ফ্যাসিস্ট পতিত খুনি হাসিনা বিগত ১৬ বছর আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশেরকে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে নিয়েগেছে। পতিত শেখ হাসিনার জুলুম নির্যাতন মোকাবেলা করে বিএনপি, ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দকে রাজপথে টিকে থাকতে গলদঘর্ম পোহাতে হয়েছে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাসহ সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দিল্লি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। স্বৈরাচারের দোসরা দেশে-বিদেশে থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছে। তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য বাংলাদেশের ছাত্র জনতা প্রস্তুত রয়েছে। স্বৈরাচারের দল আওয়ামী লীগের এদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। এদেশের মানুষ ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে চিরদিনের জন্য প্রত্যাখ্যান করেছে। দৈনিক ইনকিলাবের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব শাইখুল হাদিস ড. গোলাম মুহিউদ্দিন ইকরাম এসব কথা বলেন।

দেশের ক্লান্তিলগ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচন দিবেন। দেশবাসী এমন প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, অতি দ্রুত সময়ে এগুলো সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশের স্থিতিশীলতা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ সম্ভব হবে। নির্বাচনে জনগণ তাদের পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। তখন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দায়িত্ব আরো বেড়ে যাবে।
ভারত আমাদের দেশকে অঘোষিতভাবে অঙ্গরাজ্যের মতোই ব্যবহার করেছে। এর সম্পূর্ণ দায়ী শেখ হাসিনা। সচেতন জনগণ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিরসহ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের সময় ভারতীয় পণ্য বয়কটের জন্য আন্দোলন করেছি।

ভারত আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে আগরতলাস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা করে সন্ত্রাসী ইসরাইলের ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হয়েছে। ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লালন করে আসছে। বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান ও মুসলিমরা সমঅধিকার নিয়ে বসবাস করছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ বলতে পারবে না অন্য ধর্মের হওয়ার কারণে কোন ধরনের দাঙ্গা ফ্যাসাদ হয়েছে। ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনদিন কোন দাঙ্গা হয়নি। আশা করি হবেও না। একটি গোষ্ঠী সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের কৃপা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের এই মিশন সফল হবে না।

তাদের প্রপাগান্ডার কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জাতিসংঘে শান্তি মিশন থেকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী পাঠানোর কাল্পনিক প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যে দেশে (ভারত) সব সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে আছে। সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করছে। মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির বানাচ্ছে। তাদের দেশে জাতিসংঘের শান্তি মিশনের সেনাবাহিনী পাঠানো দরকার। তারা তাদের দেশের মুসলিম সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

শাইখুল হাদিস ড. গোলাম মুহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে কোন ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশও শেখ হাসিনা থাকতে পারেনি। সিরিয়ায় স্বৈরাচার বাশার আল আসাদ লাখ লাখ সুন্নি মুসলমানদেরকে হত্যা করেছে। সেও এতো হত্যাকাণ্ড ঘটিও ক্ষমতায় থাকতে পারিনি। ইতিহাস খুবই করুন ফ্যাসিস্ট বাশার আল আসাদ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তাই রাজনীতি হবে আপামর দেশের মানুষের কল্যাণে। ভবিষ্যতেও যদি কেউ দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ না করে, তাদের পরিণতিও এরকমই হবে। আমরা আশাবাদী অতি দ্রুত সময়ে দেশের প্রতিটি সেক্টরে সংস্কার করে নির্বাচন দিবে এই সরকার। দেশে রাজনীতি করার সবার অধিকার আছে। তবে যারা নির্বাচনী ধারাটাকে ধ্বংস করেছে এ দেশের সচেতন নাগরিক তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক বিভিন্ন জোট হতেই পারে। আমরা ২০ দলীয় জোট ও ১২ দলীয় জোটে ছিলাম আছি ও থাকবো ইনশাআল্লাহ।

অন্যান্য ইসলামিক দল তারা জোট করার আলোচনা করছে এটা তাদের দলীয় ব্যাপার। জোট ও ঐক্য করলে কাজের অগ্রগতি হবে এবং উন্নতি হবে। যারা ১৬ বছর বাংলাদেশে অন্যায় করেছে, অপরাধ করেছে, নিরপরাধ মানুষদেরকে গুম ও খুন করেছে। তাদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে। কোন রাজনৈতিক দলের নেতা তাদেরকে মাফ করতে পারে না। মাফ করবে ভিকটিমের পরিবার-পরিজন। এটা সত্য, পতিত সরকার যে অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছে কেউ তাদেরকে মাফ করবে না।

অন্তর্র্বতী সরকার দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কারের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সেবা, চাল ,ডাল ও তেলসহ নৃত্য পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝে রাখার চেষ্টা করবে। এটাও সত্য, এই দেশের সংকটপূর্ণ সময়ে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নিয়েছে। আশা করছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের জনগণের প্রত্যাশানুযায়ী একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দিতে সক্ষম হবেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নির্বাচনমুখী দল। অতীতে আমাদের দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা নির্বাচনে প্রস্তুতি নিচ্ছি।