পিতার এজাহারে আলিফ হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা
০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। দেশব্যাপী ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টিকারী এই হত্যার তিনদিন পর শুক্রবার রাতে নিহতের পিতা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি সন্তান হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ইন্ধনে আসামিরা দাঙ্গা সৃষ্টি করে হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বাদী। মামলায় আসামিরা হলেন- চন্দন দাস, আমান দাস, শ্রী শুভ কান্তি দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত দাশ, নয়ন দাশ, গগন দাশ, বিশাল দাস, ওমকার দাস, বিশাল, সামির, বিগলাল, পরাশ, ওম দাশ, লালা, সোহেল দাশ, শিবকুমার, শ্রী গণেশ, রাজ কাপুর, পপি, দেব, অজয় দেবী, দেব বিহারী, জয় দুর্বল দাশ ও রাজিব ভট্টাচার্য।
নগর পুলিশের এডিসি (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ ইনকিলাবকে বলেন, ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন নিহত আইনজীবীর বাবা। মামলার আসামিদের বেশির ভাগ নগরীর কোতোয়ালি এলাকার সেবক কলোনির পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তিনি আরো বলেন, হত্যাকা-ের ভিডিও দেখে পুলিশ এর মধ্যে নয় জনকে গ্রেফতার করেছে। চন্দন দাসকে মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। হত্যাকা-ের সময় চন্দন কমলা রঙের গেঞ্জি ও হেলমেট পরেছিলেন বলছে পুলিশ। ভিডিওতে তাকে কোপাতে দেখা গেছে ও তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানায় পুলিশ।
এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে সাইফুল ইসলামের ভাই খানে আলম বাদি হয়ে আরো একটি মামলা করেছেন বলে জানান তারেক আজিজ। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদানের অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে গত বুধবার কোতোয়ালি থানায় তিনটি মামলা করেছে। এসব মামলায় ৭৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় এক হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। গতকাল শনিবার পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৯ জনকে। তাদের বেশির ভাগই কোতোয়ালি এলাকার বান্ডিল সেবক কলোনির বাসিন্দা। আলিফের লাশ দাফন ও অন্যান্য কাজে গ্রামের বাড়িতে ব্যস্ত থাকায় মামলা করতে দেরি হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করেন আলিফের পিতা।
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তার অনুসারীরা। তারা সেখানে চার ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক তা-ব চালায়। এক পর্যায়ে আলিফকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে উগ্রবাদী ইসকন সদস্যরা। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আলিফকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব। তার নিথর দেহ পড়ে থাকলেও লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন অন্যরা। সেখানে আরো ছিলেন ২৫-৩০ জন। তাদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী। একজন রয়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
এজাহারে লোমহর্ষক বর্ণনা : এজাহারে বাদী বলেন, বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চন্দন কুমার ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। উক্ত আদেশ প্রদানের সাথে সাথে আসামি পক্ষে নিযুক্ত ইসকনপন্থি আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতকে উদ্দেশ্য করে আশালীন ভাষায় বিভিন্ন আজেবাজে মন্তব্য করে এবং আদালতে হট্টগোল সৃষ্টি করে। এ সময় চিন্ময়ের অনুসারী (দুস্কৃতিকারী) এজাহার নামীয় ১ থেকে ৩১ নং আসামি এবং অজ্ঞাতনামা আসামিরা প্রিজনভ্যান ঘিরে দায়িত্বরত পুলিশের কাজে বাধা দিতে থাকে। তাদের অনেকে প্রিজনভ্যানের সামনে ও পেছনে শুয়ে পড়ে দীর্ঘ আড়াই-তিন ঘণ্টা আদালত প্রাঙ্গণে জটলা বাধিয়ে রাখে। তখন আসামিরা জয় ধ্বনি দিয়ে শঙ্খ বাজিয়ে জয় শ্রীরাম, জয়-শ্রী রাম ধ্বনিসহ রাষ্ট্রদ্রোহমূলক সেøাগানে আদালত প্রাঙ্গণে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
এক পর্যায়ে অতিরিক্ত ফোর্স এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তারা বিভিন্ন উস্কানিমূলক সেøাগান দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার সময় ২০-৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। তারা কোর্ট বিল্ডিং জামে মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির উদ্দেশে মসজিদে ইট-পাটকেল, পাথর নিক্ষেপ করে মসজিদের গ্লাস ভাঙচুর করে এবং মুসল্লিদের আহত করে। এসময় আইনজীবী, মুসল্লি ও বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে নিভৃত করার চেষ্টা করলে তারা তাদের ওপরও আক্রমণ করে। এতে বেশ কয়েকজন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী লোকজন আহত হন।
পরে আসামিরা একত্রিত হয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ত্রিশূল, রাম-দা, কিরিচ, বটি, লোহার রড, হকিস্টিক, লাঠিসোটা ও নানাবিধ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ দাঙ্গার সাজে সজ্জিত হয়ে আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রাস্তার উপরে অবস্থান করে। আমার ছেলে আলিফ নিরাপদে বাসায় ফিরে যাওয়ার উদ্দেশে আদালত ভবন থেকে বের হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের সড়ক হয়ে বিকেল অনুমান সাড়ে ৪টায় এসি দত্ত লেইন, নিলয় স্বজন বিল্ডিংয়ের পাশে পৌঁছামাত্রা তার মুখে দাড়ি এবং আইনজীবী পোশাক দেখে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে ইসকন নেতা চিন্ময়ের নামে জয়ধ্বনি দেয় এবং তাদের হাতে থাকা কিরিচ, রাম-দা, ত্রিশূল ও বটি সহকারে মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আলিফের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার ঘাড়ে, মাথায়, পিঠে, পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাতাড়ি নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।
তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আমার ছেলে আলিফের মাথার পেছনের ডান কান থেকে শুরু করে লম্বা ও গভীর কাটা জখম, ডান কানের গোড়া থেকে ঘাড় পর্যন্ত, পিঠের ডানপাশে ঘাড়ের নিচে ও পিঠে লম্বা এবং কাটা গভীর জখমসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ২১ থেকে ২২টি জখম হয়েছে। ডান হাতের পেছনে কনুইয়ের উপর লম্বা কাটা জখম, বুক ও পেটের মাঝামাঝি কাটা জখম, ডান হাতের শাহাদাত আঙুলের গোড়ায়, বৃদ্ধাঙ্গুল, বাম পায়ের হাড় ভাঙা, ডান পায়ে ছিদ্রযুক্ত জখম, ডান কাঁধে মারাত্মক জখম হয়। তারা আমার ছেলেকে কুপিয়ে এবং ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে। তারা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে নারকীয় উল্লাস করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এজাহারে তিনি বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় লোকজন ও তার সহকর্মীদের নিকট ঘটনার বিস্তারিত শুনে জানতে পারি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে আমার ছেলেকে আসামিরা হত্যা করেছে। মামলা দায়ের শেষে সন্তানহারা জামাল উদ্দিন খুনিদের ফাঁসি দাবি করেছেন। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরাই আজকের বাংলাদেশ- কক্সবাজারে শিল্প উপদেষ্টা
অতিরিক্ত সময়ে এন্দ্রিকের জোড়া গোলে জিতে শেষ আটে রিয়াল
গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনকে অস্ত্র বিক্রয়ের মার্কিন সিদ্ধান্তে টিআরএনসি-এর ক্ষোভ ও উদ্বেগ
নরসিংদীতে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৮
পাবনায় জনজীবনে ভয়াবহ হচ্ছে ভার্চুয়াল আসক্তি
মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরো ইলন মাস্কের ‘স্টারশিপ’
বাংলাদেশ-ভারতকে অতীত কবর দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে: সুনন্দা কে দত্ত রায়
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন
সাইফ ইস্যুতে কেজরিওয়ালের বিস্ফোরক মন্তব্য, পাল্টা প্রতিক্রিয়া বিজেপি নেতার
ট্রাম্পের শুল্ক ছাড়াও চীনের অর্থনৈতিক সংকটে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ !
খেজুরের রস খেতে গিয়ে গাড়িচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
দিয়ালোর দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ইউনাইটেডের নাটকীয় জয়
আজারবাইজান-জর্জিয়া সম্পর্ক শক্তিশালীকরণে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
আসাদগেটে সিএনজি-ট্রাক সংঘর্ষ, একজনের মৃত্যু
মরক্কোতে নৌকা ডুবে ৪৪ পাকিস্তানির মৃত্যু
'বন্ধী মুক্তির চুক্তি' চূড়ান্ত জানিয়েছে নেতানিয়াহুর দপ্তর
সুদানের সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের
উ. কোরিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অংশগ্রহণ একটি কৌশলগত ভুল : রব বাউয়ার
সাইফ তো লিস্টে ছিল না,হঠাৎ হামলা হয়ে গেছেঃ মমতা
ঘণকুয়াশায় সাড়ে ৫ ঘন্টা আরিচা-কাজিরহাট এবং ৪ ঘন্টা পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে