গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকিতে পড়বে
০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম
অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়াটি মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলবে। অধ্যাদেশটির ভাষা অস্পষ্ট; এতে সরকারকে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে; যা রাজনৈতিক সরকার ও ক্ষমতাসীনদের অপব্যবহারের সুযোগ করে দেবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের অধ্যাদেশ হতাশাজনক। গতকাল শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ভয়েস ফর রিফর্ম নামের নাগরিক প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ: রাষ্ট্রীয় নিবর্তনব্যবস্থা বহাল ও গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি অবজ্ঞা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
জাতিসংঘের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে তিনি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠির সঙ্গে এই অধ্যাদেশের খসড়াটি মিলিয়ে দেখা যায়, একটু অদলবদল করে সেটা এই সরকারকে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। আন্তর্জাতিক আইনে সবার ওপরে থাকে মানবাধিকার। আগের সরকার এবং এই সরকারও মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা করছে না, তারা নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এ দুটি বিষয় একে অপরের পরিপূরক। আগের সরকারকে লেখা চিঠিতে তিনি যেসব সমস্যার কথা উল্লেখ করেছিলেন, সেটা এবারও প্রযোজ্য উল্লেখ করে আইরিন খান বলেন, এখানে ভাষা অস্পষ্ট। এতে ঝুঁকি থাকে। অস্পষ্ট ভাষা যেখানে থাকে, সেখানে সরকারের ক্ষমতাসীনেরা এর অপব্যবহার করে। ভাষাকে শক্ত করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ২৫ ও ২৬ দুটি ধারাতেই সমস্যা রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা ও এই অধ্যাদেশ পাশাপাশি রেখে দেখা যাচ্ছে, সরকারের হাতে একই রকমভাবে ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, অপতথ্য ও ভুল তথ্যের বিষয়গুলো এই অধ্যাদেশে আসেনি। এগুলো আসা উচিত। এ ছাড়া মানহানি কেন ফৌজদারি আইনে থাকবে, সে প্রশ্নও তুলে বলেন, এতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অনেক হুমকিতে পড়বে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিষ্টার সারা হোসেন বলেন, আইনটি প্রয়োজন। কিন্তু এই আইনের যে বিষয়গুলো নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে, তার প্রক্রিয়া ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে শুরু হয়েছে আইসিটি আইনের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ সরকার তা রেখে দেয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারও তা রেখে দেবে, সে আশা ছিল না। তার প্রশ্ন, রাজনৈতিক সরকারের সময়ে যেসব হয়রানিমূলক আইন হয়েছে, সেটা কেন আবার থাকবে। অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে সব পক্ষের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হলো কি না, সে প্রশ্ন থেকে যায়। কাদের সঙ্গে আলোচনা হলো, কারা কী সুপারিশ দিল, সেটা সবাইকে জানানো উচিত।
ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক এবং আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম বলেন, আইন প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছভাবে আলোচনা জরুরি। জনগণের স্বার্থে যদি আইন করা হয়, তবে জনস্বার্থকে আমলে নিতে হবে। এই সরকারের কাছে সবাই ভিন্ন কিছু চায়। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এই জায়গায় এসেছে সবাই। কিন্তু যা কিছু বলা হবে তা হজম করা হবে, সেটা যেন ভাবা না হয়।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নিরাপত্তা আইনের কাঠামোর ওপরই সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশটি হয়েছে। এখানে ভাষাগত কিছু পরিবর্তন আছে। কিন্তু আগের মতোই সাধারণ নাগরিক, বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণি বিশেষ করে সাংবাদিকদের একধরনের উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে। অধ্যাদেশের সংজ্ঞাগুলো অগোছালো এবং সাইবার বুলিংয়ের ব্যাখ্যা নেই; বরং নানা শব্দের মধ্য দিয়ে মানহানিকে রাখা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণের চিন্তা থেকে অধ্যাদেশটি হয়েছে। তিনি সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিল গঠনের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, শেখ হাসিনার শাসনকালে খসড়ার কোন ভার্সনটা (সংস্করণ) আইন হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে থাকতে হতো। এবারও খসড়াটি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশিদ দিয়া বলেন, কিন্তু নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে। নারী ও শিশুদের অজুহাত দিয়ে মতপ্রকাশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। অধ্যাদেশটি এখন যেভাবে আছে, সেভাবে রাজনৈতিক সরকারের হাতে গেলে আইনের অপব্যবহার হবে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, সাংবাদিক ও ই-আরকি সম্পাদক সিমু নাসের, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ প্রমুখ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া
রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন
ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি
আন্তর্জাতিক আইকিউ টেস্টে দ্বিতীয় ইরান
গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন
লেনদেন ও সূচকের উত্থান পুঁজিবাজারে চাঙাভাব
খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ
পাবনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কাঙ্গাল বাবু গ্রেপ্তার
১৫ হাজার পিচ ইয়াবার মামলায় প্রবাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান
বৃদ্ধাশ্রমের বাবা মায়ের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে এবং থাকবে
তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিন প্রশ্নবিদ্ধ এনামুল
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীনের সহযোগিতা চান পরিবেশ উপদেষ্টা
গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ
সোনারগাঁওয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ
র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি শেকৃবি ভিসির
অংশীজনদের সঙ্গে আজ বসছেন অর্থ উপদেষ্টা
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওর নাম্বার ক্লোন করে শিক্ষকের কাছে টাকা দাবি
সমস্যাগ্রস্ত ৬ ব্যাংকের নিরীক্ষায় ২ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত