই মূলত শিবালয়ের বালুমহল নিয়ন্ত্রণ করতেন। গত ৫ আগস্টের পর তারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। বর্তমানের প্রভাবশালীদের সহযোগতীতায় সেই আগের বালুচক্রের সদস্যরাই শুধু হাত বদলের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বালুমহালের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই শিবালয়ের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শিবালযের প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ বালু উত্তোলন চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বা কোনো অপরাধ করলে দল তার দায়ভার নেবে না। কেউ যদি অন্যায় অনিয়ম করে, তার দায় তাকেই নিতে হবে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আইন অমান্য করে উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া এলাকায় যমুনা নদীতে কাটার বসিয়ে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। বিগত সরকারের আমলেও এখানে ও এর আশপাশ এলাকায় বালু উত্তোলনের কারণে ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি ও বসতবাড়িসহ অনেক স্থাপনা। ভাঙনের কবলে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শিবালয় ইউনিয়নের চরশিবালয় এলাকার সম্পূর্ণ অংশ। তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়ার এক তৃতীয়াংশ এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। বাড়িঘর হারিয়েছে হাজারও মানুষ। অব্যাহত নদী ভাঙনে চরশিবালয় ও আলোকদিয়ায় স্থাপিত ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প-১-২, প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রস্তম আলী হাওলাদার উচ্চ বিদ্যালয়, ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লা, মধ্যনগর ও চরবৈষ্টমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আলোকদিয়ায় যমুনা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অপরদিকে চলছে নদী ভাঙন।এতে চরম আতংকে রয়েছেন নদী সিকস্তি এলাকার মানুষ।
অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক, শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে তেওতায় এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভাঙনকবলিত আলোকদিয়া এলাকার মো. ফরিদ মিয়া বলেন, যারা নদী থেকে মাটি তোলে তারা দলীয় প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা কিছু বলতে পারছি না। আপনারা যদি কিছু করতে পারেন। এরা ৭নং টাওয়ার এবং এর আশপাশ এলাকায় দফায় দফায় মাটি কাটছে। বিগত সরকারের আমলে যারা মাটি কেটেছে এখনও তারাই মাটি কাটছে। এরা আমাদের গ্রামটি শেষ করে দিয়েছে। আমাদের গ্রামটি দীর্ঘ দুই মাইল লম্বা ছিল। বর্তমানে আমাদের গ্রাম এখন হাফ-কিলোও নাই। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কারণে উক্ত গ্রামের বাকী অংশের সবটুকই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া রাহাতপুর, চরবৈষ্টমী, টেংগুরহাটা ও আশ্রয়ণ প্রকল্প সবই নদীতে চলে গেছে।
একই এলাকার খায়ের মোল্লা বলেন, আজ (সোমবার) সকালে দেখেছি তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়ার পাশে মুজিব কেল্লার একটু ভাটিতে যমুনা নদীতে কাটার লাগানো হয়েছে। এর আগেও এরা এখান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটেছে। যে কারণে মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া কাটার দিয়ে মাটি কাটালে চরের জমিজমা উঠবে না এবং আমরা চাষাবাদও করতে পারবো না।
স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় প্রশাসনের মদদে অব্যহত নদীর মাটি উত্তোলনে গ্রামের পর গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শুধু মাত্র হাত বদলের মাধ্যমে একই কায়দায় মুষ্টিমেয় প্রভাশালী কিছু লোকের পকেট ভারি করার জন্য এমন কাজ আবার শুরু হয়েছে। যা দেখার যেন কেউ নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন যমুনা নদীতে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। এমন কর্মযজ্ঞের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হবিগঞ্জের সড়কে প্রাণ গেল তিন নারী পোশাক শ্রমিকের
বরিশালে জাতীয় মহাসড়কের ওপর নির্মিত পাক অপসারণে নগর ভবনকে সড়ক অধিদপ্তরের চিঠি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাতাহাতি, আহত ৩
দুইবার আবেদন করেও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় মাল্টার নাগরিকত্ব পায়নি তারিক সিদ্দিকের পরিবার
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
এবি পার্টির জাতীয় কাউন্সিল শুরু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
মায়ের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে হাসপাতালে তারেক রহমান
রাজশাহীতে এবেলা ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
লোহিত সাগরে হুথিদের হামলায় পিছু হটল মার্কিন যুদ্ধজাহাজ
আশুলিয়ায় মেরামতের নাম করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে
'বিয়ের গন্ডগোল' নিয়ে জোভান–তটিনী আত্মপ্রকাশ
ভারতে বসে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন ফ্যাসিস্টের দোসর আলাউদ্দিন নাসিম
রুশ জ্বালানিখাতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা
সিরিয়ার দামেস্কের মসজিদে পদদলিত হয়ে নিহত ৪ জন
কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসছে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল
খাদ্য পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত নজর রাখতে পুনর্গঠন হলো এফপিএমসি
দেশে অস্তিত্বহীন দলবাজরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করছে: জয়নুল আবদিন ফারুক
ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা
ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ১২ বাংলাদেশি
লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সবশেষ যা জানা গেল