ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১
দেশের ভ্রমণপিপাসুরা এবার ভারতবিমুখ কক্সবাজারে হোটেল মোটেল অগ্রিম বুকড পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পর্যটনকেন্দ্রগুলো জমজমাট

Daily Inqilab ইনকিলাব রিপোর্ট

০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম


বারবার হোঁচট খাওয়ার পর দেশের পর্যটন শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন পুরাদমে শুরু হয়েছে পর্যটন মৌসুম। ইতোমধ্যে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সবখানে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বাংলাদেশের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে বৈরী মনোভাব দেখানোর পর বাংলাদেশের মানুষ ভারতে বেড়াতে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে এখন দেশের পর্যটনকেন্দ্রমুখী হয়েছে। পর্যটন মৌসুমে ভারত না গিয়ে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভিড় করছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে দুই লাখেরও বেশি পর্যটক যায়। এবার ভারতের বিদ্বেষমূলক আচরণের কারণে এসব ভ্রমণপিপাসু ভারত যাচ্ছেন না। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটেই ঘুরে বেড়াবেন।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বিশ্বের পর্যটন ও ভ্রমণ খাত। সেই বাস্তবতা অবশ্য এখন আর নেই। ২০২১ সাল থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পর্যটন ও ভ্রমণ খাত। ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, খাতটি আবার প্রাক-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যাচ্ছে। গত বছর বৈশ্বিক জিডিপিতে পর্যটন ও ভ্রমণ খাতের অবদান ছিল ৯ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার। সেটিও প্রাক-মহামারি পর্যায়ের প্রায় সমান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটন ও ভ্রমণের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমান সংস্থাগুলোর সক্ষমতাও বেড়েছে। এ কারণে মহামারির সময় ভ্রমণে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা উঠে গেছে। তবে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটন খাত আবার ক্ষতির মুখে পড়ে। তবে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের মানুষের মনে আবার স্বস্তি ফিরে এসেছে। মানুষ এখন এক অনাবিল শান্তি আর স্বস্তির মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। এতে সবার মধ্যে ভ্রমণের আকাক্সক্ষাও অনেকটা বেড়েছে। এতে ইতোমধ্যে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলো প্রায় বুকড হয়ে গেছে। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা শেষ হতে যাচ্ছে। সামনে আবার রয়েছে বিজয় দিবস, বড়দিন ও থার্টিফাস্ট নাইটÑ সব মিলিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা এরই মধ্যে বেড়ানোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন। পর্যটন শিল্পের এই যে জমজমাট অবস্থা তাকে রক্ষা করতে হলে কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই ভালোভাবে নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে নারীরা যাতে একা একাই ভ্রমণ করে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে। এ ছাড়া পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতিকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে অধিক মুনাফার চেষ্টা না করে সে বিষয়টিও নজর রাখতে হবে। হোটেলে খাবারের দামসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম যেন স্বাভাবিক সময়ের মতো থাকে সে বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে। গত বছর পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতিতে হোটেল ব্যবসায়ীরা সব কিছুর দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে নিয়েছিল। যেটি পর্যটকদের মধ্যে অনেক বিরূপ মনোভাবের জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ আবুল কাসেম সিকদার বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি এবার যাতে না হয় সে জন্য আমরা অবশ্যই সজাগ থাকব। হোটেলের মালিকরা যাতে অতিমুনাফার লোভে পর্যটকদের কাছ থেকে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি না রাখে সেটি অবশ্যই আমরা নজর রাখব। এদিকে নিরাপত্তার বিষয়েও এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ তৎপর রয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দময় যাতে হয় সে প্রস্তুত সর্বত্রই নেয়া হয়েছে। দেশের পর্যটন খাতের বর্তমান জমজমাট অবস্থা নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন নি¤েœ তুলে ধরা হলো :
কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক জানান, কক্সবাজারে আসতে শুরু করেছে লাখ লাখ পর্যটক। পর্যটকের পদভারে সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার শহর এবং বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দেখা যাচ্ছে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বাংলাদেশের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে বৈরী মনোভাব দেখানোর পর বাংলাদেশের মানুষ ভারত ছেড়ে এখন দেশের বিনোদনকেন্দ্রমুখী হয়েছে। পর্যটন মৌসুমে ভারত না গিয়ে কক্সবাজারসহ দেশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন ভ্রমণপিপাসুরা। এদিকে বরাবরের মতোই পর্যটন শহর কক্সবাজার ও আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে সদা তৎপর। পর্যটন ব্যবসার সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস-রেস্ট হাউস ও জাহাজ ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের স্বাগত জানাচ্ছেন আন্তরিকতা ও সেবার মানসিকতা দিয়ে। এমনকি পর্যটন এলাকার পান দোকান থেকে শুরু করে কিটকট, শুঁটকির দোকান, আচার দোকান, বড় বড় হোটেল, রেস্ট হাউস ও রেস্টুরেন্টগুলো পর্যটকের পদচারণায় এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে। শহরের দোকানদার, ইজিবাইক ও রিকশাচালকরা আগের চেয়ে আন্তরিক সেবা দিয়ে পর্যটকদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, নভেম্বরের শেষ দিকে ডিসেম্বরের জন্য প্রায় সাড়ে চার শতাধিক ছোট-বড় হোটেল ও রেস্ট হাউস অনলাইন ও অফলাইনে বুক হয়ে গেছে। এখন যারা কক্সবাজার আসছেন তারা বুকিং পাচ্ছেন না। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কক্সবাজার বিমানবন্দরে ২০টির অধিক ফ্লাইটে শত শত পর্যটক আসা-যাওয়া করছেন। তিনটি ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসছেন কক্সবাজারে। এছাড়াও শতাধিক পরিবহন সংস্থার শত শত গাড়ি নিয়ে প্রতিদিন লাখো পর্যটক আসা-যাওয়া করছেন কক্সবাজারে। এতদিন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সম্প্রতি তা তুলে নেয়া হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ যাতায়াত শুরু হয়েছে। এখন পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণ করে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন। এতে করে বিদেশমুখী ভ্রমণপিপাসুরা ভারতসহ অন্য কোথাও না গিয়ে কক্সবাজারে ভ্রমণে আসছেন। এটি কক্সবাজার তথা গোটা দেশের পর্যটনের জন্য সুখবর বলেই মনে করা হচ্ছে।

কয়েকজন পর্যটকের সাথে সৈকতে কথা হয় গতকাল দুপুরে। তারা জানান, তারা প্রতি বছর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এই মৌসুমে ভ্রমণ করে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার ও উগ্রবাদী হিন্দুরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পতিত স্বৈরাচার খুনি শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের মনে আঘাত দিয়েছে। আর খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের রক্ষার জন্য ভারত সরকার নিজদের ভূমিকা বাংলাদেশিদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। তাই তারা ভারতে না গিয়ে এবারের পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন।

টোয়াক নেতা ও পর্যটন ব্যবসায়ী আনোয়ার কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, পর্যটকের স্রোত বেড়ছে। তবে সেন্টমার্টিনে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে পর্যটক আরো বাড়ত। কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনে খবর নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ হোটেল মোটেল অনলাইনে অগ্রিম বুকড হয়ে গেছে। এখন তারা বুকিং নিতে পারছেন না। হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ আবুল কাসেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত। হেটেল-মোটেলে বুকিং সন্তোষজনক। এ প্রসঙ্গে হোটেল কক্সটুডের সিইউ আবুতালেব শাহ বলেন, ভালোই পর্যটক আসছেন। পাঁচ তারকা হোটেল সিগালের সিইউ ইমরুল হাসান রুমী বলেন, এবারের পর্যটন মৌসুমে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন দেশের পর্যটন খাতের জন্য সুসংবাদই বলা যায়। খবর নিয়ে আরো জানা গেছে, ১ ডিসেম্বর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। তাই সেন্টমার্টিন, ইনানি সৈকত, হিমছড়ি ও ডুলাহাজার সাফারি পার্কসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকরা ভিড় করছেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ বলেন, কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতিও ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চমৎকার। স্থানীয় নাগরিকসহ পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পর্যটনের বিকাশে কক্সবাজার জেলা পুলিশ শুধু নিরাপত্তাই নয় কিছু টেকনোলজি বেইজড সেবাও চালু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম অনলাইন বাসটার্মিনাল, কক্স ক্যাবসহ অনলাইন হোটেল বোর্ডার ইনফরমেশন সেন্টার। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, কক্সবাজার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অনন্য উদাহারণ। তিনি আশা করেন, দেশ-বিদেশের পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজার ভ্রমণ করবেন।

সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, শীতের শুরুতে সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ভিড় কিছুটা লক্ষণীয়। তবে সেই অবস্থা সহসাই ব্যাপকতা পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি মাসে দেশের প্রাথমিক ও মাদরাসাগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে, সে কারণে অগ্রিম বেড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা শেষের অপেক্ষায় রয়েছেন অভিভাবকরা। এ মৌসুমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের পর্যটন স্পট ঘিরে পর্যটকদের আগ্রহ থাকে সারা বছর। এ ছাড়া যেকোনো ছুটিতে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভিড় বাড়ে পর্যটকদের। ব্যতিক্রম নয় এবারো। বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশের চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণে ভারতে ভ্রমণকারীদের ভিসা দিচ্ছে না ভারত। ভিসা না পাওয়ার কারণে সহজেই যেতে পারছেন না ভ্রমণপিপাসুরা। তাই অনেকেই সিলেটকে বেছে নিচ্ছেন। তাই দীর্ঘ দিনের মন্দাভাব থেকে চাঙা হচ্ছে সিলেটের পর্যটন অর্থনীতি। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি অনেক চাকরিজীবী ছুটি নিয়ে এসেছেন উঁচু টিলা, ঢেউ খেলানো চা-বাগান, নীল জলের লালাখাল, পাথুরে বিছানায় ভেসে চলা ঝর্ণার ধারা কিংবা জলের মধ্যে ভেসে ওঠা অরণ্যে সুশোভিত সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে। প্রকৃতিকন্যা জাফলং, লালাখাল, সাদাপাথর, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, কুলুমছড়া, পাংথুমাইসহ সব পর্যটন স্পটে এখন উৎসবের আমেজ। সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নওশাদ আল মুক্তাদির বলেন, করোনা-পরবর্তী সময় থেকে সিলেটের পর্যটন খাতে ভয়াবহ ধস নামে। কোনোভাবেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না সিলেটের সম্ভাবনাময় এই খাতটি। করোনা, বন্যা, আন্দোলন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সব মিলিয়ে এই খাতের সংশ্লিষ্টরা কঠিন সময় পার করছে। এবার টানা চার দিনের ছুটিতে সিলেটে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। আমরা আশা করছি, চলমান শীতের সময়ে সিলেটে অসংখ্য পর্যটক আসবেন। ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন সিলেটের সেক্রেটারি এস এ শফি জানান, পর্যটন সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে সিলেটের প্রতি সবসময় ভ্রমণপ্রিয়দের নজর থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতে ভ্রমণ অনেকটা কষ্টসাধ্য বিধায় গোটা সিলেটজুড়ে এখন পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিগত দিনের লোকসানটা অনেকটাই কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন। এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বলেন, প্রকৃতি কন্যা নামে খ্যাত সিলেটে এবার পর্যটকের ঢল নামবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। এসব পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রাঙামাটি থেকে শাহ আলম জানান, সরু আঁকাবাঁকা সড়কের দু’পাশে প্রকৃতিকে জড়িয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে উঁচু-নিচু পাহাড়। পাহাড়ের কোলঘেঁষে যেন ঘুমিয়ে থাকে শান্ত জলের হ্রদ। পাহাড়গুলোর সঙ্গে যেন নীল আকাশ আর হ্রদের গভীর মিতালী। যেখানে হ্রদ আর সবুজ পাহাড়ের মিতালী, সেখানে বইছে পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমিদের সুবাতাস। সড়কটির দু’পাশেই কাপ্তাই হ্রদ আর উঁচু-নিচু পাহাড়, যেন প্রকৃতির এক অদ্ভুত মিলবন্ধন। যা প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করছে পর্যটকদের। বলছিলাম, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অধীনে নির্মিত রাঙ্গামাটি শহরের দৃষ্টিনন্দন আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগের ১৮ কিলোমিটার সড়কের কথা। কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষা ও পাহাড়ের সমারোহ এ সড়কটিকে নিয়ে গেছে এক অনন্য পর্যায়ে। মনে হবে, এটি দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর। সবুজ প্রকৃতি আর সুবিশাল জলরাশির অপরূপ সৌন্দর্যম-িত সড়কটি মুগ্ধ করে ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের। মন চাইবে আঁকাবাঁকা এ সরু সড়কে হারিয়ে যেতে। চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা কবির হোসেন জানান, পরিচিত এক বন্ধুর কারণে প্রথম এখানে আসা। যদি আগে জানতাম এখানের পরিবেশটা এত মনোরম মুগ্ধকর তাহলে এখানেই সবার আগে আসতাম। ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সিয়াম জানান, যতবারই রাঙ্গামাটি ঘুরতে যাই, একবার হলেই ওই সড়কে ঘুরতে যেতে হয়। যারা রাঙ্গামাটি এসে এ সড়কে ভ্রমণ না করেই চলে যায় তাদের রাঙ্গামাটি ভ্রমণ বৃথা। পর্যটকদের একবার হলেও এখানে ঘুরতে আসা উচিত।

পটুয়াখালী থেকে মো. জাকির হোসেন জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থতি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসায় দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। মাঝখানে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর মৎস্যবন্দর পর্যন্ত সড়কের ১১ কিলোমিটার রাস্তা ভয়াবহ খারাপ অবস্থা বিরাজ করায় ভোগান্তির কারণে কুয়াকাটায় আসতে পর্যটকদের অনীহা বেড়ে গিয়েছিল। এদিকে দীর্ঘদিন পরে সড়কটি সম্পূর্ণ মেরামত হয়ে যাওয়ায় এখন পর্যটকরা নির্বিঘেœ আসতে পারছেন কুয়াকাটায়। এদিকে সারা দেশের স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা চলমান থাকায় এ সপ্তাহের ছুটির দিন শুক্রবার কুয়াকাটায় পর্যটকরা বন্ধের দিনে তুলনায় পর্যটক কিছুটা কম। তবে বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের ছুটিকে ঘিরে আগামী সপ্তাহের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বরে কুয়াকাটার সবগুলো হোটেলের অধিকাংশ রুমই ইতোমধ্যে বুকিং সম্পন্ন হয়ে গেছে। কুয়াকাটার একাধিক প্রথম শ্রেণির হোটেল-মোটেল থেকে সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। সব মিলিয়ে এ মৌসুমে কুয়াকাটা ইতোমধ্যে বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম