টিউশনি করে সংসার চালান ব্যবসায়ী বাতেনের স্ত্রী
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২২ এএম | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২২ এএম
বাবার কাছে একমাত্র শিশু পুত্রের আবদার ছিলো আম কিনে দেবার। বাবা বলছিলেন, দুপুরেই আম নিয়ে বাসায় ফিরবেন। কিন্তু বাবা ইসমাইল হোসেন বাতেন আজও ফিরল না। আর ছেলেরও যেন অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। ব্যবসায়ী বাবা বাতেনের কাছে মাত্র ১ বছর ১০ মাস বয়সি পুত্র ইনামের এ আবদার ছিলো ২০১৯ সালের ১৯ জুনের। ইনাম আজ ক্লাস ওয়ানের ছাত্র। বাবার স্মৃতি তার মনে নেই। তবে বাবার কাছে আমের আবদারের কথা সে এখনো ভুলেনি। ২০১৯ সালের ১৯ জুন বেলা ১টা পর্যন্ত বাতেনের উপস্থিতি ছিলো রাজধানীর মিরপুর শাহআলী মাজার সংলগ্ন ‘দাদা স মিল’ নামে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। কিন্তু নিখোঁজ কিংবা গুমের শিকার বাতেনের পরিবার এখনো অপেক্ষায় রয়েছেন, বাতেন ফিরবেন এবং আম নিয়েই ফিরবেন। আর এ কারণে আজ পর্যন্ত পরিবারের কোনো সদস্য আম খায়নি। মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী বাতেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান স্মৃতির অভিযোগ, ব্যক্তিগত দ্বন্ধের জের ধরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তৎকালীন র্যাবের এক কর্মকর্তা তার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছেন। এরপর স্বামীর পরিনতির কথা তার অজানা।
গত রোববার রাতে টোলারবাগের বাসায় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় স্মৃতির সাথে। এ সময় তিনি স্বামীর স্মৃতি স্মরণ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেনÑ ভালোবেসে তিনি বিয়ে করেছিলেন বাতেনকে। নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। এক মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে ছিলো তাদের সুখের সংসার। কোনো পিছু টান ছিলোনা সংসারে।
স্বামীর নিখোঁজের দিনের প্রসঙ্গে স্মৃতি বলেন, বাতেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছিলেন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর-নিকলি থানা জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জিসাস) প্রতিষ্ঠাতা সভপতি। মামলা থাকার কারণে তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন। গুমের আগ পর্যন্ত ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাতেন সাধারণত সকাল ৮টা সাড়ে ৮টার মধ্যেই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতেন। ঘটনার দিন ২০১৯ সালের ১৯ জুন। অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিয়েও ছেলের সাথে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠেন। অফিসে দেরি হচ্ছে বলতেই বাতেন বলছিলেন, কেন যেন ভালো লাগছে না। এমন সময় ছেলে ইমন বলে, পাপা এক বস্তা চুইংগাম নিয়ে আসবা। ছেলেকে চুইংগামের পরিবর্তে এক বস্তা আম নিয়ে আসবেন বলে সকাল সাড়ে ১০টায় অফিস সংলগ্ন বাসা থেকে বের হন। নিত্যদিনের মতোই পায়ে হেঁটে অফিসে যান তিনি। দুপুরের খাবার খেতে বেলা ২টার দিকে তিনি স’মিলের অফিস থেকে বাসার উদ্দেশ্যে বের হন।
বিকেলে তার ৪টি মোবাইল ফোনের সবগুলো নম্বর বন্ধ পেয়ে তিনি স্বামীর সন্ধানে দ্রুত শাহআলী থানায় যান। কিন্তু পুলিশ ওই সময় জিডি গ্রহণ করেনি। স্মৃতি বলেন, আমরা সবগুলো থানা-র্যাব ও ডিবি কার্যালয়ে যোগাযোগ করি। কিন্তু কোথাও স্বামীর খোঁজ মেলেনি। ২৪ ঘণ্টা পরে শাহআলী থানা বাতেনের নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি জিডি গ্রহণ করেন। আমরা পুলিশকে প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম ওই সময়ে প্রেষণে র্যাবে কর্মরত এক কর্মকর্তার সাথে বাতেনের দ্বন্ধ রয়েছে। ওই কর্মকর্তা র্যাবকে ব্যবহার করে বাতেনকে গুম করতে পারে। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
স্মৃতি বলেন, বাতেনের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার কোকরাই গ্রামে। তার বাবার নাম ইলিয়াস মিয়া। গুরুদয়াল কলেজের ছাত্রাবস্থায় এলাকায় ফয়েজ আহমেদ মিন্টু হত্যা মামলার ১৩ নম্বর আসামি ছিলেন বাতেন। যদিও মামলায় সব আসামি বেকসুর খালাস পান। কিন্তু মিন্টুর ছেলেরা বাতেনের সাথে শত্রুতা শুরু করে। মিন্টুর এক ছেলে বাজিতপুরের কৈলাশ ইউনিয়নের আ.লীগের সভাপতি কাওসার হাবিব কয়েক বছর আগে বাতেনের ওপর হামলা চালায়। প্রায় ৪০ ফিট ওপর থেকে বাতেনকে ফেলে দেয়। তার মাথায় কুপিয়ে আহত করে। দীর্ঘ ১৭ দিন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন বাতেন। মিন্টুর অপর এক ছেলে ২০১৯ সালে র্যাবে কর্মরত ছিলেন। স্মৃতি বলেন, তিনিই বাতেনকে গুমের সাথে জড়িত।
স্মৃতি আরও বলেন, ওই সময়ে বাতেনের নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডির তদন্ত করতে গিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাতেন গুমের দিন বিকেল ৪টার দিকে তার মোবাইলের সর্বশেষ লোকেশন ছিলো পাইকপাড়া র্যাব-৪ কার্যালয়ের অতি নিকটে। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ।
আমরা ব্যক্তিগতভাবে বাতেনের শাহআলী মাজার সংলগ্ন অফিস থেকে শুরু করে আশপাশের সবগুলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি। সেখানে দেখা যায় ঘটনার দিন বেলা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সময়ের ফুটেজগুলো একেবারেই সাদা। যা খুবই রহস্যজনক। তিনি ধারণা করছেন এটি একমাত্র এলিট ফোর্স দ্বারাই সম্ভব।
বাতেনের বড় সন্তান আনিসা ইসলাম ইনসা তখন ছিলেন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। গত বছর গোল্ডেন এপ্লাস পেয়ে বর্তমানে মিরপুর কমার্স কলেজে অধ্যায়ন করছেন।
বর্তমানে দুই সন্তানের ভরণ-পোষনসহ সবকিছুর যোগান দিচ্ছেন বাতেনের স্ত্রী। টিউশনি করেই তিনি সংসার চালান। বাড়তি কিছু আয়ের জন্য বাসায়ও দু’টি ব্যাচ পড়ান।
স্মৃতি বলেন, বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ সময়ে আইনি পদক্ষেপ নিবেন কিনা জানতে চাইলে স্মৃতি বলেন, ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের ব্যানারে আমরা আগে থেকেই সোচ্চার ছিলাম। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে আমরা সাক্ষাৎ করেছি। তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া সংগঠনের ব্যানারে সকল ভুক্তভোগীর নিয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেখানে বাতেনের সিরিয়াল নম্বর ৪৪। আমরা গুম ও নিখোঁজদের বিষয়ে একটি আলাদা আইনের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা করছি। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন বলেই আশাবাদি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অসহায় শীতার্তদের মাঝে রূপালী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ
জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই: ফখরুল ইসলাম
মীরসরাইয়ে অবৈধ বেহুন্দি ও মশারি জাল জব্দ
গণঅভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের চিত্র প্রদর্শনী করছে তরুণ কলাম লেখক ফোরাম
মারা গেলেন আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী
নালিতাবাড়ীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড
ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ১৩ হত্যার নির্দেশদাতা নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়?
মানিকগঞ্জে এলজিইডির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
বাংলাদেশে কখনো স্বৈরাচারের শাসন জনগণ মেনে নিবেনা: আমিনুল হক
প্রতিনিয়ত মোশাররফ করিমের থেকে শিখি: মম
অবৈধ ৭টি কয়লা তৈরির চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন
ময়মনসিংহে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ প্রকল্পের লটারি অনুষ্ঠিত
পাঠ্যবইয়ে শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ভুল তারিখ সংশোধন, জড়িতদের শোকজ
টাঙ্গাইল হাসপাতালে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা
স্থানীয় খেলোয়াড়দের পারফরমেন্স এবারের বিপিএলকে জাঁকজমক করেছে: আশরাফুল
কুয়েট ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
বিরলে বিরল প্রজাতির লক্ষীপেঁচা উদ্ধার
সাগর-রুনি হত্যা: সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউলকে ২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ
অবিশ্বাস্য নতুন চুক্তিতে প্রতি মিনিটে রোনালদোর আয় ৪৩ হাজার টাকা!
মতলবের মেঘনা -ধনাগোদা নদীতে বিশেষ কম্বিং অভিযানে জাগ উচ্ছেদ ও জাল জব্দ