ফ্যাসিবাদী হাসিনার পরাজয়কে মেনে নিতে পারছে না ভারত
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনার পরাজয়কে কোনভাবে মেনে নিতে পারছে না ভারত। পরিবর্তিত বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থানে ভারতের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। শেখ হাসিনা ভারতকে যেভাবে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিল বর্তমান সরকার সেভাবে দিচ্ছে না। ফলে ভারতের স্বার্থে আঘাত লাগছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পতিত হাসিনা সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে ভারতের স্বার্থে সবকিছু করেছে। দেশকে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করেছিল। এজন্যই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি ভারতকে যা দিয়েছি, ভারত আজীবন মনে রাখবে’। শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ভারতের রাহুমুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে একন্ত সাক্ষাৎকারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইনকলিবাকে বলেন, আরও কিছুদিন ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারলে পুরোপুরিভাবে দেশ ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত হতো। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতের বড় ক্ষতি হয়েছে। ভারত কোনভাবেই তা মানতে পারছে না। এ জন্য বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন করতে মিডিয়া সন্ত্রাস ও মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত। ভারতের ৪৯টি মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একযুগে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। সেইসাথে এদেশকে অস্থির করে তুলতে সবধরনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখছে। ইসকনকে দিয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানছে। উগ্র বক্তব্য বিবৃতিতের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এমনকি দেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে সরকারি আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করছে সন্ত্রাসী ইসকন কর্মীরা। ভারত মনে করেছিলো এর প্রতিক্রিয়া স্বরুপ দেশের জনগণ হিন্দুদের উপর আক্রমন করবে। এই আক্রমনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তি বাহিনী প্রেরণের দাবি তুলেছে। আসলে ভারতে শান্তি বাহিনী প্রেরণ প্রয়োজন। এরা মসজিদ ভাঙছে, মুসলমান হত্যা করছে, দোকানপাঠ, মাদরাসা বন্ধ করছে, গরুর গোশত বহনের অভিযোগে মুসলিম হত্যা করছে।
ভারতের মিথ্যা কর্মকান্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত সংযমের পরিচয় দিয়েছে। তাতেও যখন কাজ হচ্ছে না তখন ভারত সরকারের ছত্রছায়ায় কলকাতা বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও করার চেষ্টা করে এবং বাংলাদেশে পতাকা পুড়িয়ে দেয়। এর একদিন পর ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশ করে হাইকমিশন কার্যালয় ভাঙচুর করে এবং পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলে উগ্রবাদী হিন্দু সম্প্রদায়। যা ভিয়েনা কনভেনশনের সাথে সাংঘর্ষিক। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সীমান্তে তাদের আধিপত্য বিস্তার করছে। সুযোগ হলেই সীমান্তে বাংলাদের নাগরিকদের পাখির মত গুলি করে হত্যা করছে। পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক আনোয়ার হোসেন হত্যা শিকার হয়। সীমান্তে আর কোন হত্যা কান্ড আমরা দেখতে চাই না। হামলা হলে পাল্টা হামলা নীতি গ্রহণ করা উচিত। যেহেতু ভারত বাংলাদেশের সাথে বন্ধুসূলভ আচরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তাদের সাথে কোন বন্ধুত্ব হবে না যতক্ষন না তারা তাদের নীতি ও পলিসির পরিবর্তন করবে। প্রিন্সিপাল ইউনুছ আহমাদ বলেন , ভারতকে আমরা বন্ধু রাষ্ট্র মনে করলেও ভারত তা মনে করে না। ভারত বার বার বাংলাদেশে তাদের আগ্রাসী মনোভাব বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছে। সামনে থেকে ভারত যদি প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে তাদের নীতি ও পলিসির পরিবর্তন না করে তাহলে ভারতের ব্যাপারে আমাদেরকে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা বন্ধু চাই, কিন্তু ভারতের দাসত্ব চাই না। আমরা মিত্রতা চাই কিন্তু অধিনতা চাই না। ভারতের অপকর্ম, অপপ্রচার বন্ধে পুরো জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। ভারতের যে কোন আগ্রাসন এদেশের জনগণ জীবন ও রক্ত দিয়ে প্রতিহত করতে প্রস্তুত। ভারতীয় হাই কমিশনারকে ডেকে সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার ব্যাপারে কৈফিয়ত চাওয়া এবং কেন ভারতে হাইকমিশনে হামলা হলো এর জবাব নিতে হবে। এ হামলার মাধ্যমে ভারতের অসভ্যতা বিশ্ব দরবারে ফুটে উঠেছে, তা স্মরণ করিয়ে দেয়া।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ছাত্র-জনতা কেবলমাত্র নির্বাচনের জন্য গণঅভ্যুত্থান করেনি, জীবনও রক্ত দেয়নি, পঙ্গুত্ববরণ করেনি। ছাত্র-জনতা একটি আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রেখে কাজ করেছে। এজন্য রাষ্ট্র সংস্কার আগে প্রয়োজন। রাষ্ট্র সংষ্কার করে যেনতেন একটি নির্বাচন আমরা চাই না। তবে সংস্কার করতে গিয়েও দীর্ঘসূত্রিতা কাম্য নয়। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে জিনিসপত্রের দাম অর্ধেকে নেমে আসবে। এ জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কঠোরহস্তে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যে কোন ভাল কাজের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের সহায়তার জন্য ইসলামী আন্দোলন প্রস্তুত আছে।
আইন শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশাসনে এখনো পুরোপুরি প্রাণ ফিরে আসেনি। আমি বলবো প্রশাসনকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় সরকার প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, জাতীয় সরকারের কথা বলছেন অনেকে। কিন্তু আমরা মনে করি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হলে প্রকৃত জাতীয় সরকার হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইউনুছ আহমাদ বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েগেছে। ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে। দেশে ব্যাপক লুটপাট এবং বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে দেদারসে। দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দ্রুত ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে। খুনি হাসিনাসহ তার সহযোগিদের বিচার করতে হবে। বাংলাদেশে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজমান রয়েছে। ভারতের যেকোনো আগ্রাসন প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগণ প্রস্তুত রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শরীয়তপুরে ১০ বছরেও নির্মাণ হয়নি আদালত ভবন
ষড়যন্ত্র ও হয়রানির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের আবেদন বঞ্চিত বিধবার
মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে ভারতীয় রুপির সর্বনিম্ন রেকর্ড
দোয়ারাবাজারে অভিযুক্ত বাঁধে বালু অপসারণ!
তালেবান শাসনকে বৈধতা না দেওয়ার আহ্বান নোবেলজয়ী মালালার
ফের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের
ঢাকার বাইরে প্রথম নরসিংদীতে রয়েল এনফিল্ড লঞ্চ
ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেই দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত করা সম্ভব
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না : হাইকোর্ট
বিদ্যুৎ প্লান্টের পাঁচ লাখ টাকার লোহা তামা স্টিল সামগ্রী চুরির দায়ে ৫০ জনের নামে মামলা
নেত্রকোনা গত ১ বছরে ২৩২টি অস্বাভাবিক মৃত্যু
মেহেরপুর শহরে অবৈধ গাড়ির দৌরাত্ম ফুটপথ দখল, সরু সড়ক, যানজট লেগেই থাকে
অ্যাপলের ডাইভার্সিটি নীতি , বৈচিত্র্য রক্ষার লড়াইয়ে বোর্ডের বার্তা
ঢাবি,ভিকি,এনএসইউ ওয়েটিং লিস্টে থাকে,বান্নাহ খাওয়া মাল খায় না'
দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা কর্নেল অলির
আশুলিয়া থানা জমিয়তের কমিটি গঠন
বাংলাদেশের সীমান্তে ১৬০ জায়গায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত : রিজভী
মতলবে সাবেক স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা-সাবেক স্বামী আটক
লক্ষ্মীপুর থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কষ্টিপাথর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর
অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে শর্ট ও হার্ডি, কামিন্সকে নিয়ে শঙ্কা