ফরিদপুরে অসময়ে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র নদীভাঙন
৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ফরিদপুরের অসময়ে চলছে তীব্র নদী ভাঙন। ভাঙছে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভয়াবহ এ ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে হাজার হাজার নদীর পাড়ের বসতিরা। এ ভাঙন চলছে সদর উপজেলার মদনখালী রেগুলেটর হতে পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের বাড়ী সুজন বাধিয়ার ঘাট পর্যন্ত। উল্লেখিত স্থান থেকে দুরত্ব তিন কিলোমিটার। উভয় পাড়ের ভাঙের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ কিলোমিটার।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে কমপক্ষে ৬০টি পয়েন্ট তীব্র ভাঙ্গনের ভয়াবহতা দেখা যায়। ঘর বাড়ি ও ফসলি জমি, বিভিন্ন স্থাপনা এখন নদীগর্ভে। এদের মধ্যে বহু পরিবার আছে দুইবার নদী ভাঙার শিকার হয়ে কেউ নদের পাড়ে বাড়ী করছে। কেউবা সরকারের রেলের জায়গা নদের তীরে বাড়ী করে একটু ঘুমানোর শেষ আশ্রয়স্থল তৈরি করছেন।
ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মানদীর প্রধান শাখা নদী কুমার নদের তীব্র ভাঙনে নদী পাড়ের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে সবাই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। কখন জানি তার বাড়িটি ভেঙে নদে আঁছড়ে পড়ে। এই ভাঙন পদ্মা-মেঘনা-বা যমুনার নয়। তাও শাখা নদী কুমার নদের অসময়ের অব্যাহত তীব্র ভাঙ্গনে নদীর পাড়ের হাজারও পরিবার মহা দুঃশচিন্তায় পড়ে গেছে। প্রতি দিন নতুন নতুন বাড়ি ঘর কুমার নদীর তীর ভাঙ্গনে বড় বড় মাটির চাপ বসত ভিটার তলদেশের অংশসহ ধুমড়ে মুচড়ে নদের বুকে আঁচড়ে পড়ছে।
ইতোমধ্যে ফরিদপুর চুনঘাটা ব্রীজ সংলগ্ন পূর্ব ও পশ্চিমাংশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনে ৫০/৬০টি পরিবারের বাড়ী ঘর, ফসিল জমি, ফলদও গাছপালাসহ নদের বুকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ভাঙ্গন কুমার নদী পারের বাসিন্দাদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। নদী ভাঙ্গন একবারেই বিধ্বংসি হয়ে পড়ছে। অসময়ে তীব্র নদীভাঙ্গন এখন অসময়ের বড় দুর্যোগ। ঘুর্ণিঝড়ে ঘড় বাড়ী উড়ে গেলেও নিজের ভিটা গাছপালা কিছু হলেও থাকে। কিন্তু নদীভাঙ্গনে ভিটে মাটি জমিজিরাত গাছ পালা সব কিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। সদর উপজেলার ৮/৯ নং ওয়ার্ড দুটির কুমার নদীর দুই পাড়ে যে সকল বসতি আছে তাদের বাড়ী ঘর কোন রকমই রক্ষা হচ্ছে না।
ভাঙ্গনের বিষয়ে মো. জিহাদ হোসেন জাহিদ বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম থেকে ভাঙন শুরু হলেও গত একমাস যাবৎ পরিমাণ একটু বাড়লেও গত এক সপ্তাহে ভাঙনের তীব্রতা এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা হঠাৎ করে দেখেই আঁতকে ওঠছে।
এই বিষয় মো. আক্কাস আলী বলেন, গত ৭২ ঘণ্টায় কুমার নদের ৮/৯ নং ওয়ার্ডের চুনাঘাটা এলজিইডির ব্রীজের পূর্ব এবং পশ্চিম পাশের নদীর উভয় পাড়ে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নদীতে সামান্য পানি থাকায় এই ভাঙন দেখা না গেলেও এখন নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ায় নদীভাঙন দৃশ্যমান হয়ে পড়ছে। দৃশ্যমান হয়ে ওঠছে, নদীর দুই পাড়ের তীব্র ভাঙনের ভয়াবহতা। গতকাল শুক্রবার এ সংবাদদাতা সরেজমিনে ৯ ওয়ার্ডের মদনখালী রেগুলেটর হতে নদীর পাড় দিয়ে পায় হেঁটে কুমার নদীর ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে প্রতিবেদনে কালে এই তীব্র ভাঙ্গনের ভয়াবহতা দেখতে পান।
এসময় কথা হয় দলিল লেখক মো. সাইফুল ইসলাম, দলিল লেখক মো. ফরিদ জমিদারের সাথে। তারা বলেন, নদীতে ভাঙতেছে তাতে জরুরি ব্যবস্থা না নিলে শত শত বাড়ী ঘর কুমার নদে পড়ে যাবে।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা মো. আতিক প্রামাণিক বলেন, বহু দুর্যোগ আমরা দেখেছি কিন্তু এরকম অসময়ের নদী ভাঙন কখনোই চোখে দেখিনি।
কথা হয় সানেক কমিশনার মো. জলিল শেখের সাথে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, এই কুমার নদী কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে জনস্বার্থে খনন করা হয়েছে। জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন না হলে দুইজন ঠিকাদারের ভাগ্য বদলে গেছে।
ইনকিলাবের সাথে কথা হয় কুমার নদীর পাড়ের বসতি ইয়াসমিন বেগমের সাথে। তিনি বলেন, নদী কেটে সরকার মাটি চুরি করছে আওয়ামী লীগের নেতারা। আর এখন বাড়ী ঘর ভেঙে নদীতে নামছে আমাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজের প্রফেসর ইনকিলাব বলেন, নৌবাহিনীর তত্বাবধানে কোটি কোটি টাকার কাজ হয়েছে। কাগজে কলমে রাজস্ব খরচ বাড়লেও জনগণের কোনো কাজে লাগেনি। এ বিষয়ে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত।
জানা যায়, ভাঙনের হাত থেকে বাঁচার জন্য স্থানীয় কবির প্রামাণিক মো. আক্কাস মিয়া, মো. শুভ প্রামানিক, মো. রাসেল প্রামাণিক আলাদাভাবে জেলা প্রশাসককে নদীভাঙার বিষয় জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানালে তারাও তরিবৎ কয়েক লাখ টাকা খরচ করে ব্যবস্থা নিয়ে স্রোতের ঘুর্ণায়নমুখে প্রোটেকটিভ বাঁধ নির্মাণসহ লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্যালাসাইটিং ওয়ার্কের কাজ সম্পন্ন করেন। হাজার হাজার জিওব্যাগ ও বালুর বস্তা, গাছ বাঁশের খুঁটি ও টিনের বাঁধ সব কিছু ভেঙ্গেচুড়ে কুমার নদীর গর্ভে আঁছড়ে পড়ছে।
ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আমরা সকলের আবেদন পেয়েছি। সাধ্যমত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। প্রকৃতি তার নিয়মে চলছে।
কথা হয়, ফরিদপুর পাউবোর তত্বাবধাক প্রকৌশলের সাথে। তিনি বলেন, আমরা এই বিষয় অবগত হয়েছি। আমরা বড় কাজের বিষয়ে ঢাকায় চিঠি পাঠিয়েছি।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মোহম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা ইনকিলাবকে বলেন, নদীভাঙ্গন একটি জাতীয় দুর্যোগ। আমরা সববিষয়ে আন্তরিকতার সাথে দেখছি। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদারীপুরে ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্যদের ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন
কোকোর দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরাফাত রহমান বড় ভূমিকা ছিল: কাজী রিপন
তারেক রহমান একজন মানবিক মানুষ: কাইয়ুম চৌধুরী
রাবির সাত হলে কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় উত্তাল ক্যাম্পাস, তদন্ত কমিটি গঠন
ডিসেম্বরে সর্বাধিক রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও সউদী আরব থেকে
যশোরে চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকুরি পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন
অপরাধী যদি আমার ভাই হয়, তাকেও ছাড় দিবেন না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আবারও সিলেটের নায়ক জাকির, খুলনার টানা দ্বিতীয় হার
এবার হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে নারী আইনজীবীর মামলা
ব্যবসায়ীকে কোপানোয় শাস্তির হুঁশিয়ারি উপদেষ্টা আসিফের
৩৮ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া
মাগুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটর সাইকেল চালক নিহত
কুষ্টিয়ায় র্যাবের অভিযানে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
কুষ্টিয়ার আলফা মোড়ে সিএনজি স্ট্যান্ড’ নাম দিয়ে চাঁদাবাজি
জুলাই আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলা : বহিস্কার হলেন শাবির ২৯ শিক্ষার্থী
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়লো ১৬ দিন
সাতক্ষীরা সীমান্তে ধান চাষে বিএসএফের বাধা, পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নায়কদের শাস্তি ও ৩ দফা দাবিতে পটুয়াখালীতে মানববন্ধন
ইরানের নতুন আত্মঘাতী ড্রোনে আতঙ্কে ইসরাইল!
চাকুরিচ্যুত বিডিআরদের চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবি ডিসিকে স্মারক লিপি