নওফেলে অশান্ত চট্টগ্রাম
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
পতিত স্বৈরাচারী সরকারের নিকৃষ্টতম দোসর সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও তার সহযোগী ভয়ঙ্কর অপরাধীদের নানা অপকর্মের কারণে ক্ষণে ক্ষণে অশান্ত হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম। আদালত এলাকায় ভয়াবহ সংঘাত, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টা, সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের ওপর ভয়ানক অ্যাসিড হামলাসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে যত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার সবকটিতেই নওফেলের ক্যাডারদের জড়িত থাকার সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সূত্র বলছে, প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ওই চক্রটি পতিত মাফিয়া সরকারের পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একের পর এক সংঘাত সহিংসতা সৃষ্টি করে চলেছে। আজ মঙ্গলবারও রাষ্ট্র দ্রোহিতার মামলায় আসামি চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে আদালতে হাজির করাকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই আশঙ্কা থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অভিযোগ ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে চট্টগ্রামে যে নিষ্ঠুরতম দমন অভিযান চলে তার নেতৃত্বে ছিলেন সন্ত্রাসীদের গডফাদার নওফেল। ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে আসা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীরা। তারা প্রকাশ্যেব্যাপক হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে। তাদের গুলিতে ১১জন শাহাদাত বরণ করেন। আহত হন শত শত ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ। হাজারো মানুষের জীবনদানে রক্তাক্ত এক সফল বিপ্লবের পর হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরাও আত্মগোপন করে। তবে পট পরিবর্তনের পর এসব খুনি অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি কোন অভিযান না হওয়ায় তারা কম সময়ের মধ্যে সংগঠিত হয়ে ওঠে। ছাত্র জনতার ওপর হামলায় জড়িত কিছু সন্ত্রাসী ধরা পড়লেও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আর এই সুযোগে তারা অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য মাঠে নেমে পড়েন। তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অর্থ জোগান দিচ্ছেন মাফিয়া শাসনামলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, মেয়র ও মহানগর এবং জেলার নেতারা। দূর থেকে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন নওফেল।
পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তারা তাদের গোপনে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নওফেলের সর্বশেষ অবস্থান জানা নেই পুলিশের। কেউ বলেছেন ছদ্মবেশে সীমান্ত পথে পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন স্বঘোষিত এই ইসকন সদস্য। তবে চট্টগ্রামের সহিংসতার প্রতিটি ঘটনায় তার যোগসূত্র রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাডার বাহিনীর সাথে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকার তথ্য প্রমাণ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। চট্টগ্রামে তার হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যাডারদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় নামতে সহযোগিতা করছে তার এপিএস অমিত কুমার বসু। অনেক অপকর্মের হোতা কুখ্যাত এই ছাত্রলীগ ক্যাডার এখনো অধরা থেকে গেছে। চট্টগ্রামে ছাত্র আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি গুলি বর্ষণকারী যুবলীগ ক্যাডার নুরুল আজিম রনি। গত ১৬ জুলাই নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে সমাবেশ ডাকে শিক্ষার্থীরা। একই দিনে একই স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন আওয়ামী যুবলীগ নেতা নুরুল আজিম রনিও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন সকাল থেকে ষোলশহর রেলস্টেশনে দলবল এবং অস্ত্রধারীদের নিয়ে অবস্থান নেন রনি। একপর্যায়ে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর বাবর ও জাফর নামে আরেক অস্ত্রধারী সেখানে যান। সংঘাত এড়াতে শিক্ষার্থীরা পরে মুরাদপুর এলাকায় সমাবেশ করেন। এরপর রনি ও বাবর একদল অস্ত্রধারী নিয়ে ষোলশহর থেকে মুরাদপুর গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ লিপ্ত হন। ওই সময় অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করেন যুবলীগের জাফর, ডাকাত ফিরোজ, মিঠু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দেলোয়ার। বাবরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাফর প্রাইভেটকার নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র বিলি করেন। ওইদিনের সংঘর্ষে প্রাণ হারান— চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরাম, মুরাদপুরের ফার্নিচার দোকানের কর্মী মোহাম্মদ ফারুক ও কলেজছাত্র ফয়সাল আহমদ শান্ত। এরপর নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রতিটি কর্মসূচিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে এসব সন্ত্রাসীরা।
হাসিনার পতনের পর ৯ আগস্ট মধ্যরাতে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রনি ধরা পড়েছেন বলে তখন গণমাধ্যমে খবর আসে। অভিযোগ রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই খুনিকে দেশত্যাগের সুযোগ করে দেয়া হয়। কেউ বলছেন রনি কম্বোডিয়ায় রয়েছে। তবে পুলিশের কাছে তার ব্যাপারে হাল নাগাদ কোন তথ্য নেই। তবে সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্র দ্রোহিতার মামলার আসামি ইসকনের চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন খারিজ করাকে কেন্দ্র করে যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটে তাতে রনির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ক্যাডার ও উগ্রবাদী কতিপয় ইসকন সদস্যদের সাথে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের নাশকতার নানা নির্দেশনা দেন রনি। এ সংক্রান্ত গ্রুপ ম্যাসেজের স্ক্রিনশর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায় রনি আদালত এলাকায় সহিংস ঘটনায় লিপ্তদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উপর চোরাগোপ্তা হামলাসহ নানা নির্দেশনা দেন। এর আগেও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র জনতার মিছিলে ঢুকে পড়ে মসজিদে হামলা করে তার দায় ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দিতে নির্দেশনা দেন রনি। বিশেষ করে হাজারি গলিতে হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে দাঙ্গা লাগানোর পরামর্শও দিয়েছেন ওই সন্ত্রাসী।
জানা গেছে, নওফেলের নির্দেশে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধ হয়ে একসময় এক রুপে সংঘাত সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে। সরকার পতনের পর সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে যে সমাবেশ হয় সেখানে ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক ক্যাডারকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এরপর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিটি কর্মসূচিতে তারা যোগ দিয়েছে এবং সহিংসতার অপচেষ্টা চালিয়েছে। তবে সাধারণ হিন্দুদের সাথে এসব সংঘাতের কোন সম্পর্ক নেই। বিশেষ করে আদালতে সংঘাত, মসজিদে হামলা, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং হাজারি গলিতে দুই মুসলিম ব্যবসায়ীকে তাদের দোকানসহ পুড়িয়ে মারার চেষ্টা ও সেনাবাহিনী এবং পুলিশের ওপর অ্যাসিড হামলার মতো বর্বরোচিত ঘটনার সাথেও ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যাডারদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আলিফের পিতা কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত মামলায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ইন্ধনে চিন্ময়ের অনুসারী উগ্রবাদী ইসকন সদস্যরা তার ছেলেকে প্রকাশ্যে হত্যা করে উল্লাসে মেতেছে বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদনের শুনানি হবে আজ।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মফিজুর রহমান জানান, মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে এই জামিন শুনানি হবে। এই শুনানিকে কেন্দ্র করে আগের মতো আজও উগ্রবাদী ইসকন সদস্যদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ কমিশনার সাকিলা সোলতানা বলেন, নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কাউকে কোন রকম সহিংসতার সুযোগ দেয়া হবে না। আদালত সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার এই আসামিকে সরাসরি আদালতে হাজির না করে ভার্চুয়ালি হাজির করার প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।
এর আগে ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলায় জামিন নাকচ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম। ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে চিন্ময়ের সমর্থক উগ্রবাদী লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। তারা কোর্টে হিল মসজিদে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ
আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা
শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
হেঁটে টেকনাফ গেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদুল
বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে সম্পাদিত গোপন চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ!
বাগেরহাটে জেলা একীভূত চক্ষু সেবা কর্মসূচির এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত
সাতক্ষীরায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
অল্পতেই শেষ পাকিস্তানের ইনিংস
খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনী ২৮ ডিসেম্বর
হামলা-নাশকতা প্রতিরোধে কাজ করছে সেনাবাহিনী
তাবলিগ জামাতের দু'পক্ষকেই বিশেষ নির্দেশনা দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
পেকুয়ায় আগামীকাল বৃহত্তর ঐতিহাসিক তাফসির মাহফিল
‘সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনী দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করুন’
শ্রীনগরে বিদুৎপৃষ্ট হয়ে রং মিস্ত্রির মৃত্যু
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবীতে সিলেট এমসি কলেজে মানববন্ধন
সোনা চোরাচালানের দায়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান জব্দ
রাজশাহী বাঘায় পদ্মা নদীতে ধরা পড়লো সাড়ে এগারো কেজি বাঘাইড় মাছ
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সিটির খেলা নিয়ে শঙ্কিত গুয়ার্দিওলা
সুশীলগিরি ছেড়ে দোসরদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আসতে হাসনাতের আহ্বান