বোতলজাত সয়াবিন তেল উধাও
০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
হঠাৎ করেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না সয়াবিন তেল। এলাকার মুদি দোকান থেকে পাইকারি বাজার; সবখানেই একই অবস্থা বিরাজমান। সয়াবিন তেল নেই। বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিন তেল যেন উধাও হয়ে গেছে। সয়াবিন তেলের এই সংকটে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। এদিকে বাজারে যেসব দোকানে তেল পাওয়া যাচ্ছে, তারা বেশির ভাগই তা বিক্রি করছেন সঙ্গে অন্য কোনো পণ্য কেনার শর্তে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা। তারা অভিযোগ করছেন, আমাদের শুধু সয়াবিন তেলের প্রয়োজন থাকলেও সঙ্গে অন্যান্য পণ্য কিনতে বলছেন বিক্রেতারা। অন্য পণ্য না কিনলে তেল বিক্রি করছেন না।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, এমনিতেই তারা সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না। কিছু কোম্পানি তেল দিলেও সঙ্গে ধরিয়ে দিচ্ছেন অন্যান্য পণ্য। এখন সেসব পণ্যের চাহিদা থাকুক আর না থাকুক, বাধ্য হয়ে রাখতে হচ্ছে। আর সেই শর্তই তারা দিচ্ছেন সাধারণ ক্রেতাদের ঘাড়ে। গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ি পাইকারি বাজার ও শনির আখড়া, ফুকিরেরপুল কাঁচাবাজার ঘুরে এবং বিভিন্ন মহল্লার মুদি দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
কদমতলীর কয়েকটি মহল্লার কাঁচাবাজারের মুদি দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, সয়াবিন তেলের সংকটে ভুগছেন বিক্রেতারা। তেল রাখার জায়গাগুলোও ফাঁকা পড়ে আছে। হাতে গোনা কয়েক বোতল তেল আছে কোনো কোনো দোকানে। সয়াবিন তেলের তুলনায় বেশি রয়েছে সূর্যমুখী ও রাইস ব্র্যান তেল (চালের কুড়ার তেল)। বাজার করতে আসা অনেক ক্রেতাই তেল কিনতে এসে খালি হাতেই ফিরছেন। কেউ কেউ সয়াবিন তেল না পেয়ে কিনে নিচ্ছেন রাইস ব্র্যান তেল। এমনই একজন হচ্ছেন মো. মারুফ ইবনে মান্নান। বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই সয়াবিন তেল নিয়ে ভোগান্তির মধ্যে আছি। এলাকার দোকানেও তেল নেই, বাজারেও নেই। তাহলে আমরা কোথা থেকে কিনবো? দোকানদাররা বলছেন, সাপ্লাই নেই। হয়তো দাম বাড়াবে বলে কোম্পানিগুলো সাপ্লাই বন্ধ রেখেছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে এটাই ধারণা করতে পারি। সয়াবিন তেল না পেয়ে এখন রাইস ব্র্যান তেল নিয়ে যাচ্ছি।
শনির আখড়ার মনির হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, দোকানে সয়াবিন তেল নেই। সাপ্লাই নেই তাই তেলও নেই। কোনো কোনো কোম্পানি তেল দিতে চাইলে তারা শর্ত দেন অন্য পণ্য কিনতে হবে। অন্যপণ্য বিক্রী হয় না তাই সয়াবিন তেল নেইনি।
মিজানুর রহমান নামের আরেক ক্রেতা দোকানে দোকানে ঘুরছিলেন সয়াবিন তেল কেনার জন্য। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি এক লিটার সয়াবিন তেল কেনার জন্য ঘুরছি; কিন্তু দোকানে তেল নেই। আর যেখানে পেলাম, সেখান থেকে শুধু সয়াবিন তেল বিক্রি করবে না। তার দোকান থেকে অন্য বাজার কিনতে হবে। অন্য কিছু তো আমার লাগবে না, তাহলে কেন শুধু শুধু অন্য কিছু কিনবো? আমার যা দরকার আমি তো সেটাই কিনবো নাকি...। আমি কোটিপতি না যে আমার টাকা খরচ করতে গায়ে লাগবে না। সবই হিসাবের টাকা।
আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আব্দুস সোবহান বলেন, বাজারে তেলের সংকট, বেশিরভাগ দোকানই খালি। এক দোকানে গেলাম, দুই কেজি পোলাও চাল কিনেছি, পরে দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারলাম। তেল বিক্রিটা এখন অনেকটা প্যাকেজ সিস্টেমের মতো হয়ে গেছে একটা পণ্য কিনলে তেল পাওয়া যাবে, সে রকম।
‘অন্যান্য পণ্য না কিনলে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে না’, ভোক্তাদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দোকানে গেলে বিক্রেতা মো. নয়ন মাঝি বলেন, আমি টাকা দিলেও কোম্পানি থেকে মাল পাই না। বিক্রি করতে পারলে তো আমারই ভালো। এখন তেলের সংকট, আর এখন মানুষ শুধু আসে তেল নিতে। আমি তাদের বলি, তেলের সঙ্গে অন্য কিছু নেন। কিন্তু তারা শুধুই তেল নিতে চায়। তিনি দাবি বলেন, আমাকে ডিস্ট্রিবিউটরের থেকে সয়াবিন তেলের সঙ্গে সরিষার তেল নিতে হয়েছে। ৩৬ লিটার সয়াবিন তেল কেনার জন্য আমাকে ৪০ লিটার সরিষার তেল কিনতে হয়েছে। অথচ আমার দোকানে কিন্তু সরিষার তেল আছে। কিন্তু এটা না কিনলে তারা আমার কাছে সয়াবিন তেল বিক্রি করতো না। এর জন্য আমি সয়াবিন তেল বিক্রি করার সময় অন্য পণ্য কিনতে বলি, যাতে আমার লাভটা কিছুটা উঠে আসে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে এই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।
চাঁদপুর জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. আবদুল কুদ্দুস বলেন, আমার কাছে সয়াবিন তেল নেই। যা ছিল বিক্রি করে দিয়েছি। কোম্পানি থেকে সয়াবিন তেল নিলে তাদের পোলাও চাল নিতে হয়। সব কোম্পানিই এটি করছে। আমি দুই কার্টন তেল কিনেছি ৬ হাজার ৪২৪ টাকা দিয়ে। এর সঙ্গে আমাকে ৬ হাজার টাকার চাল কিনতে হয়েছে। এই হচ্ছে অবস্থা। তবে আমি অন্য মাল না কিনলে সয়াবিন তেল বিক্রি করবো না, এটি করি না। যার যা লাগে সেটাই কিনতে পারে।
এদিকে যাত্রাবাড়ি এলাকার মুদি দোকানগুলো ঘুরেও একই চিত্র দেখা যায়। দোকানগুলোতে সয়াবিন তেল নেই। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন অনেকে। বিক্রেতা মো. জনি বলেন, আমরা কোম্পানি থেকে তেল পাচ্ছি না। মাঝে দুই লিটারের বোতলের কিছু তেল দিয়েছিল। কিন্তু তেলের সঙ্গে পোলাও চাল কিনতে হয়েছে। এখন খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছি। প্রতি কেজি ১৯০ টাকা করে বিক্রি করছি। হঠাৎ করে সয়াবিন তেলের উধাওকে রহস্যজনক মনে করছেন বিক্রেতা-ক্রেতারা। তাদের আশঙ্কা সরকারকে বিপদে ফেলতে এমনটা করা হচ্ছে। নয়তো দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টায় বাজারে সয়াবিন তেলের সংকটের সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম