ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘটছে অপ্রত্যাশিত ফলাফল

Daily Inqilab দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

গত সপ্তাহে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অত্যাশ্চর্যভাবে সফল আক্রমণ দেশটির বৃহত্তর দলগুলোর দ্বারা বছরের পর বছর রক্তপাত ঘটিয়ে যা অর্জন করতে পারেনি, তা সম্পন্ন করেছে। গত চার দিনের মধ্যে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম দেশটির বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর বেশিরভাগ অংশ দখল করে নিয়েছে এবং এখন আলেপ্পো বেশিরভাগ এবং পুরো ইদলিব নিয়ন্ত্রণ করছে।

হায়াত তাহরির আল-শাম আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে সমালোচিত জিহাদি আন্দোলনের একটি অংশ থেকে একটি জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং অনেক ক্ষেত্রে একটি স্থিতিশীল খেলোয়র হিসাবে বিকশিত হয়েছে। এটি সিরিয়াতে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ন্যায়বিচারের তত্ত্বাবধানের জন্য একটি আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
হায়াত তাহরির আল-শাম ইসলামী অনুশাসনের একটি কম কঠোর গোষ্ঠি হিসেবে নিজিকে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রযুক্তিবিদদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। গোষ্ঠীটি অনেক জাতীয়তাবাদী প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি শৃঙ্খলা প্রদর্শন করেছে, এবং তার যোদ্ধাদের খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সম্মান করার জন্য এবং তাদের সুরক্ষার আশ্বাস প্রদানের জন্য ধর্মীয় নেতাদের সাথে দেখা করার আহ্বান জানিয়েছে।

হায়াত তাহরির আল-শাম আইএসআইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং সিরিয়ায় আল কায়েদার অবশিষ্টাংশ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি এবং এর মতো অন্যান্য গোষ্ঠীগুলি, যার মধ্যে সিরিয়ার আরেকটি ইসলামি বাহিনী আহরার আল-শাম, বা ইয়েমেনে আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন, বা আফ্রিকার কট্টর ইসলামি গোষ্ঠীগুলি সবাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একই রকম হুমকি নয়, যাকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে যুক্তরাষ্ট্র দুই দশক ধরে লড়াই করেছিল।

নতুন হায়াত তাহরির আল-শাম হল ৯/১১-পরবর্তী বিশ্বের একটি পণ্য যেখানে জিহাদি সংগঠনগুলো নিজেদেরকে জাতীয়তাবাদী এবং স্থানীয়ভাবে কেন্দ্রীভূত আন্দোলন হিসেবে নতুনভাবে উদ্ভাবন করেছে, শুধু টিকে থাকার পাশাপাশি, নতুন ভূ-রাজনৈতিক পটভূমিতে উন্নতির জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এর কোনো বিরোধ নেই তা ইঙ্গিত দিতে এটি ব্যাপকভাবে পদক্ষেপ গ্রহস করেছে। তাদের আন্তর্জাতিক প্রচারে, তারা পশ্চিমকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা তাদের দেশগুলিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের চারণভূমি হতে দেবে না এবং ইসলামিক আইনের মাধ্যমে স্থানীয় শাসনের দিকে মনোনিবেশ করবে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জেষ্ঠ্য উপদেষ্টা দারেন খলিফা বলেছেন, হায়াত তাহরির আল-শাম-এর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি জানিয়েছেন যে তার দল আলেপ্পোতে তার সহনশীল নীতি প্রয়োগ করবে, আগামী সপ্তাহে বেসামরিক এলাকা থেকে সশস্ত্র যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করবে এবং নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবর্তে নিজেকে দ্রবিভূত করার কথা বিবেচনা করবে।

এর আগে জোলানি ২০১৫ সালের মে মাসে আল জাজিরাকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, সিরিয়া পশ্চিমে জিহাদি হামলার ঘাঁটি হিসাবে কাজ করবে না। তার গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক প্রচারের জন্য একটি রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপন করেছে, তুরস্ক সহ দেশগুলির সাথে যুক্ত হয়েছে এবং শুধুমাত্র সিরিয়ার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি বিশ্বস্ত অংশীদার হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছে।

সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনগুলিকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্নির্ধারণ করতে বাধ্য করেছে, যা আন্ত:সীমান্ত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলি থেকে স্থানীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিদ্রোহের দিকে চালিত করেছে, বা কিছু ক্ষেত্রে, যেমন লিবিয়াতে বিদ্রোহীরা সরকারের সাথে মিশে গিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র যখন চীনের মতো দেশগুলির সাথে বৃহৎ শক্তির প্রতিযোগিতার দিকে মনোনিবেশ করেছে, তখন এটি একটি মধ্যপ্রাচ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে, যেখানে আঞ্চলিক দেশগুলি এবং জনগণ হায়াত তাহরির আল-শামের মতো দলগুলিকে আর সন্ত্রাসী হিসাবে দেখে না, বরং রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে দেখে, যারা ব্যর্থ সরকারগুলির শূন্যতা পূরণ করছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম