ধরাছোঁয়ার বাইরে মদদদাতারা
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী চট্টগ্রামের আইনজীবী ও সহকারী পিপি সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় কিলিং স্কোয়াড বা খুনি চক্রের কয়েকজন সদস্য গ্রেফতার হলেও নেপথ্যে মদদদাতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। ফলে আলোচিত এই হত্যাকা-ের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনও থমকে আছে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নেতাদের অভিযোগ আধিপত্যবাদি ভারতের মদদপুষ্ট পতিত স্বৈরাচারি সরকারের কতিপয় দোসর এই হত্যাকা-ের মদদদাতা। তাদের লক্ষ্য ছিল দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে ভারতীয় আগ্রাসনের পথ তৈরি করা।
তবে সচেতন আইনজীবীসহ দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার দূরদর্শিতার কারণে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। তবে জাতীয় স্বার্থে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পেছনে কারা তাদের চিহ্নিত করা জরুরি। তারা মনে করেন হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত খুনিদের পাশাপাশি নেপথ্যের চক্রান্তকারীদেরও চিহ্নিত এবং পাকড়াও করতে হবে। আর তা না হলে এই খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে না।
এই খুনের ঘটনায় জড়িত ১১ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে খুনি চক্রের দুইজন চন্দন দাস ও রিপন দাস খুনের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা আলিফ খুনের লোমহর্ষক বর্ণনার পাশাপাশি এই হত্যাকা-ে জড়িতদের নামও প্রকাশ করেছেন। কাদের নির্দেশে এই খুন সে ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলিফ হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন ২০-২৫ জন। তাদের মধ্যে আলিফের ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। এরপর লম্বা কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। অন্য আসামিরা বাটাম দিয়ে পেটান। তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এরপর তার লাশের উপর নৃত্য করেন খুনিরা। খুনিরা ছিলেন অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত। তাদের হাতে ছিল কিরিচ, বটি, খঞ্জর, ত্রি-শূলসহ হরেক দেশি অস্ত্র। গ্রেফতারের পর প্রধান আসামি চন্দন দাস এবং রিপন দাস আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কাদের নির্দেশে তারা এই হত্যাকা- এবং আদালত অঙ্গনে নজিরবিহীন তা-ব সৃষ্টি করেছিলেন তাদের বিষয়েও একটি ধারণা দিয়েছেন।
আসামীদের জবানবন্দিতে দেয়া বর্ণনার পাশাপাশি ওই এলাকার ভিডিও ফুটেজেও অনেকের ভূমিকা সম্পর্কে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, আদালত এলাকায় আইনজীবী আলিফকে প্রকাশ্যে হত্যাসহ নৈরাজ্য সৃষ্টির পেছনে পতিত সরকারের বেশ কয়েকজন দোসরের মদত দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা পলাতক অবস্থা থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে পুরো ঘটনা তদারক করার পাশাপাশি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এমন একাধিক ওয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার কিছু কিছু ঘটনার পর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল, তার ক্যাডার নুরুল আজিম রনিসহ বেশ কয়েকজন ক্যাডার পুরো ঘটনায় জড়িত। তারা দূর থেকে ডিজিটাল ডিভাইসে নৈরাজ্য সৃষ্টির মদত দিয়েছেন। আলিফ হত্যাসহ কোর্টহিল মসজিদ, আদালত ভবন, আইনজীবীদের চেম্বার, যানবাহনে হামলার নির্দেশনা দিয়েছেন। ইন্ধনদাতা হিসাবে তাদের মামলায় আসামি করা জরুরি বলেন বলে মনে করেন জেলা আইনীজীবী সমিতির নেতারা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন পুলিশের (সিএমপি) সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) মাহফুজুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আলিফ হত্যা মামলার তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। এরমধ্যে হত্যাকা-ে জড়িত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের নামও প্রকাশ করেছেন। তারা এ ঘটনার মদদদাতাদের বিষয়েও কিছু তথ্য দিয়েছেন। আরো বিভিন্ন মাধ্যমে মদদদাতাদের বিষয়ে কিছু তথ্য এসেছে। আমরা এসব তথ্য বিশ্লেষণ করছি। আশা করি আলিফ হত্যার নেপথ্যে যারা তাদেরও চিহ্নিত করা যাবে। তদন্তে আলিফ হত্যার কারণ বের করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে আলিফ হত্যা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আইও। রোববার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি বলছে, এই হত্যা মামলা ঘিরে গ্রেফতার বাণিজ্যের স্বার্থ আর সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে ফায়দা লোটার গোষ্ঠীস্বার্থ সমান্তরালভাবে সচেষ্ট। এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মামলার আইও বলেন, সেখানে কোন ধরনের হয়রানি বা গ্রেফতার বাণিজ্য নেই। মামলা তদন্তও সঠিকভাবে চলছে। তিনি বলেন, প্রফেসর আনু মুহাম্মদসহ ওই কমিটির সদস্যরা তার সাথে কোনো কথা বলেনি। আইওর সাথে কথা না বলে একতরফা দোষারোপ দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ইসকন থেকে বহিস্কৃত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে উগ্রবাদী ইসকনের কতিপয় সদস্য। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো পাঁচটি মামলা হয়। ৬ মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হন ৪০ জন। তাদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। আদালত এলাকায় আইনজীবীকে হত্যা এবং নৈরাজ্যের ঘটনা তদন্তে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সাবেক মহানগর পিপি আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে ওই কমিটি থেকে সবাই পদত্যাগ করেছেন। তারা বলছেন, এই নৈরাজ্যের পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির মদদ রয়েছে। ফলে প্রকৃত কারণ উদঘাটনে বিচার বিভাগীয় তদন্তের কোনো বিকল্প নেই। তবে সরকারি তরফে এখনও এই ধরনের কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জবিতে রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় প্রতিবাদ
নীলফামারীতে দারোয়ানী সুতাকল পুনরায় চালুর দাবি
দৈনিক ইনকিলাবে একধিকবার সংবাদ প্রকাশের পর দীর্ঘ ৮ মাস কাজ বন্ধ থাকার পর ফের কাজ শুরু
রাজধানীর প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের কাজ পুরোদমে চলমান
রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি তপন মল্লিক গ্রেপ্তার
প্রকাশ্যে আগুন জ্বালানোয় নিষেধাজ্ঞা অস্ট্রেলিয়ায়
আটঘরিয়ায় ৩৩৪৮ হেক্টর জমিতে বিনা চাষে সরিষা আবাদ,বাম্পার ফলন হওয়ায় আশা কৃষকের
দেবিদ্বারে বালুবোঝাই ট্রাক্টর উল্টে চালক নিহত
হঠাৎ কেন পদত্যাগ করতে চলেছেন ট্রুডো?
বোমা বিস্ফোরণে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৯ সদস্য নিহত
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নয় গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ
নিকলীতে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
পলকের উদ্দেশে বিচারক : কেন ডিজিটাল কোর্ট করে দেননি
নীলফামারী জেলা কারাগারে হাজতির মৃত্যু
কেরানীগঞ্জের শাক্তা থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
দোয়ারাবাজারে বিএনপি'র আয়োজনে কর্মীসভা
জনপ্রিয় শো "ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ" এর বেভারেজ পার্টনার হিসেবে সানকুইকের আত্মপ্রকাশ
কিশোরগঞ্জে ওয়াজ মাহফিলে গুলি, আহত ২
সউদী আরবে চালু হল বিশ্বের দীর্ঘতম চালকবিহীন ট্রেন
মিয়ানমার সীমান্তে গোলার শব্দ, ফের রোহিঙ্গা ঢলের শঙ্কা