ঢাকা   শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩ মাঘ ১৪৩১
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম

রাষ্ট্র মেরামত ছাড়াই অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নিলে এ প্রজন্ম আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, একেবারেই রাষ্ট্র মেরামত ছাড়াই যদি অন্তর্বর্তী সরকার চলে যায় তাহলে এই প্রজন্ম আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। গতকাল শনিবার মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) আয়োজিত রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। শফিকুল আলম বলেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর সংস্কার কমিশনগুলো প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপরে আমরা সবাই মিলে আলোচনা করব। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এমন এক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, যার বিপরীতে আমাদের ইতিহাস একদমই উল্টো। আমাদের ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের পর পুরো একটা ডিকেড আমরা পতনের রাজনীতি করেছি। খুব সিরিয়াস আলাপগুলো এই দেশে হয় নাই। মোট কথা পুরো ৭০ এর দশক দেখলে দেখা যায়, এটা শুধু খুনোখুনির দশক ছিল। সেটা ছিল পতনের রাজনীতি। সে সময় রাজনৈতিক কোনো সংস্কারের কথাই ছিল না। পরবর্তী দশকে এসে জিয়াউর রহমান একধরনের রিফর্ম বা ডিসিপ্লিন তৈরি করলেন। উনার পরিকল্পনা ছিল অন্য রকম, আধুনিক বাংলাদেশের যেসব ইন্সটিটিউশনগুলো আছে সেগুলো তার সময় তৈরি করা। তিনি বলেন, এরপর আমরা যে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পেয়েছি, সেটাকেও আমরা ১৫ বছরের মধ্যে বিতর্কিত করে ফেলেছি। যখনই সবাই চিন্তা করল এটাকে রিফর্ম করতে হবে তখন (৯৬ সালে) শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে এটাকে কবরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। পরবর্তীতে ২০০৭-০৮ এ খেয়াল করলে দেখা যায়, সে সময় যে মিলিটারি গভরমেন্ট, তার ছিল ব্রুটাল। লোকজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে টর্চারের মাধ্যমে নানা তথ্য বের করা হতো। আবার সেগুলো সিডি আকারে বের করে গণমাধ্যমে দেওয়া হতো প্রচারের জন্য। সেই শাসন আমলের দুই বছর খেয়াল করলে দেখা যায়, তাদের শুধু একটাই অ্যাচিভমেন্ট ছিল এক্সিকিউটিভ থেকে জুডিশিয়ারির আলাদা করা হলে। এটা বাদে আর কোনো কিছুই ছিল না।

শফিকুল আলম বলেন, পরবর্তীতে আমরা এটাও দেখেছি যে চিফ জাস্টিসের প্রতি কি করা হয়েছে। পাশাপাশি যতগুলো বিচার দেখেন, কি অবস্থা করা হয়েছিল। তবে ১৫ বছর পর একটা ঐতিহাসিক আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমানে একটি পর্যায়ে এসেছি। এখন কথা হচ্ছে আমরা যে সংস্কার করতে চাচ্ছি সেটা কি পারব, কি পারব না। আমরা কি আবার সেই আগের জায়গায় ফিরে যাব কি না, এটা খন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে নানা কথা হচ্ছে, বিভিন্ন জনের মধ্যে নানা আলোচনা হচ্ছে, বিভিন্ন সেমিনার হচ্ছে অর্থাৎ ব্যাপক হারে সংস্কার নিয়ে সবার মাঝে ডিবেট হচ্ছে। আর আমরা এটাই চাচ্ছিলাম, সংস্কার বিষয়ে সকলের মাঝে ম্যাসিভলি যেন ডিবেট হয়। বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ ও দল যেন এই ডিবেটে অংশ নেয়, যাতে করে কি ধরনের বাংলাদেশ আমরা চাই এটা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যায়। আর এই জিনিসটাই আমেরিকা ১৭০০ থেকে ১৮০০ সালের দিকে করেছিল।

যার সুফল তারা ২৫০ বছর পর পাচ্ছে। সংস্কার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আমেরিকা পারলেও আমরা কিন্তু একটি রিফর্ম প্রসেসে এগোতে পারছি না। কিন্তু অন্তর্র্বতী সরকার এই রিফর্মটাকে যেভাবে ফ্যাসিলিটেড করছে সেখানে আমরা শুধু চাই সবার মাঝে সততা ও বাস্তব সম্মত আলোচনা। যার মাধ্যমে কোনটা আমরা শর্ট টাইমের মধ্যে করতে পারব, আর কোনটা লং টার্মের মাধ্যমে করতে পারব সেগুলো যেন ঠিক হয়। আমরা যে ছয়টা সংস্কার কমিশন করেছি তা নতুন বাংলাদেশ করার লক্ষ্যে। তিনি বলেন, অনেকে বলেন এত সংস্কার করে কি হবে। আপনারা একটি নির্বাচন দিয়ে চলে যান। কিন্তু আমি বলব, পুরো বাংলাদেশ ঘুরলে দেখতে পারবেন, প্রতিটা দেয়ালে দেয়ালে লেখা আছে এই রাষ্ট্রটাকে মেরামত করতে হবে। তাই আমরা যদি কোনো মেরামতের কাজ না করেই চলে যাই তাহলে এই জেনারেশন আমাদের একদিন কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। আর বলবে যে তোমরা কিছুই করো নাই। ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের গভরমেন্ট এসব কিছু না করে, যথাযথ সংস্কার না করে চলে গেছেন। আমরা এটা চাই না, প্রয়োজনে জেলে গিয়ে পচে মরতে চাই, তাও আমরা চাই এখানে একটা ভালো রিফর্ম হোক। এই রাষ্ট্র মেরামতের জন্য পলিটিক্যাল পার্টির পাশাপাশি সব সেক্টরের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাংলাদেশ-ভারতকে অতীত কবর দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে: সুনন্দা কে দত্ত রায়
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা আজ, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
ফেসবুকে নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন প্রেস সচিব
তোফাজ্জল হত্যা : ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
আরও

আরও পড়ুন

ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি হলেন ইউসুফ হোসেন

ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি হলেন ইউসুফ হোসেন

ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে পড়েছিল মোটরসাইকেল আরোহীর চূর্ণ-বিচূর্ণ লাশ

ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে পড়েছিল মোটরসাইকেল আরোহীর চূর্ণ-বিচূর্ণ লাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরাই আজকের বাংলাদেশ- কক্সবাজারে শিল্প উপদেষ্টা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরাই আজকের বাংলাদেশ- কক্সবাজারে শিল্প উপদেষ্টা

অতিরিক্ত সময়ে এন্দ্রিকের জোড়া গোলে জিতে শেষ আটে রিয়াল

অতিরিক্ত সময়ে এন্দ্রিকের জোড়া গোলে জিতে শেষ আটে রিয়াল

গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনকে অস্ত্র বিক্রয়ের মার্কিন সিদ্ধান্তে টিআরএনসি-এর ক্ষোভ ও উদ্বেগ

গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনকে অস্ত্র বিক্রয়ের মার্কিন সিদ্ধান্তে টিআরএনসি-এর ক্ষোভ ও উদ্বেগ

নরসিংদীতে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৮

নরসিংদীতে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৮

পাবনায় জনজীবনে ভয়াবহ হচ্ছে ভার্চুয়াল আসক্তি

পাবনায় জনজীবনে ভয়াবহ হচ্ছে ভার্চুয়াল আসক্তি

মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরো ইলন মাস্কের ‘স্টারশিপ’

মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরো ইলন মাস্কের ‘স্টারশিপ’

বাংলাদেশ-ভারতকে অতীত কবর দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে: সুনন্দা কে দত্ত রায়

বাংলাদেশ-ভারতকে অতীত কবর দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে: সুনন্দা কে দত্ত রায়

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

সাইফ ইস্যুতে কেজরিওয়ালের বিস্ফোরক মন্তব্য, পাল্টা প্রতিক্রিয়া বিজেপি নেতার

সাইফ ইস্যুতে কেজরিওয়ালের বিস্ফোরক মন্তব্য, পাল্টা প্রতিক্রিয়া বিজেপি নেতার

ট্রাম্পের শুল্ক ছাড়াও চীনের অর্থনৈতিক সংকটে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ !

ট্রাম্পের শুল্ক ছাড়াও চীনের অর্থনৈতিক সংকটে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ !

খেজুরের রস খেতে গিয়ে গাড়িচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত

খেজুরের রস খেতে গিয়ে গাড়িচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত

দিয়ালোর দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ইউনাইটেডের নাটকীয় জয়

দিয়ালোর দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ইউনাইটেডের নাটকীয় জয়

আজারবাইজান-জর্জিয়া সম্পর্ক শক্তিশালীকরণে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক

আজারবাইজান-জর্জিয়া সম্পর্ক শক্তিশালীকরণে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক

আসাদগেটে সিএনজি-ট্রাক সংঘর্ষ, একজনের মৃত্যু

আসাদগেটে সিএনজি-ট্রাক সংঘর্ষ, একজনের মৃত্যু

মরক্কোতে নৌকা ডুবে ৪৪ পাকিস্তানির মৃত্যু

মরক্কোতে নৌকা ডুবে ৪৪ পাকিস্তানির মৃত্যু

'বন্ধী মুক্তির চুক্তি' চূড়ান্ত জানিয়েছে নেতানিয়াহুর দপ্তর

'বন্ধী মুক্তির চুক্তি' চূড়ান্ত জানিয়েছে নেতানিয়াহুর দপ্তর

সুদানের সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের

সুদানের সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের

উ. কোরিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অংশগ্রহণ একটি কৌশলগত ভুল : রব বাউয়ার

উ. কোরিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অংশগ্রহণ একটি কৌশলগত ভুল : রব বাউয়ার