খামারবাড়ীতে জাতীয় সংলাপ

জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫ এএম | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫ এএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় আদৌ বিচার হবে কি না সেই প্রশ্ন তোলেছেন নিহত ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, একটি হত্যাকা-ে একজন করে পুলিশ জড়িত থাকলে ১ হাজার পুলিশ গ্রেফতার হতো, দুজন করে জড়িত থাকলে ২ হাজার পুলিশ গ্রেফতার হতো। কিন্তু গ্রেফতার হয়েছে ২৩ জন পুলিশ। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের কতজন গ্রেফতার হয়েছে? তাহলে আমরা বিশ্বাস করব কীভাবে বিচার হবে? আপনারা সংস্কারের কথা বলেন, কিন্তু বিচারের কথা জোর দিয়ে বলেন না।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সংলাপ অধিবেশন ১: ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঞ্চে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নিহতদের স্বজন ও আহতদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

জাতীয় সংলাপের শুরুতে কথা বলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবু বকর, নিহত ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল ইসলাম, উত্তরা চব্বিশের সংগঠক মনিশা মাফরুহা, নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান।

এসময় ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল আলম অভিযোগ করেন, যাত্রাবাড়ীতে গণহত্যায় ডিএমপি কমিশনারের (নাম বলেননি) ভাগনে এডিসি জড়িত। তাকে গ্রেফতারের কথা বললেও করা হয়নি।
নিহত শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বক্তৃতায় ছেলের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ছেলের জানাজা এলাকায় দিতে দেওয়া হয়নি। দুটি মসজিদে লাশ গোসল করাতে দেওয়া হয়নি। আবুল হাসান বলেন, এত রক্ত নির্বাচনের জন্য দিইনি। তিনি নিহতদের পরিবার ও আহতদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেন।

আবু বকর বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চার মাসের মধ্যেই সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেন। এটাকে জাতির জন্য ব্যর্থতা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের জন্য অপমানজনক বলে মন্তব্য করেন আবু বকর। এসময় নিহতদের পরিবার ও আহতদের সহায়তার বিষয়টি দ্রুত করার দাবি জানান মনিশা মাফরুহা। গোলাম রহমান তার ছেলের নামে একটি রাস্তা ও মেট্রোরেল স্টেশনের নামকরণের দাবি জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী, গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) নুরুল হক নূর প্রমুখ।

এদিকে একই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণের বিষয়ে একটা জাতীয় ঐক্য দেখা গেছে। এখন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা কী হবে, সেই ঐক্য দরকার। গত ১৫-১৬ বছরে ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও জনগণকে ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কারের পথে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ, আপনি যত ভালো সংবিধান তৈরি করেন না কেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে সেই সংবিধান আবারও ভাঙা হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের জোর দিতে হবে।
বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনের দুর্বলতা হচ্ছে রাজনীতি। এ দেশে অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হয়েছে, কিন্তু রাজনীতিতে সেভাবে এগোতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা–বিশ্বাস নেই। তারা যদি ভবিষ্যতে নিজেদের পুনর্গঠন করে সামনে আসে, তাহলে হয়তো মানুষ ভবিষ্যতে ভেবে দেখবে।

অর্থনীতিবিদ ড. মুশতাক হুসাইন খান বলেন, ‘সংস্কারের মাধ্যমে শুধু আইনকানুন পরিবর্তন করলে হবে না। বাংলাদেশে একটি গোপন ক্ষমতা কাঠামো গড়ে উঠেছে। এ গোপন ক্ষমতার বিন্যাস ভাঙতে হবে। কারণ, আইন করা সহজ। কিন্তু ক্ষমতার কাঠামোর ভাঙা না হলে ওই আইন আবারও ভাঙা হবে। কাজটা এখনই করতে হবে। তা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে।’ তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘ক্ষমতার গোপন কাঠামো ভাঙতে না পারলে আপনারা ভালো কিছু চাইলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ, আপনার দলেরই এমপি, নেতারা তা ঠেকিয়ে দেবে। মুশতাক হুসাইন খুনিদের বিচারের পাশাপাশি বড় বড় চোরের বিচার করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সবাইকে একসঙ্গে পারা যাবে না। একজন, দুজনকে ধরতে হবে। মানুষ তখন দেখতে পারবে যে চুরি করে পার পাওয়া যাচ্ছে না।

ধারণাপত্র পাঠে করে সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও মতাদর্শের পার্থক্যের কারণে অনৈক্যের সুর দেখা যাচ্ছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে অনৈক্য জাতিকে উদ্বিগ্ন করে। এ জন্য জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে। অন্যথায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও নির্বাচন অর্জন করা যাবে না।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার সময় বাড়ছে
সচিবালয় ছিল দালালদের হাটবাজার: ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি
টোল প্লাজায় ৭ জনকে চাকায় পিষে হত্যা: শোক ও ক্ষোভ নেটিজেনদের
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ দিতে আসার খবর ভিত্তিহীন : আইএসপিআর
সংস্কারের কারণে অনির্বাচিত সরকারের হাতে দিনের পর দিন দেশ চালাতে দিতে পারি না
আরও

আরও পড়ুন

মানুষ সুন্দর ও কল্যাণের অপেক্ষায় আছে : বিএনপি নেতা হাজী ইয়াছিন

মানুষ সুন্দর ও কল্যাণের অপেক্ষায় আছে : বিএনপি নেতা হাজী ইয়াছিন

সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার সময় বাড়ছে

সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার সময় বাড়ছে

সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ দেশে ফিরেছেন

সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ দেশে ফিরেছেন

ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখার উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখার উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

আগস্ট বিপ্লবের অর্জন যেকোন মূল্যে ধরে রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: নিয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

আগস্ট বিপ্লবের অর্জন যেকোন মূল্যে ধরে রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: নিয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর হাইস্কুলের প্লাটিনাম জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর হাইস্কুলের প্লাটিনাম জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

বিশ্বে প্রতি ৬ জন শিশুর মধ্যে ১ জন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বাস করে : ইউনিসেফ

বিশ্বে প্রতি ৬ জন শিশুর মধ্যে ১ জন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বাস করে : ইউনিসেফ

বাউফলে বিএনপির ৫ নেতাকর্মী আহত

বাউফলে বিএনপির ৫ নেতাকর্মী আহত

২০২৫ সালে আসছে কোক স্টুডিওর নতুন গান

২০২৫ সালে আসছে কোক স্টুডিওর নতুন গান

মার্কিন ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার কিংবদন্তি গ্রেগ গাম্বেলের বিদায়

মার্কিন ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার কিংবদন্তি গ্রেগ গাম্বেলের বিদায়

সচিবালয় ছিল দালালদের হাটবাজার: ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি

সচিবালয় ছিল দালালদের হাটবাজার: ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি

সচিবালয়ে নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

সচিবালয়ে নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

দৌলতপুরে বিএনপি’র কর্মীসভায় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

দৌলতপুরে বিএনপি’র কর্মীসভায় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ইউপি সদস্যের মুখে বিষ ঢেলে হত্যা!

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ইউপি সদস্যের মুখে বিষ ঢেলে হত্যা!

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সজলকে ছাত্র জনতার ডিম নিক্ষেপ, পাঠানো হলো কারাগারে

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সজলকে ছাত্র জনতার ডিম নিক্ষেপ, পাঠানো হলো কারাগারে

গাবতলীতে বালুবাহী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক মহিলা নিহত

গাবতলীতে বালুবাহী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক মহিলা নিহত

পঞ্চগড়ে শিক্ষার্থী নিয়ে শিশুস্বর্গের শীত আনন্দ উৎসব

পঞ্চগড়ে শিক্ষার্থী নিয়ে শিশুস্বর্গের শীত আনন্দ উৎসব

টোল প্লাজায় ৭ জনকে চাকায় পিষে হত্যা: শোক ও ক্ষোভ নেটিজেনদের

টোল প্লাজায় ৭ জনকে চাকায় পিষে হত্যা: শোক ও ক্ষোভ নেটিজেনদের

ইয়েমেন বিমানবন্দরে হামলায় আহত জাতিসংঘ কর্মী উদ্ধার: ডব্লিউএইচও

ইয়েমেন বিমানবন্দরে হামলায় আহত জাতিসংঘ কর্মী উদ্ধার: ডব্লিউএইচও

গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপি'র একাধিক কার্যালয় নিয়ে যা বললেন নেতৃবৃন্দ

গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপি'র একাধিক কার্যালয় নিয়ে যা বললেন নেতৃবৃন্দ