ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৫ এএম | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৫ এএম
পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে করা সামরিক, বেসামরিকসহ সব ধরণের চুক্তি জনগণের কাছে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আনু মুহাম্মদ। একই সঙ্গে চুক্তিগুলোর মধ্যে যেগুলো জনস্বার্থবিরোধী, সেগুলো বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকারের বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাই যে, চুক্তি বাতিল করা যাবে না। পুরনো চুক্তি, প্রকল্প থাকবে কিন্তু আমরা একটি নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করব, তা হতে পারে না। দেশব্যাপী অধিকাংশ মানুষের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে পূর্ববর্তী সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের দায় বাংলাদেশের জনগণ নিতে বাধ্য না। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সর্বজনকথার আয়োজনে ‘বাংলাদেশে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্য: স্বরূপ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে একের পর এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল, এর প্রধান কারণ ছিল শেখ হাসিনার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা। সেই কারণে তার নির্ভরশীলতা ছিল ভারতের ওপর। ভারত যা চেয়েছে তাই সে দিয়ে গেছে। তার প্রতিদান হিসেবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিয়েছে ভারত। পানি নিয়ে যে সমস্যা, এটা বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন। সেই অস্তিত্বহীনতার শিকার হচ্ছে ভারতের কারণে। যে উন্নয়ন মডেল নিয়ে ভারত এই কাজগুলো করছে, বাঁধ নির্মাণ করছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্তিত্বের জায়গা হচ্ছে নদী।
তিনি বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নৈতিকভাবে শক্ত পথে দাঁড়ানোটা, আমরা যে সরকারই আসুক, সে সরকারের সময় এই উন্নয়ন মডেলের কাজগুলো দীর্ঘভাবে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আদায় করে নিতে হবে।
সীমান্ত হত্যার কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রফেসর বলেন, আগ্রাসনের প্রতিফলন হিসেবে বাংলাদেশ ও সীমান্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। যে গণঅভ্যুত্থানের সরকারের সময় আমরা দেখলাম সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। এখন সীমান্তে একটা উত্তেজনা পূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা চলছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ভারত প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আছে। একটা বৃহৎ রাষ্ট্রের পাশে একটা রাষ্ট্র, যে রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, বিভিন্ন সময়ে তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে ভারত রাষ্ট্র। এইটাই মূল সমস্যা। এই আধিপত্য থেকে বের হতে হলে আধিপতের সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো জানতে হবে এবং জনমত তৈরি করতে হবে।
ট্রানজিট চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারত যদি ট্রানজিট ব্যবহার করে তাহলে ভারতের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশের ট্রানজিট ব্যবহার করতে পারতে হবে। কোনো অসম চুক্তি বাংলাদেশ চায় না। ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বে যদি আধিপত্যের সুনির্দিষ্ট বিষয়কে পাশ কাটিয়ে অন্যদিকে মনোযোগ সরিয়ে দেবার প্রবণতা থাকে। ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্য হিন্দু-মুসলমান বিষয় না। পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে সংহতি স্থাপনের মাধ্যমেই এই অঞ্চলে ভারতের আধিপত্যকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বাংলাদেশে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা বলেন, যে সমঝোতার মধ্য দিয়ে ভারত রাষ্ট্র এবং ভারতে কতিপয় ব্যক্তির পুঁজির স্বার্থ পূরণ হচ্ছে- সেসব চুক্তি ও সমঝোতা বাতিল করা দরকার। ট্রানজিট চুক্তি, রামপাল চুক্তি, বিদ্যুৎ চুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তি পুনর্বিবেচনা এবং সীমান্তে হত্যা নিয়ে বহুপাক্ষীয় ফোরামে যাবার প্রস্তাব দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন- বহরম্পুর-পাবনা সঞ্চালন লাইন প্রকল্প, সূর্যমনি- কুমিল্লা সঞ্চাল লাইন, আদানির ঝাড়খ-ের গোড্ডা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রিলায়েন্স এলএনজি-ভিত্তিক মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ও উৎপাদন এবং এই প্রকল্পগুলোর জাতীয় স্বার্থের বিরোধগুলো তুলে ধরেন।
সেইসঙ্গে জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন- ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিশোধিত তেল আমদানি, এলএনজি আমদানির আর্থিক লাভ-ক্ষতি এবং এগুলোর কৌশলগত ঝুঁকি আলোচনা করে সব প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর তানজিমউদ্দীন খান বলেন, ভারতের সব চেয়ে বড় সংবেদনশীলতার জায়গা তার সেভেন সিস্টার। যার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, তিস্তাচুক্তির ক্ষেত্রে বারবার রাজ্য বনাম কেন্দ্রের যে ঠেলাঠেলি তা অনেকটাই রাজনৈতিক। তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। তাই তিস্তাচুক্তি করার সব এখতিয়ার আছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই তিনি দ্রুততম সময়ে তিস্তাচুক্তি সম্পাদন করার দাবি জানান। তিনি ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি জনসমক্ষে উন্মোচনের দাবি করেন। সভা সঞ্চালনা করেন গবেষক মাহা মির্জা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মৌলভীবাজারে ডিবির অভিযানে ১০ হাজার কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ, আটক ২
বৈষম্যবিরোধীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মারামারি, তরুণীসহ আহত ৭
সবজি দেখে লিখলো খাতায়
আবারও শীতের কবলে সৈয়দপুর
লাকসাম আল-আমিন ইনস্টিটিউটে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা
ব্রিকসে যোগদানের আমন্ত্রণ পর্যালোচনা করছে সউদী আরব
বেক্সিমকোর শ্রমিকদের গণসমাবেশ
সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৬ নেতা-কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার
তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের মতবিনিময়
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশনের নির্বাচন সম্পন্ন
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনকে বহিষ্কারের দাবিতে মহিলা দলের ঝাড়ু মিছিল
পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ট্রাম্পের
সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপকগণকে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের শুভেচ্ছা
সোনারগাঁওয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক
আবাহনীর ৬ মিনিটের ঝড়ে এলোমেলো ফকিরাপুল
পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চান ট্রাম্প
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য চায় জামায়াতের আমির ও চরমোনাই পীর
শপথ নিয়েই যেসব নির্বাহী আদেশ সই করলেন ট্রাম্প
বাগবাড়ীতে ১ হাজার পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ
ইলন মাস্কের ‘নাৎসি’ অঙ্গভঙ্গি নিয়ে বিতর্ক