‘শৃঙ্খলমুক্ত’ বিজয় দিবস আজ
১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
দেড় যুগ পর নতুনরূপে আবির্ভাব ঘটছে বিজয় দিবসের। এত দিন পর দেশের আমজনতা নতুনরূপে ভিন্ন আঙ্গিকে দিবসটি পালনের স্বাদ আস্বাদন করেন। আজ ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি স্বাধীন ভূখ-ের আত্মপ্রকাশ ঘটে এদিন। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশের মানুষ রাষ্ট্রীয়ভাবে বিজয় দিবস উৎযাপানে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি। এ দেশের মানুষের বিজয় দিবস ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। বিজয় দিবস মানেই পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে ছিল এক ব্যক্তির বন্দনা এবং ভারতীয় দাদাদের ঢাকায় এনে রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎসব করা। ফ্যাসিস্টদের ওই উৎসবে আওয়ামী লীগ, দিল্লির তাঁবেদার ছাড়া সাধারণ মানুষ দূরের কথা, মুক্তিযোদ্ধারাও আমন্ত্রণ পেতেন না। ফলে বিজয় দিবস কার্যত মাদার অব মাফিয়া হাসিনার শৃঙ্খলে নিয়ন্ত্রণ ছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতের নাচের পুতুল হাসিনা পালানোর পর বাংলাদেশের মানুষ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে। ফলে এবারের বিজয় দিবস দেশবাসীর কাছে নতুনভাবে এসেছে। মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম দেশে এবার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের ১৮ কোটি মানুষ বিজয় দিবস উৎযাপন করবে।
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার দাবিদার আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫ বছর ‘বিজয় দিবস’ ‘স্বাধীনতা দিবস’ ‘শহীদ দিবস’সহ গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো কুক্ষিগত করে রেখেছিল। প্রতিটি দিবসে আওয়ামী লীগ নেতা, মুজিব অনুসারী, দিল্লির তাঁবেদার, আওয়ামী লীগ অনুসারী কিছু যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, কিছু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতাদের বাইরে দেশের সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হতো না। এ সব দিবস মানেই আওয়ামী লীগের কাছে ছিল শেখ মুজিবের বন্দনা। মুজিবের বাইরে আওয়ামী লীগের জাতীয় চার নেতাও তেমন গুরুত্ব দেয়া হতো না। আর ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশের আলেম সমাজকে কখনোই আমন্ত্রণ জানানো হতো না; বরং তাদের বিরুদ্ধে ‘মৌলবাদী’ ‘সন্ত্রাসবাদী’ ‘জঙ্গি’ তকমা দেয়া হতো। ২০২১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আগে তো শত শত আলেমকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়েছিল। হাসিনা রেজিমে বিজয় দিবস পালনে রেওয়াজ হয়েছিল ভারতীয় কিছু ব্যক্তিকে ঢাকায় এনে সংবর্ধনা দেয়া, পুরস্কারের নামে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়া। রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খবর করে শেখ মুজিবের নামে নানান ‘বন্দনা মঞ্চ’ গড়ে তুলে উল্লাস করা। ফলে সাধারণ মানুষ বিজয় দিবসে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেতো না। এবার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ৫ আগস্ট দেশের পূর্ব দিগন্তে নতুন সূর্য উঠেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করবে।
দীর্ঘদিন পর দল-মত নির্বিশেষে বিন¤্র শ্রদ্ধায় আজ বিজয় দিবস পালন করবে দেশ-বিদেশের বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। সকাল থেকেই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ দেয়া শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশকে আরো উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মুক্ত পরিবেশে ভয়ভীতিহীন চিত্তে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয়ভাবে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মহান বিজয় দিবসের প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা করা হবে।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
বিদেশি কূটনীতিক এবং বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি-আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এ দিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
মাসব্যাপী ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।
এছাড়া, দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
বঙ্গভবনে অপরাহ্নে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারগুলোকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। এছাড়া, মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা (নারায়ণগঞ্জ) ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে এবং চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজসমূহ দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। এক শুভেচ্ছা বাণীতে সকলের সুখ-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সমগ্র জাতির অবদানের কথা আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ও দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের যথাযথ প্রতিদানের জন্য দোয়া করছি। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর করীব অনুরুপ অপর এক বাণীতে স্বাধীনাত যুদ্ধে বীর শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোনালাপ
অযোগ্য হবেন হাসিনা?
দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সচিব ইসমাইল হোসেন
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু
১১ ইউনিটে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা