দুর্নীতির আখড়া সাভার বিআরটিএ অফিস চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করছে দালালরা
০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
দালালদের সরকারি আশ্রয়-প্রশয় দিয়ে অফিসের চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে ঘুষসহ নানামুখী দুর্নীতিমূলক কর্মকা- চালানোর অভিযোগ ওঠেছে ঢাকার সাভারে বিআরটিএ’র এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র মটরযান পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সরেজমিনে অনুসন্ধানেও বেরিয়ে এসেছে অনিয়মের নানা চিত্র। গাড়ির ফিটনেস, লাইসেন্স করতে গেলে ভোগান্তির বিস্তর অভিযোগ সেবা নিতে আসা মানুষদের। আর আছে দালালের দৌরাত্ম। দালালদের টাকা না দিয়ে কোনো কাজই হয় না এই অফিসে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার বিধান থাকলেও উৎকোচের বিনিময়ে লার্নার (শিক্ষানবিশ) কার্ডধারীদের নিয়মিতই রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে সাভারের বিআরটিএ এর অফিস থেকে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়ার বিনিময়েও নেয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, দালালদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এই কার্যালয়টি। ওই অফিসের কর্মকর্তার যোগসাজশে গড়ে ওঠেছে দালালদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, গাড়ির ফিটনেস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে এলে ভোগান্তির শেষ নেই। দালাল না ধরলে কোনো কাজই হয় না। লাইসেন্স প্রতি দুই গুণ, তিন গুণ টাকা বেশি দিতে হয়।
বিআরটিএ’র ঢাকা জেলা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) এর কার্যালয়ের মটরযান পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম খান বাড়তি উৎকোচ ছাড়া কোন ফাইলই স্বাক্ষর করেন না। এমনকি এই অফিসের এক টেবিলে গেলে বলে ওই টেবিলে যান। আকারে-ইঙ্গিতে টাকাও দাবি করা হয়। আবার দালালদের মাধ্যমে টাকা নেয়া হচ্ছে। দালালদের মাধ্যমে টাকা দিলে গাড়ীর ফিটনেসসহ যেকোন সমস্যা নিমিষেই সমাধান হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে সাভার বিআরটিএ অফিসে কয়েকদিন ঘুরে দেখা গেছে, বিআরটিএ অফিসে মাত্র তিন জন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। তারমধ্যে অফিস প্রধান আসেন সপ্তাহে দুই দিন। আর এই অফিসে রানা, এনায়েত, ফারুক, শিপলু, শাহাদাৎ, স্বপনসহ প্রায় এক ডজনেরও বেশি দালাল রয়েছে। অফিসের টেবিল চেয়ারে বসে দালালদের কাজ করতে দেখাও গেছে। আর এসব দালালদের নিয়ন্ত্রণ করেন মটরযান পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম খান। ঘুষ লেনদেনের কাজটি হয়ে থাকে পরিদর্শক আমিনুল ইসলামের গাড়ী চালক রানা আর দালালের মাধ্যমে।
বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, হায়েসসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি এমনকি কোন কোন দিন শতাধিক গাড়ীরও ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয়। নানান সমস্যার কথা বলে দেড় থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে দালালরা ফাইলে নির্ধারিত সাংকেতিক চিহৃ দিয়ে দেন। পরে ওই গাড়ীর ফাইলটি পরিদর্শক আমিনুল ইসলামের টেবিলে পৌঁছলে তিনি সাংকেতিক চিহৃ দেখে বুঝতে পারেন টাকা লেনদেন হয়েছে এবং ফাইলটি কোন দালাল পাঠিয়েছে। পরে তিনি ফাইলটি স্বাক্ষর করেন।
পরিচয় গোপন করে সাভার বিআরটিএ অফিসে স্বপন নামে এক দালালের সাথে কথা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, যেদিন কম গাড়ী আসে সেদিনও ৪০ থেকে ৫০টি গাড়ীর ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয়। টাকা দিতে হয় কিনা জানতে চাইলে বলেন, গাড়ীতে সমস্যা থাকলে টাকা পয়সা লাগে।
অনিয়ম দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে মটরযান পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম খান মুঠোফোনে বলেন, তার অফিসে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয় না। তিনিসহ তিন জন সরকারি লোক রয়েছে। গাড়ীর ফিটনেসসহ বিভিন্ন ভাবে দালালদের মাধ্যমে ঘুষ নেয়ার বিষয়গুলো প্রমাণসহ বললে তিনি এই প্রতিবেদককে তার অফিসে দেখা করতে বলেন।
গত এক বছরে খানা জরিপ করে দেশের সেবা খাতের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবেদন সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জরিপে বিআরটিএ সবচেয়ে বেশী দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বিআরটিএর মতো সেবায় উচ্চ দুর্নীতি ও ঘুষ বিদ্যমান, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ সেবা প্রাপ্তির অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।
অথচ স্থানীয় প্রশাসনের (সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্য্যালয়ের সামনে) নাকের ডগায় বিআরটিএ অফিসে ঘুষ দুর্নীতি ও দালালদের দৌরাত্ম চললেও রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
বিআরটিএ এর ঢাকা জেলা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) এর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মুছা মুঠোফোনে বলেন, আমি সপ্তাহে মাত্র দুদিন অফিসে আসি। অনিয়ম, ঘুষ, দূর্নীতি ও দালালদের দৌরাত্ম ও অফিসের ভিতরে চেয়ার টেবিলে বসিয়ে দালালদের দিয়ে কাজ করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব আমি কিছু জানি না। তবে উর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আপনি মটরযান পরিদর্শকের রুমে বসেন আমি বলে দিচ্ছি।
সাভার বিআরটিএ অফিস থেকে দালালদের দৌরাত্ম ও ঘুষ, বাণিজ্য বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম