বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আজ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর)। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করে। বাংলাদেশে সাংবিধানিক অধিকার তথা মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ দিবসকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মানববন্ধন, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।

গত ১৫ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেশে ছিলোনা কোনো আইনের শাসন। মানবাধিকারের চরম অবনতি ঘটে। ফ্যাসিবাদি সরকার নিজেদের স্বার্থে মানবাধিকার পরিপন্থি হেন কাজ নেই যা করেননি। খুন গুম ছিলো নিত্য দিনের ঘটনা। কেউ মুখতে সাহস পায়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী দু;শাসনের। গঠিত হয় অন্তবর্তীকালিন সরকার। এ সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত ১৫ বছরে অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে। বিচারের আওতায় আনার জন্য আমরা গুম সংক্রান্ত কমিশন গঠন করেছি। কমিশন প্রধানের কাছ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৬০০ গুমের তথ্য পাওয়া গেছে, তবে এই সংখ্যা ৩৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনেও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে একের পর এক লাশ ফেলে আওয়ামী সরকার মানবাধিকারের লংঘনের শেষ পেরেক ঠুকে।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শাসনামলে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৬৯৯ জন। এ সময়ে গুম হন ৬৭৭ জন, কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন ১ হাজার ৪৮ জন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের তালিকাসহ ২০২৪ সালের ঘটনা যুক্ত করলে নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

এসব বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের ঘটনার মধ্যে নির্যাতনে হত্যা, ক্রসফায়ার, হত্যার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গুলি, ব্যবসায়ীকে আটক করে মালামাল লুট, নাগরিকদের গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মাধ্যমে এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

অধিকারের পরিসংখ্যান বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার বছর ২০০৯ সালে হত্যার শিকার হন মোট ১৫৪ জন। এছাড়া ২০১০ সালে ১২৭ জন, ২০১১ সালে ৮৪, ২০১২ সালে ৭০ জনকে হত্যা করা হয়। নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৯ জনে। আর নির্বাচনের বছর ২০১৪ সালে ১৭২ জন, ২০১৫ সালে ১৮৬, ২০১৬ সালে ১৭৮, ২০১৭ সালে ১৫৫ জনকে হত্যা করা হয়।

২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয় ৪৬৬ জনকে। ২০১৯ সালে ৩৯১ জন, ২০২০ সালে ২২৫ জনকে হত্যা করা হয়। ২০২১ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারির পর তা কমে ১০৭ জন, ২০২২ সালে ৩১ ও ২০২৩ সালে ২৪ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। এ দেড় দশকে ৬৭৭ জন গুমের শিকার হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৮ জন গুমের শিকার হন ২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর। এছাড়া ২০০৯ সালে তিনজন, ২০১০ সালে ১৯, ২০১১ সালে ৩২, ২০১২ সালে ২৬, ২০১৩ সালে ৫৪, ২০১৪ সালে ৩৯, ২০১৫ সালে ৬৭, ২০১৬ সালে ৯০, ২০১৭ সালে ৮৮, ২০১৯ সালে ৩৪, ২০২০ সালে ৩১, ২০২১ সালে ২৩, ২০২২ সালে ২১ ও ২০২৩ সালে ৫২ জন গুমের শিকার হন।

গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সবচেয়ে বেশি হয়েছে নির্বাচনের বছরগুলোয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় যা দ্বিগুণ ছিল। এর মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৪৬৬ জনকে হত্যা করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এ বছরই সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ গুম হয়। কারাগারে মৃত্যুও ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ।

গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই এখনো নিখোঁজ। তবে ফেরত আসা ব্যক্তিদের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর নিজেদের তারা আবিষ্কার করতেন কোনো এক বদ্ধ রুমে। যা ‘আয়নাঘর’ কিংবা ‘সেফ হোম’ নামে পরিচি। সেই কুঠুরিতে বছরের পর বছর তাদের আটকে রেখে ভয়ংকর নিষ্ঠুর নির্যাতন করার অভিযোগ।

এর মধ্যে আয়না ঘর থেকে মুক্তি পেয়েছে আলোচিত বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম আরমানকে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট মিরপুরের নিজ বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আরমান আয়নাঘর থেকে পরিবারের কাছে ফিরেছেন। ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা। চাকমা নিখোঁজ হন ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল।

আয়না ঘর থেকে ফিরে আসা বন্দিদের জবানিকে ‘‘১০ ফুট বাই ১০ চৌকো ঘর। উঁচু ছাদ। আর উপরে থাকত এগজস্ট ফ্যান। আর একটা ছোট্ট আলো। বাইরে দিন কি রাত বোঝার উপায় নেই। নেই জানালা। প্রথমে সেই খাঁচার মতো লোহার দরজা। তার পরে কাঠের দরজা। তাতে থাকত একটা ছোট গোল গর্ত। সেখান থেকে প্রহরীরা দেখে নিতেন, ভিতরে কে কী করছে।’’ ছিল বন্দিদের মুখে কাপড় বেঁধে শৌচাগারে নিয়ে যাওয়া এবং শৌচাগার থেকে সে ভাবেই নিয়ে আসা।
নুতন সরকারের কাছে দেশের মানুষ এখন এখন মানবাধিকার বাস্তবায়নসহ এ আইনের সুরক্ষা প্রত্যাশা করেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত
সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারী করে প্রজ্ঞাপন
সীমান্ত দিয়ে গরু-ছাগলের প্রবেশ ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভারতের পুশইন সুপরিকল্পিত ও ন্যাক্কারজনক : বিজিবি ডিজি
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সঙ্গে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ
আরও
X
  

আরও পড়ুন

আইপিএল পুনরায় শুরু শনিবার

আইপিএল পুনরায় শুরু শনিবার

টেস্টে কোহলির যত রেকর্ড

টেস্টে কোহলির যত রেকর্ড

আনচেলত্তিই ব্রাজিলের নতুন কোচ

আনচেলত্তিই ব্রাজিলের নতুন কোচ

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত

ওষুধের দাম কমাতে পদক্ষেপ ট্রাম্পের

ওষুধের দাম কমাতে পদক্ষেপ ট্রাম্পের

চীনা বিমানের কাছে পরাস্ত রাফাল সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির খোরাক ভারত

চীনা বিমানের কাছে পরাস্ত রাফাল সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির খোরাক ভারত

এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপ পুতিনের

এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপ পুতিনের

ফের বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ৫ হাজার ডলার ছাড়াল

ফের বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ৫ হাজার ডলার ছাড়াল

মার্কিন-চীন বাণিজ্যের অবনতি রোধ করতে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে নেক্স গ্লোবাল

মার্কিন-চীন বাণিজ্যের অবনতি রোধ করতে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে নেক্স গ্লোবাল

গাজা যুদ্ধ সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে সমাধানযোগ্য নয় : জার্মানি

গাজা যুদ্ধ সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে সমাধানযোগ্য নয় : জার্মানি

ইউরোপে বন্দি থেকেও ফিলিপাইনে জয়ী হতে যাচ্ছেন দুতার্তে

ইউরোপে বন্দি থেকেও ফিলিপাইনে জয়ী হতে যাচ্ছেন দুতার্তে

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা

ফ্যাসিস্ট এমপি মমতাজ বেগম গ্রেফতার

ফ্যাসিস্ট এমপি মমতাজ বেগম গ্রেফতার

কোটচাঁদপুরে আম সংগ্রহ শুরু

কোটচাঁদপুরে আম সংগ্রহ শুরু

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অচল: দক্ষিণাঞ্চল অচলের ঘোষণা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অচল: দক্ষিণাঞ্চল অচলের ঘোষণা

সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারী করে প্রজ্ঞাপন

সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারী করে প্রজ্ঞাপন

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক দশক পূর্তিতে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক দশক পূর্তিতে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন

করিডোর নিয়ে গোটা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ, বিপন্ন হতে পারে সার্বভৌমত্ব: দরকার জাতীয় ঐক্য

করিডোর নিয়ে গোটা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ, বিপন্ন হতে পারে সার্বভৌমত্ব: দরকার জাতীয় ঐক্য

সিলেটে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে    গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

সিলেটে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে   গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

মাগুরায় আওয়ামী লীগ এর সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় জামায়াতের শুকরানা মিছিল

মাগুরায় আওয়ামী লীগ এর সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় জামায়াতের শুকরানা মিছিল