আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন হলে ভালো
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছর মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে, অথবা সর্বোচ্চ জুনের মধ্যে নির্বাচন হলে ভাল এটা আমি মনে করি। নির্বাচন কবে চান এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ একথা বলেন। গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে কথা হয় এই রাজনীতিবিদের সাথে। তার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো। নির্বাচন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ সরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংস্কার কমিশন তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। ৩০ ডিসেম্বর কমিশনগুলো তাদের প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবেন। এরপর এনিয়ে রাজনৈতিকদলসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাদের সাথে আলোচনা করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কারের বিষয় চূড়ান্ত করা হবে। সে হিসাবে সরকার চাইলে আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব। তা না হলে সর্ব্বোচ্চ জুনের মধ্যে নির্বাচন করা যায়। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস সময় পার হয়ে গেছে। এই চার মাসের মূল্যায়ন জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ সরকারের মূল্যায়ন করতে গেলে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে বলবো তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এই চারমাস সময় যথেষ্ট। এসরকার বেশ কিছু সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছে। একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার কথা আমরা বলছি। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রমও শুরু হচ্ছে। অন্যান্য সংস্কারের বিষয়ও এগিয়ে চলছে। সব মিলিয়ে সরকার রাইট ট্র্যাকে আছে এমনটা বলা যায়। অনেকে বলছেন সংস্কার শেষ করতে বেশ কিছু সময়ের প্রয়োজন এটা সরকারকে নিতে হবে। আমি অবশ্য এমনটা মনে করিনা। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। দেশের জন্য কল্যাণকর কিছু করার জন্য যে কোন বিষয় যে কোন সময় সংস্কারের প্রয়োজন হতে পারে।
এ সরকার একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের উচিত হবে শুধুমাত্র একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য স্বল্প মেয়াদী সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন দেওয়া। এ ছাড়া মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের যে প্রস্তাব থাকবে সেগুলো নির্বাচিত সরকার এসে সংসদের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করবে। যেমন সংবিধান সংশোধনের বিষয়, এটা সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে হতে হবে এবং নির্বাচিত সরকারকেই করতে হবে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল তা এ সরকার কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে? এর জবাবে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ১৫-১৬ বছরের জঞ্জাল মাত্র তিন চার মাসে শেষ হয়ে যাবে এমনটা আশা করা ঠিক নয়। এ সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। সরকার সব কিছু অল্প সময়ের মধ্যে পূরণ করে ফেলবে এটা ঠিক নয়। তবে সরকার যে সব বিষয়ে খুব অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার ছিল সেটা করতে পারেনি। এসরকারের শুরুটা বলা যায় কিছুটা স্লো। জুলাই বিপ্লবের যে স্পিড তার সাথে শুরুতে এ সরকার তালমেলাতে পারেনি। জনগণ প্রত্যাশা করেছিল শেখ হাসিনার পতনের পর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আসবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তা করতে পারেনি। বাজার ব্যবস্থপনার দিকে তারা নজর দিতে পারেনি। মনে হয়েছে এ সরকার এ বিষয়টিকে শুরুতে খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেনি। এখন এটাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আশা করা যায় নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায় চলে আসবে। সালাহউদ্দিন আহমেদ একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত। শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের সময় এক পর্যায়ে তাকে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরা থেকে তিনি গুম বা অপহৃত হন এবং দুই মাস পরে ভারতে শিলং শহরে অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দেয়। এভাবে তাকে গুম বা অপহরণ করার কারণ কি? সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওই সময় ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন চলমান ছিল। ২০১৫ সালের শুরুতে দলের মুখপাত্র হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় ওই আন্দোলন বানচাল করতে তাকে অপহরণ করা হয়। তিনি বলেন, আমাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এমনটা ভাবছিলাম। কিন্তু গ্রেফতার করে চোখ, হাত-পা বেঁধে অন্ধকার কুঠোরীতে ফেলে রাখবে। দুই মাস পর নানান জায়গা ঘুরিয়ে পাশের দেশে ফেলে দিয়ে আসবে এমন ভয়াবহ বিষয় কখনো কল্পনাও করিনি। ওই সময়ের কোন দু:খের বা কষ্টের অথবা অন্য কোন স্মৃতি কি আছে যা কোনদিন ভুলতে পারবেন না? সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আসলে ওই ভয়াবহ দু:সময়ের পুরোটাইতো এক নিদারুণ কষ্টের। ওটাতো খকনোই ভোলা যাবে না। তবে এর মধ্যে একেবারে স্মরণীয় যে ঘটনা সেটা হলো, শিলংয়ে প্রথমে আমাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারা আমাকে পাগলের হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে এক রাত আমি পাগলের সাথে ছিলাম। তারা আমাকে পাগলের ওষুধ পর্যন্ত দিয়েছে। এরপর আমি অনেক অনুরোধ করে আমার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে আমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলি। পরে তারা আমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে আমাকে ওই পাগলখানা থেকে অন্যত্র নিয়ে যায়। একটা সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষকে পাগলের সাথে রাখো এবং তাকে পাগল ভেবে চিকিৎসা করা এর চেয়ে দুর্বিষহ আর কি হতে পারে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রপাগান্ডা তাতে কি ভারত জড়িত? তিনি বলেন, ভারত জড়িত এভাবে বলতে চাইনা। এই মিথ্যা প্রপাগান্ডার সাথে ভারতের কিছু মিডিয়া এবং একটা শ্রেণী জড়িত। তারাই এ সরকারকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। এ ব্যাপারে ভারতের সবাইকে দায়ী করা ঠিক নয়। বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে আক্রমণ হয়েছে।
এ বিষয়ে সরকার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে সরকারকে আগে থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত ছিল। এ ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা ছিল এা বলা যয়। কিন্তু আপনার দলতো ভারতের পণ্য বর্জনসহ ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছে? তিনি বলেন, আসলে এটা এভাবে বলা ঠিক নয়। আমরা ভারতের বিরুদ্ধে নই। আমরা আমাদের দেশের পক্ষে। আমরা চাই বিদেশী পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে। এটা আমাদের দেশপ্রেমের বহি:প্রকাশ। আমরা আমাদের নদীর ন্যায্য পানির দাবি করছি এটা আমাদের অধিকার। তাই আমরা আমাদের অধিকারের কথা বললে, বা আমার দেশের পক্ষে কথা বললে সেটাকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে বলছি এমনটা ভাবা ঠিক না। ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশ। এই প্রতিবেশীকে কখনো বদলানো যাবে না। তাই প্রতিবেশীর সাথে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সব সময় বজার রাখতে চাই। আর এই বন্ধুত্ব হবে সমমর্যাদার ভিত্তিতে। আগামী নির্বাচনে আপনারা কি এককভাবে নির্বাচন করবেন নাকি জোটবদ্ধ হয়ে? দেখুন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনো অনেক সময় আছে। তাই এটি এখনি বলা যাবে না। একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে এমনটা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি? সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলকে আমরা সব সময় স্বাগত জানাই। গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য বহু মত ও পথের প্রয়োজন। বহু দলের গণতন্ত্র চর্চা হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। তাই নতুন দলকে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব। তবে বর্তমান সরকারের পৃষ্টপোশকতায় যদি কোন কিংস পার্টির জন্ম হয় তবে সেটা গণতন্তের জন্য, জাতির জন্য কল্যাণকর হবে না। সব শেষে তিনি বলেন, আমি আমার দলের পক্ষ থেকে দেশবাসী এবয় ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বর্তমানে সকল ষড়যন্ত্র প্রহিত করার জন্য যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে তা যেন আমরা সবাই মিলে অটুট রাখি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অনুপ্রবেশকারীদের টার্গেট নরসিংপুর সীমান্ত!