জনশক্তি রফতানিখাতে আওয়ামী সিন্ডিকেট ফের সক্রিয়
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে জনশক্তি রফতানীখাতে ফের সক্রিয় আওয়ামী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে জনশক্তি রফতানি করে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছে। বর্তমানে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজারের নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় চিহ্নিত সিন্ডিকেট ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিক প্রেরণে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও দূতাবাসের সত্যায়ণকৃত ডিমান্ড নোটের অপব্যবহার করায় এক বছরের জন্য কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হিউ্যােন রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারকে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানীতে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করেছেন। নিজের মেডিকেল সেন্টারে প্রায় ৭০ হাজার কর্মীর মেডিকেল চেকআপ করে হাতিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। সম্প্রতি রাজধানীর পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন অপর একজন ব্যবসায়ী।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের আরএল-৪৫২। বারিধারা জে ব্লকের ৮ নম্বর সড়কের ১০ বাড়িতে থাকা এই পতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ফ্যাসিবাদী সরকারের একজন দোসর। তিনিসহ আরও কয়েকজন ছাত্র-জনতার গণঅভূত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে ও দেশের জনশক্তি রফতানীখাতকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে আসছেন। তার ধারা বাহিকতায় ফখরুল ইসলাম গত ৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ান তিন জন ব্যক্তিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তাদের তিন জনই জনশক্তি আমদানী রফতানী ব্যবসায় জড়িত। তারা হলেন, মালেশিয়ান বেসরকারী সংস্থা মালেশিয়া ইন্টারন্যাশনাল সিকউরিটি অর্গানাইজেশন ফর ফরেন ন্যাশনাল নামক সংগঠনের সভাপতি দাতোশ্রী থাইয়াগরাজ ও সাধারণ সম্পাদক ড. সুকামারানা এনকে নায়ার এবং সেখানকার ব্যবসায়ী দাতো মো: নোয়া। এরা তিনজনই গোপনে বাংলাদেশে আনেন। তাদেরকে গোপনে মালয়েশিয়ান সরকারী প্রতিনিধি সাজিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তিগণকে সরকারী সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দেন। বাংলাদেশে দূতাবাসের কোন অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশে এসে অনাধিকার চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানীকারকদের বিষয়ে অবৈধভাবে খোঁজ খবর নেন। ওই ব্যক্তিরা ফখরুল ইসরামের সহযোগিতায় নিজেরদেরকে মালয়েশিয়ান সরকারে প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মালেশিয়ায় জনশক্তি রফতানীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য নানান অপতৎপরতা চালান। বাদী মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানীকারক হিসাবে এবং বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিদেরকে ভূয়া পরিচয় নিশ্চিত হন। বাদী আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারকে বাধাগ্রস্ত এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে বৈদেশিক শ্রম বাজারে অস্থিরতায় ফেলতে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার সরকারের দোসর ফখরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ফখরুলকে সিন্ডিকেটের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে একটি অভিযোগ জমা হয়েছে। ওই অভিযোগে বলা হয়, পতিত হাসিনার সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্যে ১০ সিন্ডিকেটের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন ফখরুল ইসলাম। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাণিজ্যের জন্য বাগিয়ে নিয়েছেন নিজের মেডিক্যাল সেন্টার ওয়েলকাম মেডিক্যাল। প্রায় ৭০ হাজার কর্মীর নামমাত্র স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। পরে তিনি পরিচয় লুকিয়ে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণের চেষ্টা করছেন। তার কমপক্ষে দুইটি লাইসেন্স রয়েছে ১০১ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকায়। সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকাতেও রয়েছে তার এজেন্সি ও ওয়েলকাম মেডিক্যাল সেন্টার।
১০১ সিন্ডিকেটভুক্ত ফখরুল ইসলামের বেনামী প্রতিষ্ঠান ছিল ত্রিবেনি ইন্টারন্যাশনাল ও সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিকানায় অন্য ব্যক্তির নাম থাকলেও নেপথ্যে মালিক ও অংশীদার ফখরুল ইসলাম। তিনি নিজের লাইসেন্স সরাসরি ব্যবহার না করে অন্যের নামে ব্যবসা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্য যারা ব্যবসা করেন তাদের লাইসেন্স ছিল একটি। আর ফখরুল ব্যবসা করেছেন দুই লাইসেন্সে। তাছাড়া অন্য ব্যবসায়ীরা মূল ১০১ এজেন্সির মধ্যে অথবা সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ছিলেন। আবার অনেকে ছিলেন শুধু মেডিক্যাল সেন্টার ব্যবসায়। কিন্তু ফখরুলই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সব জায়গায় আছেন এবং দেদারছে ব্যবসা করে গেছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, ফখরুল মালয়েশিয়া থেকে উচ্চমূল্যে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ভিসা ট্রেডিং করেছেন। যার মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থ পাচার করেছেন। ফখরুল বহুল আলোচিত ১০ সিন্ডিকেটের সময় ১৮ হাজার ও গত ২০২৩-২৪ সালে ৬ হাজার লোক পাঠান। এসব লোকের কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা করে নিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রিসোর্স লিমিটেড। শ্রমিকরা নিজেই এ সংক্রান্ত স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছেন তারা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সাড়ে ছয় লাখ টাকা করে ফখরুলকে দিয়েছেন।
গত ৩১ মে শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর ফখরুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে ভিন্ন কৌশলে সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করেন। মালয়েশিয়ার ক্ষমতাশীল একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাধর কতিপয় নেতার সঙ্গে তাদের কয়েকজনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল হয়েছে। মালয়েশিয়ার একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মোটা অংকের অর্থ স্পন্সর করার সূত্রে দাওয়াত পান ফখরুল ও তার সহযোগীরা। শুধু তাই নয়, দেখা করেছিলেন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। সেখানকার কর্মকর্তারা তার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়ায় দেশে ফিরে নিজেকে বঞ্চিত দাবী করে শুরু করেছেন নানা অপতৎপরতা।
এদিকে, গতকাল সোমবার এসব প্রতারণার ফাঁদে পা না দিতে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটা সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষত হোয়াটসঅ্যাপে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও পদবি ব্যবহার করে বিভিন্ন কোম্পানির চাহিদা পত্র সত্যায়নের জাল কপি প্রস্তুত করে শেয়ার করা হচ্ছে। সত্যায়নের এরূপ জাল কপি তৈরি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে প্রতারক চক্র সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে হাইকমিশন মনে করে। এমতাবস্থায় কর্মী নিয়োগের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে অধিকতর সতর্ক ও এ সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য হাইকমিশনের পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জনশক্তি রফতানী সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী জানান, ফখরুল এখন বায়রার সভাপতি হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলের অনুকম্পা পেতে সিন্ডিকেটবিরোধী কথা বলছেন। অথচ তিনি সব সময়ই সিন্ডিকেটের অংশ ছিলেন এবং নিজেও সিন্ডিকেট করেছেন। ফখরুলের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন টকশো, সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমবাজারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তার বক্তব্যগুলো তার অনুসারীরা মালয়েশিয়াতে ছড়িয়ে দেয়ায় সম্ভাব্য নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশী শ্রমিক বিমুখ হচ্ছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী নামমাত্র মূল্যে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের জমি বন্দোবস্তি দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ
আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা
শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
হেঁটে টেকনাফ গেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদুল
বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে সম্পাদিত গোপন চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ!
বাগেরহাটে জেলা একীভূত চক্ষু সেবা কর্মসূচির এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত
সাতক্ষীরায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল