বাতিলের পক্ষে নমনীয় হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
যারা দেশটাকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করে তারা দেশের শত্রু। এদের কোনো সহযোগিতা করা যাবে না। জালেমের ব্যাপারে নমনীয় হলে আল্লাহর কাছে জালেম হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকতে হবে। বাতিলের পক্ষে নমনীয় হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না। হকের ওপর প্রাধান্য দিতে হবে কোনো ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্ব মেনে নিতে হবে। আল্লাহ আমাদের দিলগুলোকে মিলিয়ে দিন। হক ও তাকওয়ার ওপর এক হয়ে গেলেই দিল মিলে যাবে। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক এসব কথা বলেন।
খতিব বলেন, আল্লাহ ছোট-বড় অনেক নিয়ামত দান করেছেন। আল্লাহর নিয়ামত গণনা করে শেষ করা যাবে না। শীত মৌসুমও একটি নিয়ামত। গরম কালও একটি নিয়ামত। খতিব বলেন, শীতকাল মুমিনের জন্য বসন্তকাল। শীতকালে দিন ছোট আর রাত বড়। দিনে রোজা রাখা আর রাতে তাহজ্জুত পড়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আসমান জমিনের মালিক একমাত্র আল্লাহ। শীতকালে রাতে তাহাজ্জুত পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব মুফতি মাওলানা মাহবুবুর রহমান জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জাহিলিয়াত থেকে মানবকূলের পরিত্রাণের জন্য প্রেরণ করলেন রাসূলে কারিম (সা.) কে। নাজিল করেছেন মহা ঐশীগ্রন্থ মহিমান্বিত পবিত্র আল-কুরআন। যার প্রতিটি লাইন, শব্দ ও অক্ষরের তাৎপর্য অপরিসীম। উম্মুল কুরআন তথা সূরা ফাতিহায় যেমনিভাবে আল্লাহর প্রশংসা রয়েছে, তেমনিভাবে মহান স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যম, একই সাথে এর মধ্যে রয়েছে পরিপূর্ণ শিফা।
খতিব হাদিসের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা সূরা ফাতিহা পড়ো। কোনো বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামিন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর রাহমানির রহিম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দিন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে, ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস্তাইন, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম... (শেষ পর্যন্ত)। আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায় (সহিহ মুসলিম-৩৯৫)। একটু ভেবে দেখুন তো কেন সূরা ফাতিহা ব্যতীত সালাত অসম্পূর্ণ থাকে? কেনই বা প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা বাধ্যতামূলক? রাসূল (সা.) বলেছেন সূরা ফাতিহা এমন একটি সূরা যার সমকক্ষ সূরা ইতঃপূর্বে কোন নবী-রাসূলে উপর নাজিল হয়নি। কোনো আসমানি গ্রন্থে এই সূরার ন্যায় গুরুত্ব বহণকারী সূরা লিপিবদ্ধ হয়নি। সূরা ফাতিহায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রশংসা ও তাঁর ক্ষমতা সম্বন্ধে বান্দাকে অবহিত করেন তিনি নিজেই। তাঁর পরিকল্পনা বাইরে কিছুই ঘটা সম্ভব নয়, কেননা তিনি বিচার দিবসের মালিক, তিনি আপনার আমার প্রতিটি কর্ম ও চিন্তা সম্বন্ধে জ্ঞাত। তিনি নিজের করুণা ও ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে বান্দাগণকে আস্বস্ত করলেন এবং নিরাশ হতে বারণ করলেন। ইবাদতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়ে একই সাথে তিনি বললেন প্রতিটি বান্দার আকাক্সক্ষা থাকবে যেন সে সরল পন্থার দিশা পায় এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। সবশেষে ভ্রষ্টতা ও ইবলিশের পদাঙ্ক থেকে শতর্ক করলেন। একজন মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য এর বাইরে আর কি প্রয়োজন থাকতে পারে?
খতিব বলেন, আমরা আল্লাহর নিকট চাইব এবং তিনি দেবেন, এটি তো আল্লাহরই ওয়াদা। প্রয়োজনসমূহ হাসিলের জন্য প্রথমতো খালেছ নিয়ত তথা নেক নিয়ত অতঃপর প্রচেষ্টা এবং সবশেষে ইবাদতের মাধ্যমে ধৈর্যÑ এই তিনের সমন্বয়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাগণকে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছান। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ি ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ সত্য গোপনকারীদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেন। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৫৯) কুরআনের অন্য আয়াতে সত্য গোপনকারীদেরকে অভিশপ্ত করে আল্লাহ তাআলা কঠোর ভাষায় আরো ঘোষণা করেন, যারা সত্য গোপন করে এবং তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা কেবল আগুন দিয়ে নিজেদের পেট পূর্ণ করে। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৭৪) হাদিসে পাকে এসেছে, নবীজি (সা.) সত্য গোপনকারীদের বিষয়ে কঠিন আজাবের কথা বর্ণনা করেছেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, যে সত্য গোপন করে; কিয়ামতের দিন সত্য গোপনকারীকে আগুনের লাগাম পরানো হবে (নাউজুবিল্লাহ)। ইরশাদ হয়েছেÑ হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা কাছের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। (সূরা নিসা, আয়াত-১৩৫) টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে উগ্র সাদপন্থীদের হাতে তাবলিগের সাথী ভাইদের ওপর সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে দুপক্ষের সংঘর্ষ হিসেবে উপস্থাপন করা ভুল ও বিভ্রান্তিকর। কিছু মিডিয়ায় এ ঘটনাকে দুপক্ষের সংঘর্ষ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই হামলায় তাবলিগের নিরীহ সাথী ভাইদের ওপর একতরফা আক্রমণ চালানো হয়। সুষ্ঠু ও ইনসাফভিত্তিক বিচারের স্বার্থে এ বিষয়ে মিডিয়ায় সঠিক তথ্য তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। টঙ্গী ইজতেমার ময়দানে তাহাজ্জুত নামাজরত, জিকিররত ও ঘুমন্ত তাবলিগের সাথী ভাইদের ওপর সাদপন্থীরা বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়, যাতে ঝরে যায় চারটি প্রাণ, আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। এই হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমনদের ইন্ধনে সংঘটিত হয়েছে। যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত এরা ইহুদিদের দোসর। হাদিসে বর্ণিত হয়েছেÑ মানুষের ক্রোধেও যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং মানুষকে তার উপর তুষ্ট রাখেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ক্রোধে মানুষের সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তাআলা তার উপর রাগান্বিত হন এবং মানুষকে তার উপর ক্রোধান্বিত করেন। (তিরমিজি, হাদিস-২৪১৯) আল্লাহ সূরা নিসার ৯৩ আয়াতে বলেনÑ যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে তার ঠিকানা জাহান্নাম সেখানে সে অনন্তকাল থাকবে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকি আর হত্যা করা কুফরি।
সাদপন্থীরা এ দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার দ্বারা দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। তাই আমরা এ দেশে তাদের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোরালো আহ্বান জানাই।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আশুলিয়ার বাইপাইলে মার্কেটে আগুন
ঢাবি সাদা দলে ভাঙন, পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা
রাইখালীতে পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা
বাঘায় রত্নগর্ভা হাসনা-হুদা দম্পতির ১২ সন্তান উচ্চ শিক্ষায় সফল
শহীদ জিয়ার মিঠাছড়া খাল খননে হাজারো কৃষকের ভাগ্য খুলেছিল ' - মীর হেলাল
ঝিনাইগাতীতে আইন শৃঙ্খলা কমিটিসহ ৪ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
গফরগাঁওয়ে ভিজিডির ৫১ বস্তা চুরি
গোলাপগঞ্জে মাদক সেবনের অপরাধে দুই জনকে জরিমানা ও কারাদণ্ড
ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন থেকে রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষা নেয়নি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ঢাকাকে উড়িয়ে আসর শুরু রংপুরের
নিজ জমিতে যাওয়া হলো না সিলেটে এক ব্যবসায়ীর : হামলা করলো যূবদলনামধারী ভূমিখেকো চক্র
প্রতারণার দায়ে অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে সমন জারি
রেকর্ড পুনরুদ্ধার করে শাহিদির ২৪৬, রেকর্ড গড়ল আফগানিস্তানও
‘ইসলাম প্রচার প্রসারে সউদী সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে’
টেলিটকের দুটি স্পেশাল ডাটা প্যাকেজের উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে সরকার: প্রেস সচিব
এসিআই লিমিটেড ২০ শতাংশ নগদ এবং ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে
এবার ছাত্রদল সভাপতির পাশে দাঁড়ালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
কোয়ালিফাইয়ারের বাধা টপকাতে চায় রংপুর
খুশদিলের শেষের ঝড়ে রংপুরের বড় সংগ্রহ