ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
চলছে আমনের ভরা মৌসুম। বিদেশ থেকেও চাল আমদানি উন্মুক্ত রয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্বাভাবিক আছে। ভারত থেকে এরই মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে ৭৩ হাজার টন চাল এসেছে। আরো আসছে। সব মিলিয়ে বলা যায় চালের দৃশত কোনো সংকট নেই। তারপরও বাজারে বাড়ছে চালের দাম। দেশের অস্থিতিশীলতার সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু মিলার ‘দাম আরো বাড়বে’ এমন গুজব ছড়িয়ে দাম বাড়াচ্ছে। আসলে চালের বাজার এখনো খুচরা বিক্রেতা থেকে, মিলার, ফরিয়া, কৃষক পর্যন্ত সেই পুরানো সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। এ চক্রের ‘চালবাজিতে’ লাগামহীন চালের বাজার। কৃষক থেকে শুরু করে মিলার পর্যায়ে ‘ভবিষ্যতে চালের দাম আরো চড়া হবে’Ñ এমন তথ্য ছড়িয়েছে একটি মহল। ফলে বেড়েছে ধান-চালের মজুদপ্রবণতা। অল্প সরবরাহ রেখে, দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটছে সংশ্লিষ্টরা। এই প্রবণতা দেশে দীর্ঘদিন চলে আসছে। এসব চক্রের কারসাজিতেই বাড়ছে দাম। অথচ সরকার এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। চালের দাম লাগামহীন বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা।
ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমনের নতুন চাল বাজারে এলেও গত দুই সপ্তাহে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরায় প্রতি কেজি ৬২ টাকার নিচে কোনো চাল মিলছে না। এ দামে যেসব চাল মিলছে, সেগুলো মোটা স্বর্ণা ও পাইজাম। এ দুই জাতের চাল চলতি আমন মৌসুমে বাজারে এসেছে। চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মালিবাগে কুমিল্লা রাইস এজেন্সির ফরিদ হোসেন বলেন, মিল থেকে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই সরবরাহ ঘাটতির কারণে চালের দাম বেড়েছে। তিনি জানান, গত ১০-১২ দিনে মানভেদে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম দেড়শ থেকে তিনশো টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাত্র আমন মৌসুমের চাল বাজারে আসছে। প্রকৃতপক্ষে ধান-চালের কোনো সংকট নেই। তারপরেও সরবরাহ কমিয়ে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা ধান-চাল মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতিদিনই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এদিকে সবশেষ দু’দিনে পাইকারিতে চালের দাম আরো বেড়েছে। অর্থাৎ, ঢাকায় চালের দাম আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়ায় তারা চালের দাম বাড়িয়েছেন। নওগাঁ চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ চকদার বলেন, মোকামে ধান নেই। শুরু থেকে এবার ধানের দাম বেশি। গত এক-দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ধানের দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিক কারণেই চালের দাম বাড়াতে হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে চালের বড় মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর, নওগাঁ ও দিনাজপুরে প্রতি মণ স্বর্ণা ধান এক হাজার ৪২০ থেকে এক হাজার ৪৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব এলাকায় প্রতি মণ ধানের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ৫০ টাকা বেড়েছে। যেখানে প্রতি বস্তা চালের দাম একই সময়ে বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ওইসব এলাকায় মোটা জাতের প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। এদিকে আমনের এই ভরা মৌসুমেও বাজারে ধানের সরবরাহ অনেক কম। ব্যবসায়ীরা জানান, নওগাঁর অন্যতম বড় ধানের মোকাম পতœীতলা উপজেলার মধইল বাজার। ওই বাজারে সপ্তাহের প্রতিদিন ধান কেনা-বেচা হয়। ৫০০ মণের ৬০ থেকে ৭০টি ট্রাকে প্রতিদিন আসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মণ ধান। সেখানে এখন আমদানি হচ্ছে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার মণ ধান। বাজারে ধানের আমদানি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। বেশ কয়েকজন ধানের আড়তদার জানান, চাল কলের মালিক ধান কেনার জন্য এসে ফিরে যাচ্ছে, কারণ ধানের সরবরাহ কম। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় ধানের দাম বেড়ে গেছে।
প্রকৃতপক্ষে চালের বাজার এখনো সেই পুরানো সিন্ডিকেটের হাতেই জিম্মি রয়েছে। তারা একে অন্যকে দোষারোপ করে চালের বাজারকে অস্থির করে নিজেদের লাভের ষোল আনা বুঝে নিচ্ছে। এবার গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক প্রচার রয়েছে যে, ভারত ধান-চাল দেবে না, বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য কৃষক, ফড়িয়া ব্যবসায়ীও ধান কিনে মজুদ করছেন। আবার দাম বাড়বে এমন গুজব কিছু ব্যবসায়ীও ছড়াচ্ছে, যাতে তারা ভবিষ্যতে ভালো দামে বিক্রি করতে পারেন।
বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাওসার আলম খান বলেন, সরকার সেভাবে চাল আমদানি করতে পারছে না। বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি উন্মুক্ত থাকলেও বিশ্ববাজারে দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা চাল আনছেন না। এর মধ্যে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, সে তুলনায় এতদিন চালের দাম কম ছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবে চালের দাম বাড়বে এটা বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ধরে রেখেছেন। এছাড়া মিল মালিকদের মধ্যে অনেক পতিত সরকারের মদদপুষ্ট রয়েছেন, তারাও বাজার বাড়াতে চেষ্টা করছেন বলেও জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। এসব বিষয়ে খাদ্যসচিব মাসুদুল হাসান বলেন, সংকটের আতঙ্ক তৈরি করে বাজার বাড়ানোর প্রবণতা নতুন নয়। তবে এটি অনৈতিক। কেন এটা করা হচ্ছে সেটা আমার জানা নেই। তবে ভারতের সঙ্গে চাল আমদানি বিষয়ে কোনো টানাপোড়েন নেই। যারা এ বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য করছে। সরকার এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ম্যাচের আগে হঠাৎ বরখাস্ত এভারটন কোচ
চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের
পারমাণবিক বোমা সজ্জিত নতুন যুদ্ধজাহাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন কিম
ধর্ষণের প্রতিশোধে বাবাকে হত্যা, গ্রেফতার ২ কিশোরী
আমাকে ধর্ষণ করার ভিডিও দেখে স্বামী
হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই
ফিলিপাইনে ৪০০ বিদেশি অনলাইন প্রতারক গ্রেফতার
ইসরাইলি ৪শ’ সেনা নিহত গাজায় স্থল অভিযানে
কুষ্টিয়ায় কৃষি যন্ত্র বিতরণে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক
জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করতে হবে
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ
ভোলায় শীতার্তদের মাঝে জেলা প্রশাসকের কম্বল বিতরণ
গাজীপুরে বিএনপি নেতার উপর হামলা
চাঁদপুরে হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম গ্রেপ্তার
বিভিন্ন বিভাগ ছোট হচ্ছে পাকিস্তানে
আশুলিয়ায় চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে দিবালোকে দোকানীকে গুলি
গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করল জার্মানি-ফ্রান্স
৪ ভূখ-কে অন্তর্ভুক্ত করে ইসরাইলি মানচিত্র প্রকাশ
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
চলতি বছর বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমার পূর্বাভাস